Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

শতভাগ ভিটামিন ‘এ’ নিশ্চিতের উদ্যোগ

বিশেষ প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


শতভাগ ভিটামিন ‘এ’ নিশ্চিতের উদ্যোগ
  • ড্রামে কোম্পানির নাম-ঠিকানা না থাকায় ধরা যাচ্ছে না ব্যবসায়ীদের
  • ভোজ্যতেলের ড্রাম ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম সভা ১ মার্চ
  • ড্রামের ভেতরে কী থাকে জানি না। নাম-ঠিকানা থাকলে ভেজাল প্রতিরোধ করা যাবে -গোলাম মাওলা, সভাপতি  বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতি

বাংলাদেশে ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতিজনিত কারণে অনেক রোগবালাই হয়। তা দূর করাসহ মারাত্মক শারীরিক ঝুঁকি কমাতে ভোজ্যতেলে শতভাগ ভিটামিন ‘এ’ নিশ্চিত করতে সরকার প্রায় আট বছর আগে আইন পাস করেছে। রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত বোতলে এটা নিশ্চিত করছে। কিন্তু ড্রামের মাধ্যমে হোটেল রেস্টুরেন্টে লাখ লাখ লিটার তেল ব্যবহার করলেও ছিটেফোটা নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিল থেকে ড্রামে করে এনে বিক্রি করছেন। তারা জানেন না ভেতরে কী আছে। কিন্তু সেই তেলের ড্রামে নাম-ঠিকানা না থাকায় শাস্তির আওতায় আনতে পারছে না ভেজালবিরোধী অভিযানে। এ জন্য বাধ্য হয়ে ভোজ্যতেলের ড্রাম ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর কার্যক্রম শুরু করতে আগামী ১ মার্চ কমিটির প্রথম সভার আয়োজন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সার্বিক ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মৌলভীবাজার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা আমার সংবাদকে বলেন, ‘মিল থেকে নগদ টাকায় মাল কিনি। মোকামে বিক্রি করি। ভেতরে ভিটামিন ‘এ’ থাকে কি-না জানি না। এটা মিলমালিকরা বলতে পারবেন। কাজেই কিছু জানার থাকলে তাদের কাছে জানতে হবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো ড্রামে কোনো তেল কোম্পানির নাম থাকে না। এটা রাখতে হবে কি-না তাও তিনি জানেন না। সরকার ড্রামের তেলে ভিটামিন নিশ্চিত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটা করা হলে ভেজাল প্রতিরোধ করা যাবে। সব কিছু জানা যাবে। সরকারের উদ্যোগও কার্যকর হবে। শিল্পমন্ত্রণালয় সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এসডিজি বাস্তবায়ন এবং দেশের শিশু-কিশোর ও গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন ‘এ’র ঘাটতিজনিত রোগবালাই দূর করার লক্ষ্যে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। গ্লোবাল অ্যালাইয়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রেশন (জিএআইন) এতে কারিগরি সহায়তার হাত বাড়ায়। তা কার্যকর করতে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের ভোজ্য তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ শীর্ষক জাতীয় কর্মসূচি পালনও করে। বিএসটিআইয়ের সহায়তায় কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির মাধ্যমে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যাতে বাংলাদেশের শিশু-কিশোর ও নারীরা রাতকানাসহ বিভিন্ন রোগমুক্ত করা যায়। বিশেষ করে, গ্রামীণ গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মহিলা এবং শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও অন্ধত্বসহ মারাত্মক শারীরিক ঝুঁকি কমাতে এবং এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এক কারিগরি কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়।

ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ নিশ্চিত করতে সরকার অবশেষে আইনও পাস করেছে। যা ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩  বা ২০১৩ সালের ৬৫ নং আইন নামে পরিচিত। এতে বলা হয়েছে— কোনো ব্যক্তি এই আইন অমান্য করলে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। আইনে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার দায়িত্ব হিসেবে বলা হয়েছে— কোনো খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করা হয়নি বা মোড়ক ব্যবহার করা হয়নি এমন কোনো ভোজ্যতেল বিক্রি বা বিক্রির উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ, পরিবেশন বা প্রদর্শন করিতে পারিবে না। এতে আরও বলা হয়েছে— প্রত্যেক ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী বা সমৃদ্ধকারী কারখানা থেকে সংগৃহীত সমৃদ্ধকৃত ভোজ্যতেলের নমুনা কোনো অ্যাক্রেডিটেশন সনদপ্রাপ্ত পরীক্ষাগারের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে হবে। বিএসটিআইকে এই দায়িত্ব দিয়েছে শিল্পমন্ত্রণালয়। কিন্তু বড় ড্রামের গায়ে আমাদানিকারক বা রিফাইনারি কোম্পানির নাম-ঠিকানা না থাকায় ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ কি-না তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ জন্য ড্রামে করে খোলাবাজারে দেদার ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। এই তেলে বড় বড় হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু কোন কোম্পানির এই তেল তা ধরা যাচ্ছে না।

অপরদিকে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করতে ফোরটিফিকেশন অব ইডিবল ওয়েল ইন বাংলাদেশ (ফেজ-৩) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। শিল্পমন্ত্রণালয়কে এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটিতে জিএআইএন অনুদান দিয়েছে সোয়া ১২ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুলাই শুরু হয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর শেষ হবে প্রকল্পটি। এ পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে প্রকল্পের কাজ।

সূত্র আরও জানায়, তীর, ফ্রেশসহ বিভিন্ন রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান বোতলজাত তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণের ব্যবস্থা করেছে। তাতে প্রতি লিটারে দুই থেকে পাঁচ টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু ড্রামে করে যে লাখ লাখ লিটার তেল ব্যবহার হচ্ছে তাতে নজর নেই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণে। এই তেলই দেশের ছোট-বড় প্রায় সব হোটেল ও রেস্টুরেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে ভোক্তাদের ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্যই শিল্পমন্ত্রণালয় থেকে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় একটি ভোজ্যতেলের ড্রাম ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিল্পমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হেলাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে আগামী ১ মার্চে প্রথম সভা ডাকা হয়েছে। সভায় উপস্থিত থাকতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, সহায়তাকারী সংস্থা গেইনের কান্ট্রি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ এডিবল অ্যান্ড ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারি অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারিং অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতিকে চিঠি দিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।  

উল্লেখ্য, ভোজ্যতেলে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত করা হয়েছে, তাতে ভোক্তার ২০ শতাংশ ঘাটতি পূরণ করতে পারবে। বাকি ৮০ শতাংশ অন্যান্য খাবার থেকে পেতেই পারেন ভোক্তারা। যাদের ঘাটতি নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই ভোজ্যতেল ক্ষতির কারণ হবে না। কারণ এই তেলে খুবই সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ মেশানো হয়।

আমারসংবাদ/জেআই