Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

মাহমুদুল হাসান

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
  • এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ রোগী শনাক্ত
  • বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৪০ লাখ ৫৭ হাজার ৯০৫ জন
  • এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জন
  • টিকাগ্রহীতা ৬৯৬ জনের মধ্যে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে

তুলনামূলক কমে এসেছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি মৃত্যু। সংক্রমণ শনাক্তের শুরুতে মানুষের মধ্যে অদৃশ্য ভাইরাস নিয়ে যতটা ভীতি ও আতঙ্ক ছিলো, সেটি এখন আর নেই। এতে সুরক্ষিত থাকার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়ে পড়েছে। সরকার নির্দেশনা জারি করেও মানাতে পারছে না স্বাস্থ্যবিধি।

গত এক সপ্তাহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। সামান্য মাস্ক পরাটাও উঠে গেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শপিং কমপ্লেক্সেও সামনের হাত-মুখ ধোয়ার বেসিন শুকিয়ে চৌচির। কেউ ধুতে যায় না হাত-মুখ। অনেক বেসিনে পড়ে না পানি, নেই সাবান। কোথাও কোথাও বেসিনের যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে গেছে। সরকারি অফিসে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি চালু করা হলেও সেখানেও অনেকে মাস্ক ছাড়াই ঢুকে পড়েন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা অনেকটা কল্পনাপ্রসূত কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণপরিবহন কিংবা বিপণি বিতান সবখানে মাস্কহীন চলাফেরা চলছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে আগত অধিকাংশ ক্রেতা-দর্শনার্থীর মুখে নেই মাস্ক। তাদের ভাষ্য, দেশে করোনার প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখন আর স্বাস্থ্যবিধির তেমন প্রয়োজনীয়তা নেই। সামিয়া রহমান নামে এক গৃহবধূ জানান, দেশে টিকা প্রয়োগ হচ্ছে এখন আর মাস্কের কি খুব বেশি দরকার। মাস্ক পরে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাই আগের মতো মাস্ক পরি না।

এদিকে দেশে করোনার টিকা নেয়ার পরও এ পর্যন্ত তিনজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার সাত থেকে ১৬ দিনের মধ্যে আক্রান্ত হন। জনস্বাস্থ্যবিদরা জানিয়েছেন, টিকার আগে কিংবা পড়ে সবসময় সুরক্ষিত থাকতে মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধির বিকল্প নেই। এসব অভ্যাস করোনাসহ অন্যান ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সবসময় সুরক্ষিত রাখতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গতকাল নতুন করে ৪৭০ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত পাচ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৪ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে চার লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৮ জন সুস্থ হয়ে উঠলেও মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৩৯৫ জনের। বাকিরা এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, করোনার টিকা নেয়ার কারণে কোভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষায় পজেটিভ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজ নেয়ার ন্যূনতম ১৪ দিন পর থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধসক্ষমতা তৈরি হয়। এ সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই করোনার টিকা নেয়ার পরও মাস্ক ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে নিবন্ধন করেছেন ৪০ লাখ ৫৭ হাজার ৯০৫ জন। আর এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জন। এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা পাওয়া গেছে ৬৯৬ জনের মধ্যে। কোনো টিকাগ্রহীতার ক্ষেত্রে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও টিকাদান কর্মসূচির অন্যতম ডা. মো. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেয়ার আগে পরে সবসময় মাস্ক পরা জরুরি। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিলে ভাইরাসটা দুর্বল হয়ে পড়বে। যে পর্যন্ত না সারা পৃথিবী থেকে এই করোনা ভাইরাস বিদায় নেবে বা দুর্বল হতে ততদিন পর্যন্ত মাস্ক পরাটা জরুরি। তারপরও মাস্ক পরলে ক্ষতি নেই। ধুলোবালি থেকে সর্দিকাশি বেশি হয়। মাস্ক পরলে সেটি থেকেও সুরক্ষিত থাকবে। এ জন্য বলা হচ্ছে— ভ্যাকসিন নেন। সাথে সাথে  মাস্ক পরতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়াসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি সবসময় মানতে হবে।

তিনি বলেন, পরিপূর্ণ ইমিউনিটি হওয়া তো আপেক্ষিক ব্যাপার। কোনো ভ্যাকসিনেই তো পরিপূর্ণ ইমিউনিটি তো হচ্ছে না। সেকেন্ড ডোজ টিকা নেয়ার ১৪ দিনের মাথায় ইমিউনিটি হয়। ভ্যাকসিন নেয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হতে পরে। ভ্যাকসিন নেয়ার পরে যাদের হবে তাদের কিন্তু তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। অল্প স্বল্প লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাদের হাসপাতাল কিংবা আইসিইউতে নিতে হবে না। তবে তাদের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কিন্তু অন্যদের মধ্যেও করোনা ছড়াতে পারে।

আমারসংবাদ/জেআই