Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

২০৩০ সাল পর্যন্ত বিশাল কর্মযজ্ঞ

জাহাঙ্গীর আলম

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


২০৩০ সাল পর্যন্ত বিশাল কর্মযজ্ঞ
  • যানজট কমাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই মেট্রোরেলে ৩৮ মিনিটে উত্তরা-মতিঝিলে যাওয়ার সুযোগ
  • রাজধানীতে অত্যাধুনিক উড়াল-পাতালে যাতায়াতে থাকবে ১০৪টি স্টেশন
  • উত্তরা-মতিঝিল, বিমানবন্দর-কমলাপুর, হেমায়েতপুর-ভাটারা, কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জে হবে ১২৯ কিলোমিটার পথ

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে চলছে রাত-দিন বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্র্রায় ২০০ বিঘা জমিতে ওয়ার্কশপ, রেললাইন নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। যাতে বিজয় দিবসে স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হয়। ভায়াডাক্টের উপরে বসানো হচ্ছে লাইন। উঁকি দিচ্ছে রাজধানীর স্বপ্ন। মেট্রোরেল-৬ এর অগ্রগতি হয়েছে ৫৭ শতাংশ। তবুও নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই ৩৮ মিনিটে যাতায়াতের ব্যবস্থা করছে মেট্রোরেল।

শুধু এই লাইনই নয়, পাতাল ও উড়াল পথ এমআরটি-১ বিমানবন্দর-কমলাপুর ও পূর্বাচল রুট হচ্ছে। ৫-সাউথরুটে গাবতলী-দাশেরকান্দি পাতাল-উড়াল লাইন বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে। গাবতলী-চট্টগ্রাম রোডে এমআরটি-২ রুটে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৫০ শতাংশ প্রিলিমিনারি স্টাডি করেছে। এছাড়া কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জে উড়াল এমআরটি-৪ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এভাবে রাজধানীর সাথে পাশের এলাকার যানজট কমাতে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ১২৯ কি.মি উড়াল ও পাতাল পথে ছয়টি মেট্রোরেলের বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। থাকবে উড়াল-পাতালে ১০৪টি স্টেশন। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব কাজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব জানা গেছে। 

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এন সিদ্দিকী বলেন, ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মেট্রোরেলের কাজ করছে জাপানের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু করোনার কারণে অনেকে এখনো কাজে যোগ দিতে পারেননি। তারপরও প্রথমপর্যায়ে মেট্রোরেল-৬ এর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। জাপান থেকে রেলের কোচ ২৩ এপ্রিল উত্তরা ডিপোতে আসবে। সব কাজ দ্রুত শেষ করে আমরা ১৬ ডিসেম্বর প্রথম অংশ চালু করবো। বর্তমানে কাজ চলছে দুই শিফটে। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে ২০২২ সালের মধ্যেই পুরো এমআরটি লাইন ছয়টি চালু করার। বিশ্বে এটা রেকর্ড। নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের দুই বছর আগেই আগামী বছর এর কাজ শেষ করা হবে।

সম্প্রতি উত্তরা দিয়াবাড়ী ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ার্কশপে চলছে রেললাইনের কাজ। তাকালে দেখা যায়, শুধু লাইন আর লাইন। যাতায়াতের পর ২৪টি ট্রেন মেরামত ও রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, মেধা ও শ্রমের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। চলছে বিশাল কর্মষজ্ঞ। কারণ পুরো মেট্রোরেলটি উত্তরা-কমলাপুর পর্যন্ত ২০২২ সালেই চালু করতে চান সংশ্লিষ্টরা। ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হবে। যদিও এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এর আগেই কোনোরকম ব্যয় না বাড়িয়েই প্রকল্প শেষ করা হবে। ট্রেন পরিচালনার জন্য ১৫০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ রিসিভিং স্টেশনের কাজও শেষ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পিলারের উপর সর্বশেষ ভায়াডাক্ট স্থাপন করা হবে এ মাসের শেষ দিকে। ভায়াডাক্টের উপরে ৭ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ হয়েছে। সর্বাধুনিক সুবিধা-সংবলিত স্টেশনগুলোর কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। তারপর জুলাইতে শুরু হবে ট্রায়াল রান। পাঁচটি স্টেশনের মধ্যে এ পরীক্ষামূলক রেল চলাচলের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। উত্তরা দক্ষিণে নির্মাণাধীন স্টেশন-৩ ঘুরে দেখা গেছে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নানা আয়োজন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— টিকিট কাউন্টার, বিশ্রামাগার, খাবারের স্বয়ংক্রিয় দোকান, নামাজের জায়গা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স রুম, বিনা টিকিটে বা টিকিটের অতিরিক্ত গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, উপরে উঠার সিঁড়ি, এস্কেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) ও লিফট।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বগিতে ৫৪ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ব্যস্ত সময়ে (অফিস যাওয়া ও আসা) বসে-দাঁড়িয়ে দুই হাজার ৩০৮ জন যাতায়াত করতে পারবেন। আর স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার ৭৩৮ জন। প্রতিটি ট্রেনে নারীদের জন্য থাকবে একটি করে বিশেষ বগি। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকবে প্রতিটি বগির দরজার পাশে হুইল চেয়ার আটকানোর ব্যবস্থাও। প্রতি স্টেশনে মাত্র ৪৫ সেকেন্ড বিরতি থাকবে। ৩৮ মিনিটে যাওয়া যাবে ইঞ্জিনবিহীন বিদ্যুৎচালিত ২০ কি.মি স্বপ্নের মেট্রোরেল। প্রতি ট্রিপে ছয়টি কার ট্রেন থাকবে। এরমধ্যে একটি মহিলা, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যদের যাতায়াতে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হবে।    

সূত্র জানায়, রাজধানীর যানজট কমাতে ২০১২ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জুনে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রথম অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া মতিঝিল পর্যন্ত পুরো এমআরটি লাইন-৬ এর অগ্রগতি হয়েছে ৫১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ( রেলকোচ) এবং ডিপো ইক্যুইপমেন্ট কাজের সমন্বিত অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বর্ধিত অংশের সার্ভে হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে ডিটেইল ডিজাইন করা হবে বলে জানান এম এন সিদ্দিকী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, মেট্রোরেলে বিশাল কর্মযজ্ঞ। করোনার কারণে পিছিয়ে গেছে এর কাজ। তারপরও মহান বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বর) মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আধুনিক মনের মানুষ। সব সুযোগ যাতে থাকে, সরকারপ্রধান এটা করতে বলেছেন।

এমআরটি-১ নামে রুটটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর প্রায় ২০ কিলোমিটার ও ১১ কি.মি পূর্বাচল রুটে এই প্রথম পাতালরেল বা আন্ডারগ্রাউন্ড হচ্ছে। সবমিলে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল ও উড়াল এ পথে ২১টি স্টেশন করা হবে। নতুন বাজার স্টেশনে ইন্টার-সেকশন হবে। যাতে বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচল এবং পূর্বাচল থেকে বিমানবন্দরে যাওয়া যায়। এই রুটের ডিটেইলড ডিজাইনের অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ।

২০২৮ সালের মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত পাতাল ও উড়ালপথে ২০ কি.মি দীর্ঘ এমআরটি-৫ নর্থরুটও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে পাতাল সাড়ে ১৩ কি.মি এবং উড়ালপথ সাড়ে ছয়। ঋণচুক্তি হয়ে গেছে। ফিজিবিলিটি স্টাডিও হয়েছে। বেসিক ডিজাইন কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশের বেশি। এছাড়া গাবতলী-দাশেরকান্দিতে পাতাল-উড়াল লাইন বাস্তবায়নে ১৭ দশমিক ৪০ কি.মি দীর্ঘ এমআরটি-৫ সাউথরুটও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাতালে হবে ১২ দশমিক ৮০ কি.মি স্টেশন থাকবে ১২টি এবং উড়ালে ৪ দশমিক ৬০ কি.মি পথে চারটি স্টেশন থাকবে। মোট ১২টি স্টেশন থাকবে। উন্নয়ন সংস্থার সাথে ঋণ চুক্তি হয়েছে। এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে। ২০৩০ সালে হবে এর কাজ। যানজট দূর করতে ঢাকা মেট্রোর সীমানায় গাবতলী-চট্টগ্রাম রোডে ২৪ কি.মি এমআরটি-২ রুট করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সরকার। ২০৩০ সালে উড়াল ও পাতালপথে ২৪ কি.মি দীর্ঘ এ রুট জিটুজি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে জাপান সরকারের সাথে চুক্তি সই করেছে। মন্ত্রিসভা কমিটিও ২০১৮ সালের ৭ জুনে অনুমোদন দিয়েছে। এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৫০ শতাংশ প্রিলিমিনারি স্টাডি করেছে। এছাড়া কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্র্যাকের পাশ দিয়ে ১৬ কিলোমিটার উড়াল এমআরটি-৪ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এভাবে ২০৩০ সালে হবে রাজধানীর সাথে পাশের এলাকার যানজট কমাতে পাতালপথ নির্মাণ।

আমারসংবাদ/জেআই