Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

লন্ডন পরিকল্পনায় ৭ মিশন

মার্চ ২, ২০২১, ০৭:৩৫ পিএম


লন্ডন পরিকল্পনায় ৭ মিশন
  • জামায়াতসহ জোটকে বিশেষ গুরুত্ব; সমন্বয়ে মাঠে রাখতে নির্দেশনা
  • দ্বাদশ নির্বাচনের আগে রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচির প্রস্তুতির বার্তা
  • প্রেস ক্লাব থেকে শাহবাগ টার্গেট করে বিশেষ কর্মসূচি পালন করবে
  • শিক্ষার্থী ইস্যুকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পাশে থাকতে বিশেষ কমিটি
  • গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইসি নিয়ে ডকুমেন্টারি
  • জেলায় জেলায় সমাবেশ এবং সাময়িক ইস্যুতে মাঠে সক্রিয় থাকবে

পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়নে লন্ডন থেকে এসেছে তারেক রহমানের নির্দেশনা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যেসব পরিকল্পনা নিয়েছিল তার কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। দলের বড় একটি জবাব চেয়েছে কেন সেটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলটি যেসব পরিকল্পনা নিয়েছিল তা এবার দ্বাদশ নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করতে দলের হাইকমান্ড একমত হয়েছে।

বিশেষ করে চলমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। এই কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি মর্মে তা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে এখন থেকে সকল নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ইউপি নির্বাচনে বিএনপি আর অংশগ্রহণ করবে না।

দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, সমপ্রতি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে চলমান নির্বাচন কমিশনকে অযোগ্য বলে আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণ করা। সংগ্রহ করা হয়েছে ভোট ডাকাতিসহ রক্তাক্ত ভোটের চিত্র। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ ডকুমেন্টারি। উপস্থাপন করা হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এবং স্বচ্ছ একটি নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি এখন থেকে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের গুরুত্ব কমে যায়। ছোট দলগুলো নিজেদের মতো কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করে জনগণের ভাবমূর্তিকে নিজেদের ঘরে আনার চেষ্টা করছে। এতে করে বিএনপি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অবস্থান জনগণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই সকল জোটকে গুরুত্ব দিয়ে সাময়িক ইস্যু মোকাবিলা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া সমপ্রতি তৃণমূল ও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিএনপির কাছে জবাব চেয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তি, একাদশ সংসদ নির্বাচন ও সাময়িক জাতীয় ইস্যুতে বিএনপির ভূমিকা কী? এ নিয়ে চাপে পড়ে দলটি। তাই সাময়িক ইস্যুতে ছাত্র সংগঠনসহ দলটির তরুণ নেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে সক্রিয় অবস্থানেরও সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে লন্ডন থেকে। এছাড়া গত নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত হয় রাজধানীতে ঘোষণা ছাড়াই বৃহৎ অবস্থান কর্মসূচি পালন করার। এবার সেটিকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রেস ক্লাব থেকে শাহবাগ এটিকে টার্গেট করে এখন থেকেই জাতীয় নির্বাচনের আগে তার প্রস্তুতি নেয়া হবে।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগের রাতে হয়েছে’। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। আন্তর্জাতিকসহ দেশীয় গণমাধ্যমগুলোতেও ভোটের অনিয়মের খবর ও চিত্র প্রকাশ হয়েছে। খুন হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে। একই চিত্র ছিলো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটেও। ১৫৪টা আসনে ভোট হয়নি। যাকে কলঙ্ক হিসেবে বিবেচনা করে সাধারণ মানুষ। মাফিয়া স্টাইলের ভোটে বিএনপি আর নির্বাচনে যাবে না বলে আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে দলটি অতীতে বারবার অভিযোগ তুলে সে সময় এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সঙ্গে ছিলো দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট। এমনকি জাতীয় সংসদে না যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দলটি। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে অটল না থাকায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য দলীয় ফোরাম ও ফোরামের বাইরে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছিলেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বিএনপির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে জোটই ছেড়ে দেন। জামায়াত জোটে থাকলেও বিএনপির এসব সিদ্ধান্তে চরমভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলটি।

সে সময় থেকে জামায়াত চলে যায় একলা চলা নীতিতে। বিএনপির ঘোষিত নির্বাচনগুলোতে নেই জামায়াতের কোনো সমর্থন। জোটের নেতারাও দূরে আছেন। বিশেষ করে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও কর্নেল অলি আহমেদ। গত শনিবার অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে আগামী নির্বাচন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক থেকে বিশেষ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে বিএনপি মহাসচিব জানান। ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হল খুলে দেয়া, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতায় চেষ্টা চালানো, চলমান আন্দোলন আরও জোরদার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখা, বিভাগীয় সমাবেশ সফলের মাধ্যমে নেতা খুঁজে বের করা আগামী দিনের জন্য, সরকারকে চাপে রাখতে হলে রাজপথে সক্রিয়তাসহ ইত্যাদি বিভিন্ন ইস্যুতে অত্যন্ত সোচ্চারের নির্দেশ দেন তারেক রহমান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এখানে অন্তত সরকার একটা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করবে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার গ্রহণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদসহ পৌরসভা-উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে যা হয়েছে, তাতে আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদের অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি আমরা দলীয়ভাবে।’ ফখরুল বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই চরম প্রতিকূল অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সামপ্রতিক অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই নির্বাচন কমিশন কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করার যোগ্য নয়। বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই এই নির্বাচন কমিশনের কাজ। এমন ঘোষণার পর চিন্তার ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনও। ইউপি নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার ঘোষণা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সব সময় চায় প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। আমাদের কাছে যে সহযোগিতা চাইবেন, নির্বাচন কমিশন সে বিষয়ে সহযোগিতা দেবে। আমরা চাইবো বিএনপি নির্বাচনে আসুক।’  এ বিষয়ে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল আমার সংবাদকে বলেন, ‘এখন আর দেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। জনগণ ভোট দিতে চাইলেও এখন কেউ ভোট দিতে পারছে না। সরকারের নিয়ন্ত্রণে দিন শেষে একটা সংখ্যা দিয়ে ঘোষণা আসে। খুন, সংঘর্ষ ছাড়া একটি নির্বাচনও হচ্ছে না। তাই আমরা আর ভোটে যাবো না। ইতোমধ্যে আমাদের মহাসচিব তা ঘোষণা দিয়েছেন।  বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশে ভোট দেয়ার অধিকার হারিয়ে গেছে। ২০১৪ সালে কোনো ভোট হয়নি। ১৫৪ আসনে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য হয়েছে। ২০১৮ সালে অঙ্গীকার করেছিল এই সরকার সুষ্ঠু ভোটের। কিন্তু সরকার নির্বাচন করেছে মাফিয়া স্টাইলে। এই সরকার সুষ্ঠু ভোট দিতে ব্যর্থ। এই নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ। তাই বিএনপি আর নির্বাচন করবে না। বিএনপি জনগণের পক্ষে কথা বলতে এখন থেকে নতুনভাবে সোচ্চার থাকবে।

আমারসংবাদ/জেআই