Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রজন্মের ইতিহাসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

আহমেদ ইউসুফ, কুবি

মার্চ ২, ২০২১, ০৮:২০ পিএম


প্রজন্মের ইতিহাসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কালের আবর্তনে পৃথিবীর বহুরূপ পরিবর্তিত হয়। মানুষেরা ক্ষণজন্মা। প্রকৃতি এবং সময় একে অপরকে আবদ্ধ করে এগিয়ে চলে। যুগের সন্ধিক্ষণে সৃষ্টি করে শত সহস্র ইতিহাসের পাতা। সেসব লিখিত করে পরের প্রজন্মকে শৌর্যবীর্যের কথা জানান দিতেই মানুষেরা গড়ে তোলে অন্য ইতিহাস। কখনো সেটি অলিখিত রয়ে যায়। তবে তার জন্য আদর্শিক বিবেচনায় গড়ে উঠে শিক্ষাকেন্দ্র কিংবা প্রশিক্ষণশালা। আমাদের সভ্যতায় হয়তো বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। খিষ্ট্রীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে রাজা দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব কুমিল্লার ময়নামতির কোলে শালবন বিহার নির্মাণ করেন। যেটিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় নামে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়ে থাকেন। বিহারের কোল ঘেঁষে ২০০৬ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেটিও আজ যৌবনের রূপ-লাবণ্য দেখার জন্য আলোকসজ্জায় সেজেছে।

ছোট বেলায় স্কুলের বইয়ে পড়ানো হতো ১২ বছরে এক যুগ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পার করছে। তাহলে এ যুগ এবং সে যুগ দুটি যুগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি বহু কুলকিনারের হাতছানি পেয়েছে। জানা যায়, ২০০৬ সালের পর প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এখানকার প্রথম দিকের শিক্ষার্থীরা কাঁঠাল গাছের নিচে বসে ক্লাস করতেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করেছেন কখনো ঢাকায় কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আঙিনায়। এ কথাগুলো সবারই জানা। তবে সময়ের বিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত বহুমাত্রিক বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এখন আর সেই দিন নেই। নতুন নতুন প্রকল্প আসছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলে সেই স্বপ্নের আসায় বুক বাধতে শুরু করেছেন।  প্রতিষ্ঠাকালীন ৫০ একরের ক্যাম্পাসটি এখন নতুন প্রকল্পের আওতায় ২৫০ একরে পরিণত হয়েছে।

হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে শুরু করা ক্যাম্পাসটিতে এখন প্রাণচঞ্চল সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত ভিড় করেন। তারা আসর জমিয়ে রাখেন। ফুলের মধু আহরণে মৌমাছি যেমন গুনগুন শব্দে পুরো প্রাঙ্গণ মাতিয়ে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়টিও এখন অনেকাংশে শৌর্যবীর্যের জানান দিচ্ছে। মোট ১৯টি বিভাগে প্রায় ২৫০ জনের বেশি শিক্ষক গবেষণায় এবং নিয়মিত পাঠদানে অবদান রাখছেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে নতুন আবিষ্কার, মেধা তালিকায় স্থান, শিক্ষার জন্য বহির্গমন, প্রতিযোগিতায় ঈর্ষণীয় স্থান দখল করে জাতির সম্মুখে নিজেদের প্রমাণ করছেন। সেকালের কুবিতে পাহাড়ি রাস্তায় সন্ধ্যা নামার আগে মানুষেরা চলে যেতেন। একালে কত রাত জমিয়ে শিক্ষার্থীরা গানের আসর বসান।

এখন এখানে নিয়মিত পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। আবার শরতের ঈষৎ বাতাসে সাদা কাশফুলের দল তার প্রেমিকদের বিমোহিত করে। তখন পড়ন্ত বিকেলে বড় মাঠ প্রান্তরে নজরুল কিংবা রবী ঠাকুরের শিষ্যদল কবিতা পাঠ করেন সমস্বরে। একালের কুবিতে এই তো গেলো বছরের শুরুতে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে রাষ্ট্রপতির আগমনে আয়োজিত হয়েছিল শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের প্রথম সমাবর্তন। এদিকে প্রথম থেকে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটে ধীরে ধীরে নির্মিত হয় আবাসিক হলসমূহ। মেয়েদের জন্য একটি চলমান এবং একটি নির্মাণাধীন, পাশাপাশি ছেলেদের জন্য মোট তিনটি হল চলমান রয়েছে এখানে। মুক্ত চর্চার জন্য রয়েছে মুক্তমঞ্চ। রয়েছে শহীদ মিনার। কিন্তু তবুও বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে থাকে। বিশেষত ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি। প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রাজনীতির দাবার ঘুঁটি তখন স্বল্প হলেও ধীরে ধীওে তা বিস্তার হয়েছে। সমসাময়িক শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে যেটি আরেকবার প্রমাণিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টি আমাদের। এ বাক্যটি যদি সংশ্লিষ্ট সকলে ধারণ করেন তাহলে কোনো সমস্যাই থাকে না। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সকলে যদি সমন্বিত প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করে, তাহলে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে বেশি সময় লাগবে না। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটুকু কাজ করে যেতে চাই। শুধু সকলের ঐকান্তিক কর্মযজ্ঞ সেকালের কুবিকে আধুনিকতার সাথে সামঞ্জস্যতা এনে দিতে পারে।’ দীর্ঘ করোনা দুর্যোগের পর ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়টি সকল কার্যক্রম বেগবান করে চলছে। বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কাজ করছে। বড় প্রকল্পে গতি আসছে। সব হচ্ছে, তবে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে নিতে প্রাণবন্ত পরিবেশ একালের কুবি বড় আকুতি করে সকলের কাছে চাইছে।

আমারসংবাদ/জেআই