Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ব্যর্থ হয়েছে এমপিদের নৌকাবিরোধী মিশন

রফিকুল ইসলাম

মার্চ ১, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম


ব্যর্থ হয়েছে এমপিদের নৌকাবিরোধী মিশন

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের আওয়ামী লীগের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। এখানে উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন নৌকার মনোনীত প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ। নির্বাচনের শুরু থেকে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন স্থানীয় সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। তবে শেষ পর্যন্ত এই এমপির নৌকাবিরোধী মিশন ব্যর্থ হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের দলীয় এমপির নিজ কেন্দ্রে নৌকার মনোনীত প্রার্থী ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৬টি। দলীয় এমপির নিজ কেন্দ্রে নৌকার এমন পরাজয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার অনুষ্ঠিত হয় দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচন। ওই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের চাচা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সীর ছোট ভাই এ এফ এম তারেক। নিজ বলয়ের বাইরে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হওয়ায় চাচার পক্ষে কাজ করেন স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে ভোটগ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। নিজ কেন্দ্রে হারিয়ে দেন নৌকার প্রার্থীকে। সেখানে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাংসদের চাচা এ এফ এম তারেক মুন্সি ৯৮১ ভোট পান। আর নৌকা পেয়েছে মাত্র ১৬ ভোট।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন স্থানীয় সাংসদ মনজুর হোসেন বুলবুল। ভোট প্রচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ ছিলেন তিনি। স্থানীয় এমপির এমন ভূমিকা হলেও শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহিদুল ইসলাম শহিদ। স্থানীয় এমপি শাহীন চাকলাদার বিরুদ্ধে থাকলেও যশোরের কেশবপুর পৌরসভায় জয়লাভ করেছেন নৌকার মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। পঞ্চম ধাপের ভোটে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন তিনি। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে নিজের পছন্দ প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় এমপি শাহীন চাকলাদার। ফলে তার বলয়ের কেউ প্রকাশ্যে নৌকার প্রচারণায় নামেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এমপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও শেষ পর্যন্ত নৌকার জয় হয়েছে। স্থানীয় এমপি বিপক্ষে থাকলেও মাদারীপুর সদর পৌরসভায় জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী খালিদ হোসেন ইয়াদ। গত রোববার পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। অথচ স্থানীয় সাংসদপন্থি নৌকা না পাওয়ায় প্রথম থেকেই নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। স্থানীয় এমপির ইন্ধনে হবিগঞ্জের হবিগঞ্জ পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন মিজানুর রহমান মিজান। তবে ভোটের মাঠে পরাজয় হয়েছে তার। এই পৌরসভায় জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম। তবে তার বিরুদ্ধে ভোটের কাজ করেছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী এমপি। শুধু সদ্য সমাপ্ত পঞ্চম ধাপের পৌরসভা নির্বাচন নয়, প্রথম চার ধাপেও নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন অনেক সাংসদ। তারা সরাসরি বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন করেছেন। তবে নৌকার বিরুদ্ধে বিরোধিতা করা অধিকাংশ সাংসদ ব্যর্থ হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, কেউ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন, তাদের কিছু হবে না, তা হবে না। নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সে যেই হোক, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, চলমান পৌরসভা নির্বাচনে বৃদ্ধি পেয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আর এসব দ্বন্দ্বের মূল নেতৃত্বে রয়েছে স্থানীয় সাংসদ ও প্রভাবশালী নেতারা। তাদের কারণে তৃণমূল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব, বলয়ভিত্তিক রাজনীতি, ভাই-লীগ, এমপি-লীগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চলমান পৌরসভা নির্বাচনের শুরু থেকেই নিজ দলীয় নেতাকর্মীরা হানাহানি, হামলা-মামলা ও সংঘর্ষের শিকার হয়েছেন। নির্বাচনে মুখোমুখি ছিলো আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। তৃণমূলে সৃষ্ট এসব কোন্দল ও স্থানীয় এমপিদের লাগাম টানতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র ও বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তারা বিভিন্নভাবে কোন্দল নিরসন করছেন। ফলে প্রথম ধাপগুলোর থেকে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে এমপিদের বিরোধিতা কোনো কাজে আসেনি। কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন কঠোর পদক্ষেপে পঞ্চম ধাপের ২৯টি পৌরসভার মধ্যে ২৭টিতে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে নৌকার মনোনীত প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, নৌকা বিরোধীদের পার পাওয়ার সুযোগ নেই। সবাইকে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, গত রোববার দেশের ৩০টি পৌরসভা ও চারটি উপজেলা পরিষদ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ধাপে সব পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ। চলতি বছরের শুরুতে ১৬ ও ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের ভোট।

আমারসংবাদ/জেআই