Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

পরীক্ষা নিয়ে চাপে সরকার

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


পরীক্ষা নিয়ে চাপে সরকার
  • চলমান পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
  • কাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আবারো রাজপথে নামছে
  • শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে ছাত্রসংগঠনগুলো
  • সূচি প্রকাশ করে স্থগিত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতা -দাবি শিক্ষাবিদদের
  • আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চাইছে : শিক্ষামন্ত্রী

আন্দোলন থামেনি। ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের চলমান সব পরীক্ষার দাবিতে চলছে আল্টিমেটাম ও হুঁশিয়ারি। দেশব্যাপী লাঠিচার্জ ও সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বিব্রত সরকারও। সাত কলেজের দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা চলমান ঘোষণার পর বহুমুখী চাপে পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশব্যাপী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করছেন, সড়ক অবরোধ করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আন্দোলন চলবে, সমাধানও আসবে, সেই পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকারও ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের দাবি— স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই। ক্যাম্পাস কিংবা হল কোনোটাই খোলার প্রয়োজন নাই, সকল বিভাগের পরীক্ষা চাই। সম্প্রতি বিসিএসসহ বেশকিছু সরকারি, বেসরকারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও তাতে আবেদন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। রাজপথে নেমে স্লোগানে স্লোগানে বলছেন, ‘২০১৯-এর সকল পরীক্ষা চালু করতে হবে’, ‘তিন বছর একবর্ষে থাকবো না, থাকবো না’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, আমাদের অধিকার ফেরত চাই’ ‘ছাত্রজীবন ডুবছে জলে, করোনা শুধু পরীক্ষার হলে’, ‘দাবি মোদের একটাই— চলমান পরীক্ষার শেষ চাই’, ‘পরীক্ষা নিয়ে প্রহসন চলবে না’, ‘এক দফা এক দাবি ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার সমাপ্তি চাই’।

শিক্ষাবিদরাও মনে করেন, পরীক্ষা স্থগিতের উদ্যোগের আগে সময় নেয়া দরকার ছিলো। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এনে আবার পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়া খুব একটা সুন্দর হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন্তত পরীক্ষা সচল থাকা উচিত। অন্যথায় সেশনজট ও চাকরি বাজারে পিছিয়ে পড়ার যে ধারাবাহিকতা তা আরও দীর্ঘ হবে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে আবার তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আবার একদিকে আন্দোলন করার পর রাজধানীর সাত কলেজের পরীক্ষা সূচি সচল ঘোষণা করছে মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে একই দাবিতে মাঠে নামা অন্য শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও আটক করছে পুলিশ। এমন সিদ্ধান্তহীনতায় অসন্তোষ দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। এখন শিক্ষার্থীদের অধিক মতকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকেই কার্যত সমাধান করতে হবে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। গত বুধবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নীলক্ষেত মোড় থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত অবরোধ করেন। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরিসেবা ছাড়া আর কিছুই চলতে দেয়নি। ফলে নিউমার্কেট-আজিমপুর শাহবাগ থেকে সাইন্সল্যাব সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবদুল্লাহপুর থেকে মিরপুর রোডে ল্যাব এইড পর্যন্ত সড়কটি থমকে ছিলো। রমনা পার্কের সামনের সড়ক, শাহবাগ, কাঁটাবন মোড় ও বাটা সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কের অবস্থাও ছিলো একই। পুরান ঢাকার বংশাল, নয়াবাজার সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়। একই চিত্র ছিলো মহাখালিতেও। একপর্যায়ে সাত ঘণ্টার আন্দোলনে পুরো ঢাকা শহর অচল হয়ে পড়লে বিশেষ বৈঠক থেকে সাত কলেজের দাবি মেনে নিয়ে পরীক্ষা চলমান রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর আন্দোলনে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার শাহবাগ মোড়ে সড়ক অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দিয়ে বেশকজনকে আটক করে। এছাড়া পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এছাড়া একইদিন পুলিশের লাঠিচার্জ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দেশব্যাপী।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার রুটিন প্রত্যাখ্যান : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত সব পরীক্ষা আগামী ২৪ মে থেকে নেয়া শুরু হবে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্সের দ্বিতীয়বর্ষের স্থগিত পরীক্ষা এবং ২০১৮ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বের পরীক্ষাসহ অন্যান্য প্রফেশনাল কোর্সের স্থগিত পরীক্ষা আগামী ২৪ মে থেকে শুরু হবে। এছাড়া ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষে ভর্তির কার্যক্রম আগামী ৮ জুন থেকে শুরু হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত ঐ রুটিন প্রত্যাখ্যান করেছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী আফজাল বলেন, আগে যে রুটিন ছিলো সে অনুযায়ী পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষার যে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে তাতে আমাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। প্রায় তিন মাসের মতো পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে অনেক সময় নষ্ট হবে। এর খেসারত দিতে হবে আমাদেরই।

কাল থেকে ফের আন্দোলনে নামছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : রাজধানীর শাহবাগে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। কিছুক্ষণ পর শাহবাগ মোড় অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। পরে সেখান থেকে ১০ শিক্ষার্থীকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আরও ১০ জনকে আটক করেছে বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। আটককৃতদের পরে শাহবাগ থানা থেকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।

আন্দোলনকারীরা জানান, এদের মধ্যে দিনশেষে অধিকাংশকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যাওয়ার সময় রোববার থেকে তারা আবার রাজপথে নামবে বলে ঘোষণা দিয়ে যায়। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার রুটিন দেয়ায় তারা বাড়ি থেকে ঢাকা চলে আসেন। এখন ঢাকায় এসে শোনেন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অনেকেরই বাসা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় অবস্থানের মতো আর্থিক সংগতিও নেই।

বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর আলটিমেটাম : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান পরীক্ষা গ্রহণে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী। গতকাল সন্ধ্যায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অতুলন দাস আলো যৌথ বিবৃতিতে এ আলটিমেটাম দেন। এছাড়া একই দাবিতে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বের করেছে ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে আগামী রোববার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এ সময়ের মধ্যে পরীক্ষার স্থগিতাদেশ বাতিল করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় তারা। এছাড়া গতকাল রাজধানীতে পরীক্ষা নেয়া ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

পরীক্ষার দাবিতে অনড় হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীরা : পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কলেজ ছাড়বে না বলে জানিয়েছে হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষকরা তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করছেন না বলেও অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। হোম ইকোনমিক্স কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমার কলেজ ছাড়ছি না।’

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ইসমাত রুমিনা বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষার্থীরা লিখিত আবেদন দিলে মন্ত্রণালয়ে তা পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেয়ার পর পরীক্ষা শুরু হলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক।’ এর আগে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে সকাল ৯টায় সড়ক অবরোধ করেন কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীরা। তাদের অবস্থানের কারণে ওই সড়কে যানচলাচল ব্যহত হলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। পরে কলেজের মূল গেটের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ : চলমান ঘোষিত পরীক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার নগরীর জামালখান এলাকায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। এ সময় জামালখানসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়।

চবিতে পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ : মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পূর্ব নির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে ডিন্স কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর তাৎক্ষণিক পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে এসেছে। হল খোলা না থাকায় নতুন করে বাসা, কটেজ ভাড়া নিতে হয়েছে তাদের। এই মুহূর্তে এসে পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রহসন ব্যতীত কিছুই নয়। সামনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।

স্থগিত পরীক্ষা শুরু চায় রাবি শিক্ষার্থীরা : হল না খুলেই স্থগিত পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধনে গত বৃহস্পতিবার এ দাবি জানানো হয়। এসময় ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স, উদ্ভিদবিজ্ঞান, রসায়ন, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, গণিত— এ ছয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা বলেন, হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। কিন্তু যে পরীক্ষাগুলো চলছিল সেগুলো যেন আবার চালু করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমতিশান বলেন, শুধু পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেয়ার দাবি জানাতে এসেছি। যতদিন দাবি মেনে নেয়া হবে না ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে অনার্স-মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষায় বসার কথা ছিলো। এখন আমাদের পরীক্ষাগুলো চলছিল সেসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়ে গেলাম।

নেত্রকোনায় শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ : গত পরশু নেত্রকোনায় কয়েকশ শিক্ষার্থী শহরে মিছিল বের করে। সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় সাংবাদিকসহ ৮-১০ শিক্ষার্থী আহত হয় বলে জানা যায়।

আন্দোলন চল?মান রাখার ঘোষণা বিএম কলেজের : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স চতুর্থ বর্ষের স্থগিত সব লিখিত ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় দাবি আদায়ে কলেজ সম্মুখস্থ সড়ক অবরোধ করে তারা। অবরোধের ফলে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ আটকে পড়ে। ব্রজ?মোহন কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র নুহাশ রহমান বলেন, আমরা ২০১৯ সালে চতুর্থ ব?র্ষের শিক্ষার্থী। করোনার কারণে এমনিতেই আমরা অনেক পি?ছিয়ে গেছি। আমাদের ব?্যবহা?রিক ও মৌ?খিক পরীক্ষা না হওয়ায় কোথাও চাকরির আবেদন করতে পার?ছি না। তাই অবিলম্বে বা?কি পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেয়া হোক। তা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।

সিলেট চৌহাট্টা পয়েন্ট অবরোধ : নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। তারা চৌহাট্টা পয়েন্ট অবরোধ করে।

পরীক্ষার দাবিতে জাককানইবির প্রশাসনিক ভবনে তালা : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি)-এ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে ‘দ্রুত পরীক্ষা চাই, পরীক্ষা ছাড়া উপায় নাই’— লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এরপর প্রশাসনিক ভবনের গেটে তালা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের দাবি— পরীক্ষা নেয়ার কথা বলে তাদের ক্যাম্পাসে আনা হলেও পদক্ষেপ নেননি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই। ক্যাম্পাস কিংবা হল কোনটাই খোলার প্রয়োজন নাই, সব বিভাগের পরীক্ষা চাই।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। করোনা মহামরির কারণে অনেক অভিভাবক আর্থিক সংকটে আছেন। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর সুস্পষ্ট। একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্থগিত পরীক্ষাগুলো শুরু হয়ে প্রায় শেষপর্যায়ে ছিলো। গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিজ খরচে ধার-দেনা করে ঘরভাড়া নিয়েছে। পরীক্ষাগুলো স্থগিত করায় শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

সাত কলেজের পরীক্ষার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করে একবার স্থগিত করা আবার আন্দোলনের মুখে সচল করা; এটা সরকার না বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতা।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার কারণে হলগুলোর সংস্কারকাজ এবং শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য সময় নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চাইছে। শিক্ষার্থীদের সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আমারসংবাদ/জেআই