Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

অভিযানে মিলছে সুফল বাজারব্যবস্থা সুশৃঙ্খল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


অভিযানে মিলছে সুফল বাজারব্যবস্থা সুশৃঙ্খল
  • আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই যেমন গড়ে উঠেছে সুশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থাপনা, তেমনি সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে নিজের অধিকারের বিষয়ে তলানিতে থাকা ভোক্তাদের

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ আর অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক ভোক্তা হয়রানি ও প্রতারণারোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা সাধারণের অধিকার সমুন্নত রাখতে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর যথাযথ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই যেমন গড়ে উঠেছে সুশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থাপনা, তেমনি সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে নিজের অধিকারের বিষয়ে তলানিতে থাকা ভোক্তাদের। নিয়মিত বাজার তদারকির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক ও সহনশীল রাখতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯-ও ইতোমধ্যে দেশের ভোক্তা সাধারণের অধিকার লঙ্ঘনজনিত অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে সাহায্য করছে এবং জনগণও এ আইনের সুফল পেতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই কাজ করছে অধিদপ্তর।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্যেও মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহার দক্ষ ব্যবস্থাপনায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এদিকে ২০০৯ সালে কার্যক্রম শুরু করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন ভোক্তা অধিদপ্তর শুরু থেকেই ভোক্তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার, গণশুনানি, ভোক্তা অধিকার আইনের বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা, বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে সফলতার পথে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশেষ করে নিজের অধিকারের বিষয়েই তলানিতে থাকা ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে সফলতার জানান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সাম্প্রতিক সময়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রমের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ভোক্তা অধিদপ্তর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে নিয়মিত যে অভিযান-জরিমানা ও তদারকি করে আসছে, তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাজার তদারকিকালে মাস্কসহ আলু, চাল, পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল, আদাসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করে।

এছাড়া পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, মূল্য তালিকার সাথে বিক্রয় রসিদের গরমিল, পণ্যের ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ না করা, অনিবন্ধিত ঔষধ, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ও পণ্য, নকল পণ্য, ওজনে কারচুপিসহ ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন অপরাধে সারা দেশে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর। এছাড়া তদারকিকালে মাস্ক, চাল, আলু, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের মূল্য নিয়ে কারসাজি না করা এবং বাধ্যতামূলকভাবে পণ্যের ক্রয় রসিদ ও মূল্যতালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন ও সতর্ক করা হয়। এছাড়াও ঢাকার বাইরে বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাজারে তদারকি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। যা নিয়মিতই হচ্ছে। 

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ও নৈতিকতার সাথে ব্যবসা পরিচালনাকারী সকল ব্যবসায়ীকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সবসময় সাধুবাদ জানায়। ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব একটি সুশৃঙ্খল বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও মাস্ক পরার প্রতি গুরুত্বারোপ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়েরও অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সার্বিক নির্দেশনা, মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের পরামর্শ এবং অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে নিয়মিতই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যে অভিযান থেকে বাদ পড়ছে না ইটভাটাও। বরং ইটভাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তাদের অধিকার হরণ করা অসাধু ব্যবসায়ীদের যেমন জরিমানার আওতায় আনছে, তেমনি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছে অধিদপ্তর। 

এদিকে অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্য প্রতিরোধ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যক্রম দেশব্যাপী বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ধারা ১০ অনুসারে সকল জেলায় জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রবিধানমালা ২০১৩ অনুসারে সকল উপজেলা ও সকল ইউনিয়নে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিতরণ করা হয়েছে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৯টি পোস্টার, লিফলেট, পাম্পলেট, স্টিকার ও ক্যালেন্ডার।

জানা গেছে, ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর অধীনে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অধিদপ্তরের মোবাইল টিম কর্তৃক ৬২ কোটি ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়েছে। ভোক্তাদের অভিযোগ গ্রহণের লক্ষ্যে ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র ও হটলাইন স্থাপন করা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৭৬(৪) ধারায় আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ হিসেবে ছয় হাজার ১৭৪ জন অভিযোগকারীকে এক কোটি সাত লাখ ৫২ হাজার ৮২৫ টাকা প্রদান করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ৬৪টি জেলা কার্যালয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ প্রচারের লক্ষ্যে সকল উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয়পর্যায়েও সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সফলতার পথে এগিয়ে চলা জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের সামনে রয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ যুগোপযোগীকরণের চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও রয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ সম্পর্কে দেশের সকল জনগণকে অবহিতকরণ এবং জেলা কার্যালয়সমূহে জনবলের স্বল্পতাও। তবে নিয়মিত অভিযান-জরিমানা, প্রচারণা, সচেতনতাসহ সার্বিক কার্যক্রমের যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যেমন চ্যালেঞ্জ মোকবিলায় সফল হবে ভোক্তা অধিদপ্তর, তেমনি ভোক্তা অধিদপ্তর সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর সুফলও পৌঁছে যাবে দেশের সকল মানুষের দোরগোড়ায়। যে আইন সম্পর্কেও জনগণকে অবহিত করতে প্রচারণামূলক কার্যক্রম জোরদারে কাজ করে যাচ্ছে ভোক্তা অধিদপ্তর।

আমারসংবাদ/জেআই