Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

বেসরকারি খাতকে দেবে না সরকার

মাহমুদুল হাসান

মার্চ ১, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম


বেসরকারি খাতকে দেবে না সরকার
  • বেসরকারি খাতকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়েছে -অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • করোনা মোকাবিলার মতো টিকাদানেও অংশ নিতে চাই -এম এ মুবিন খান, সভাপতি, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)

দেশে গণটিকাদান চলছে ২২ দিন হলো। ৫৪তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে গত ৭ ফেব্রুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এক হাজারেরও বেশি হাসপাতালে চলছে এই মহাকর্মযজ্ঞ। যেখানে কাজ করছেন প্রায় ৫০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক। অল্প দিনেই চল্লিশোর্ধ্ব ও সম্মুখ সারির ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৮২৫ জন টিকা নিয়েছেন। টিকার জন্য ডিজিটাল নিবন্ধন প্লাটফর্ম সুরক্ষা ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে ৪৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৯২ জন আবেদন করেছেন। দেশেও নেই টিকার ঘাটতি। চাহিদার দ্বিগুণ টিকা মজুদ রয়েছে। ভোগান্তি ছাড়াই বিনামূল্যে টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভারত সরকারের উপহারের ২০ লাখসহ এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৯০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড টিকা দেশে এসেছে। প্রতি মাসে আসবে আরও ৫০ লাখ করে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকার টিকা কিনেছে তিন কোটি ৪০ লাখ ডোজ। এছাড়া সারা বিশ্বে ন্যায্যতার ভিত্তিতে করোনার টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকে আরও পৌনে সাত কোটি টিকা বাংলাদেশ পাবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। এটি মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসাবে। তবে পরে আরও ৭ শতাংশ বেশি অর্থাৎ আট কোটি টিকা পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি করোনার টিকাদান কার্যক্রমে আগ্রহ দেখায় দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মালিকরা। তাদের দাবি— দেশের ষাট শতাংশের বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে টিকাদান কার্যক্রমে নাখোশ তারা। শুধু ব্যবসা নয়, ইতিহাসের অংশ হতে চান তারা। এজন্য বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সরকারের ক্রয়কৃত টিকার ১০ লাখ ডোজ চেয়েছেন তারা। নরম সুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও তাদের দাবিতে সায় দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া এবিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো সম্ভব নয় বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা শনাক্তের টেস্টিংয়ে ছিলো, টিকাদান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না করা প্রশ্নবোধক। বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে বেসরকারি হাসপাতালকে টিকাদান কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে। এরপর কেটে গেছে অন্তত ২০ দিন। আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন বৈঠকে। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এক্ষেত্রে সরকারের ভাবনা ভিন্ন। মহামারি মোকাবিলায় জোরালো ভূমিকার জন্য বিশ্বে বিশতম দেশের তালিকায় উঠে এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এমন অর্জনের সময় টিকাদান কার্যক্রমের নামে গড়ে উঠুক ব্যবসা, সেটি সরকার চাইছে না। এজন্য চাহিদার আলোকে বিনামূল্যেই টিকা দিতে চাইছে সরকার। প্রতিদিন গড়ে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ আগ্রহ নিয়ে টিকা গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে চাইছে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে নিবন্ধিত শিক্ষকদের তালিকাও চাওয়া হয়েছে। সেইসাথে বিনামূল্যে প্রয়োগের জন্য আমদানিকৃত টিকা ব্যবসা করতে বেসরকারি খাতকে দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়। এই সিদ্ধান্তে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা হতাশ হলেও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সরকারের সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক। করোনাকালে চিকিৎসার নামে যারা অতিরিক্ত বিল আর জিম্মি করে অর্থ আদায় করেছে তাদের জনগণের টাকায় ক্রয়কৃত টিকা ব্যবসার জন্য দেয়া কোনো শুভ উদ্যোগ হবে না। এক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তব ও যুগান্তকারী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল নতুন করে শনাক্ত হওয়া ৫৮৫ জনসহ এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮০১ জনের শরীরে। মৃত্যু বেড়ে ৮ হাজার ৪১৬ জনে। এক বছরে প্রায় ৪০ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

অধিদপ্তর আরও জানায়, গতকাল আরও এক লাখ ১৬ হাজার ৩০০ জন চল্লিশোর্ধ্ব ও সম্মুখযোদ্ধা করোনার টিকা নিয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ২১ জনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। এ পর্যন্ত ৩২ লাখ ২৬ হাজার ৮২৫ জন মানুষ টিকা নিয়েছে। যার অধিকাংশ সুস্থ রয়েছেন। মাত্র ৭৫৪ জনের শরীরে টিকা গ্রহণের পর মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেলেও সবাই সুস্থ রয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, করোনারা টিকা নিয়ে ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নয়। করোনা মোকাবিলায় যেভাবে বেসরকারি হাসপাতাল অবদান রেখেছে, টিকা প্রদানেও সেভাবে অংশ নিতে চায়। সরকার টিকার মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। যারা বিনামূল্যে টিকা নিতে চান তারা সরকারিভাবে টিকা নেবেন। আর যারা সচ্ছল ও ধনী তারা বেসরকারি পর্যায় থেকে টিকা নেবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, বেসরকারি খাতকে টিকা দেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে যেসব কথাবার্তা হয়েছিল, তার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কেউ বেসরকারিভাবে টিকা আমদানি করতে চাইলে সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছু ঠিক করে দেয়া হবে যে, তারা কত দামে আনবেন, কত দামে বিক্রি করবেন, কীভাবে কী করবেন— সব বলে দেয়া হবে। কিন্তু বেসরকারি খাতকে কোনো টিকা দেবে না সরকার।

তিনি বলেন, টিকা পাওয়া নিয়ে কোনো সংশয় নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে নিবন্ধিত শিক্ষকদের ডাটা চাওয়া হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব তাদের টিকা দেয়া হবে। আগে শিক্ষক ও পরে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। শিক্ষকদের টিকা দিতে বয়সসীমা শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে ৪০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি শিক্ষকরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা নিতে পারলেও এখন থেকে ৪০ বছরের কম বয়সি শিক্ষকরাও টিকা নিতে পারবেন। এ জন্য টিকা নিবন্ধনের সুরক্ষা অ্যাপে শিক্ষকদের অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে আনা হয়েছে। সেখানে শিক্ষক নামে নতুন ক্যাটাগরি করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য সুরক্ষা অ্যাপে এখনো কোনো ক্যাটাগরি করা হয়নি।

আমারসংবাদ/জেআই