Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

পরিশোধন না করেই নোংরা পানি বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ০৮:২০ পিএম


পরিশোধন না করেই নোংরা পানি বিক্রি

দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎপাদনের সক্ষমতা নেই। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদনের যন্ত্রপাতি থাকলেও তারা পানি যথাযথভাবে পরিশোধন না করেই নোংরা ও নন-ফুড গ্রেড জারে ভর্তি করে ড্রিংকিং ওয়াটার হিসেবে বিক্রি বা বিতরণ করছে। এ জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মামলা করা হয়েছে এবং উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মো. আবদুল হালিম।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অষ্টম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।

এর আগে সংসদীয় কমিটি মিনারেল ওয়াটার উৎপাদনকারী কারখানাগুলো সঠিকভাবে বিশুদ্ধ পানি বোতলজাত না করলে তাদের কারখানা বন্ধ করার সুপারিশ করে। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে।

এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন চায় সংসদীয় কমিটি। এর প্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব বর্তমানে অন্যত্র বদলি মো. আবদুল হালিম জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কর্তৃক সার্ভিল্যান্স টিম গঠনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোট ৬৩টি ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনকারী কারখানা পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের বিশুদ্ধ ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। অবশিষ্ট ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিশুদ্ধ ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনের সক্ষমতা নেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের যন্ত্রপাতি থাকলেও তারা পানি যথাযথভাবে পরিশোধন না করেই নোংরা ও নন-ফুড গ্রেড জারে ভর্তি করে ড্রিংকিং ওয়াটার হিসেবে বিক্রি/বিতরণ করছে। এ জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মামলা করা হয়েছে এবং উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সচিব জানান, এর মধ্যে ইকো ড্রিংকিং ওয়াটার বিএসটিআইয়ের নির্দেশ অমান্য করে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত অব্যাহত রাখায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কারখানাটি সিলগালা করা হয়। এ ছাড়া ১১টি প্রতিষ্ঠানের পানি বিশুদ্ধকরণের সক্ষমতা রয়েছে তবে পরীক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। ওই ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে বিএসটিআইকে অবহিত করার জন্য উৎপাদনকারীকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ত্রুটি সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত ক্রয়/বিতরণ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সচিব আরো জানান, লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স গ্রহণের পর মানসম্পন্ন পণ্য বাজারজাত করছে কি-না তা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সাইল্যান্স টিমের মাধ্যমে খোলা বাজার কারখানা থেকে ব্ল্যানডম ভিত্তিতে ৪৩টি নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআইয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৭টি পণ্যের পরীক্ষণ প্রতিবেদন পাওয়া গেছে এবং অবশিষ্ট ১৬টি নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে। প্রাপ্ত প্রতিবেদনের মধ্যে ২৩টি মানসম্মত এবং চারটি নিম্নমানের পাওয়া গেছে। নিম্নমানের চারটি প্রতিষ্ঠান মান উন্নয়ন না করা পর্যন্ত পণ্য বিক্রি/বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এরপর সংসদীয় কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বিএসটিআইয়ের সকল কার্যক্রম মিডিয়ায় এবং প্রেসে দেয়ার জন্য বলা ছিলো। এটা যেনো যথাযথভাবে পালন করা হয়। সময় সময় জনগণকে জানাতে হবে।’

বৈঠকে বিসিআইসির অধীনস্থ ইউরিয়া সার কারখানাসমূহের ডিলারদের নিকট থেকে নিরাপত্তা জামানত হিসেবে প্রাপ্ত ১১১ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা কোন কোন ব্যাংকে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল অধিদপ্তরের কেনাকাটায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ এবং সকল কারখানায় ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাপান থেকে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পাশাপাশি একই কোম্পানির অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ (স্পেয়ার পার্স) ক্রয় করার জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। এছাড়া, বৈঠকে বন্ধ চিনিকলগুলো চালুকরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, চিনিশিল্পে লোকসানের মূল কারণ উদঘাটন, অপ্রয়োজনীয় জনবল ছাঁটাই এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ন্যায় ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকেও যথানিয়মে কাজে উদ্বুদ্ধ করতে কমিটি সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এ কে এম ফজলুল হক, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন, মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান, কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ এবং মো. শফিউল ইসলাম বৈঠকে অংশ নেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানরা শিল্প মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

আমারসংবাদ/জেআই