Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অবদান রাখছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ৩, ২০২১, ০৮:৫৫ পিএম


বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অবদান রাখছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) দেশের সর্ববৃহৎ বহুবিধ ফসল গবেষণা প্রতিষ্ঠান। দেশের সার্বিক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন, কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ওই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রকার দানা জাতীয় শস্য, কন্দাল ফসল, ডাল, তেল ফসল, সবজি, ফল, ফুলসহ প্রায় ২১১টি ফসলের ওপর গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

এ প্রতিষ্ঠান এসব ফসলের উচ্চ ফলনশীল উন্নত জাত এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন, ফসল ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাসহ কৃষি যন্ত্রপাতি, ফসল সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গবেষণা করে থাকে। উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তিসমূহ সম্প্রসারণ কর্মী, কৃষি সংশ্লিষ্ট এনজিওকর্মী ও কৃষকের কাছে হস্তান্তরের জন্য বারি কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে থাকে।

এ প্রতিষ্ঠানের কৃষি পরিবেশ অঞ্চলভিত্তিক ৮টি আঞ্চলিক ও ৩০টি উপকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া বারির গবেষণা কার্যক্রম ৬টি বিশেষায়িত ফসলভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র যেমন, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (জয়দেবপুর, গাজীপুর), তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র (জয়দেবপুর, গাজীপুর), কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র (জয়দেবপুর, গাজীপুর), উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ কেন্দ্র (জয়দেবপুর, গাজীপুর), ডাল গবেষণা কেন্দ্র (ঈশ্বরদী, পাবনা) ও মসলা গবেষণা কেন্দ্র (শিবগঞ্জ, বগুড়া) এবং ১৬টি বিভিন্ন বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ মাঠপর্যায়ে কৃষকের সরাসরি মূল্যায়নের জন্য সরেজমিন গবেষণা বিভাগের আওতায় ১৩টি খামার গবেষণা পদ্ধতি ও উন্নয়ন এলাকা এবং ৮৫টি বহুস্থানিক গবেষণা এলাকা দেশব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে।

ইতিহাস : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইতিহাস শত বছরের পুরনো। ১৯০৮ সালে ১৬১.২০ হেক্টর জমির উপর ঢাকা ফার্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা ফার্মের প্রতিষ্ঠা ছিল এ দেশে কৃষিক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য উত্তোরণ। কিন্তু ১৯৬২ সালে তৎকালীন সরকার কর্তৃক সেকেন্ড কেপিটাল প্রতিষ্ঠার জন্য ঢাকা ফার্মের (বর্তমান শেরে বাংলা নগর) জমি অধিগ্রহণ করা হলে কৃষি গবেষণার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।  যদিও  পরবর্তীতে  ১৯৬৬  সালে  ঢাকা  থেকে  ৩৫  কিলোমিটার উত্তরে জয়দেরপুরে ২৬০ হেক্টর জমিতে ঢাকা ফার্ম স্থানান্তরিত হয়।

এরপর কৃষি বিভাগের নানা পরিবর্তন, পরিবর্ধন সাধিত হলেও তা দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে ও আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়। এ ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল দক্ষ জনশক্তি ও প্রয়োজনীয় স্থাপনার অভাব এবং গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলে অন্য সেক্টরের ন্যায় কৃষি সেক্টরেও উন্নতির অমিত সম্ভাবনা দেখা দেয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ প্রতিষ্ঠানটি সর্বতোভাবে নিয়োজিত রয়েছে।

বারির ম্যান্ডেট : ধান, পাট, চা, তুলা ও চিনি জাতীয় ফসল ব্যতীত অন্য সকল ফসলের (দানাদার ফসল, কন্দাল ফসল, তৈলবীজ ফসল, ডাল ফসল, ফুল, ফল, সবজি ফসল, মসলা ফসল ইত্যাদি) গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা।

বারির কার্যাবলি :

  • গবেষণার বিষয়াবলির বিস্তৃত রূপরেখা প্রণয়ন ও অনুমোদন।
  • ইনস্টিটিউটের ‘ম্যান্ডেটে’ উল্লেখিত ফসলসমূহের নতুন জাত উদ্ভাবন এবং বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা, মানসম্পন্ন উৎপাদন প্রযুক্তির মাধ্যমে সার্বিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির স্থিতিশীল ও উৎপাদনশীল কৃষি গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
  • কৃষিকাজ দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করার জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও তথ্যাবলি সরবরাহ করা।
  • কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার উপর গবেষণা পরিচালনার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গবেষণা কেন্দ্র, উপ-কেন্দ্র, প্রকল্প এলাকা ও খামার স্থাপন করা।
  • ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন ও তার পরিচর্যার উপর পরীক্ষণ ও প্রদর্শনী পরিচালনা করা।
  • ফসল গবেষণা ও ইনস্টিটিউটের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বার্ষিক প্রতিবেদন, কৃষি পুস্তিকা, মনোগ্রাম, সংবাদ সাময়িকী ও অন্য বইপত্র প্রকাশ করা।
  • ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশল সম্পর্কে গবেষক, সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
  • স্নাতকোত্তর গবেষণার সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা।
  • বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্বাচিত সমস্যাবলি সম্পর্কে মতবিনিময় এবং কৃষি ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক উদ্ভাবনের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করা।
  • জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবিলায় গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করা।
  • কৃষিতে জীব প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ ও পোকা-মাকড় প্রতিরোধী, খরা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও তাপসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ সহিঞ্চু ফসলের জাত ও অন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
  • জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা।
  • কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, পুষ্টি, সাপ্লাই এবং ভ্যালুচেইন, আর্থসামাজিক উন্নয়নের উপর গবেষণা পরিচালনা করা।
  • ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বিভিন্ন ফসলের নতুন জাতের প্রজনন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা।
  • কৃষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ কর।
  • সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধানের আলোকে কার্যক্রম গ্রহণ করা।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে বারির সম্পর্ক : গবেষণা ও উন্নয়নের স্বার্থে বিএআরআই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিএআরআইয়ের সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে তা হলো— সিমিট (মেক্সিকো), আইআইটিএ (নাইজেরিয়া), ইকার্ডা (সিরিয়া), ইকরিস্যাট (ভারত), সিআইপি (পেরু), আইসিএআর (ভারত), কিমা (অস্ট্রেলিয়া) ইত্যাদি।

অর্থ যোগানদানকারী সংস্থাসমূহ : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিংহভাগ ব্যয়ভার বহন করে থাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এ ছাড়া প্রকল্পে সাহায্য ও অনুদান হিসেবে বিভিন্ন দাতা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত হয় ইনস্টিটিউটের যাবতীয় কর্মকাণ্ড। সাহায্যকারী দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে— যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি), বিশ্বব্যাংক (ডব্লিউবি), জাপান সরকার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফোর্ড ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র (আইডিআরসি), কানাডীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (সিআইডিএ), বিশ্ব খাদ্য কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং আপিএম-সিআরএসপি-এবিএসপি-২ (যুক্তরাষ্ট্র)।

পুরস্কার-সম্মাননা-পদক লাভ : দেশের কৃষি গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ পদক স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়াও বারি ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ড মেডেল, ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। এসব পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট মেডেল, বেগম জেবুননেসা এবং কাজী মাহাবুবুল্লাহ কল্যাণ ট্রাস্ট গোল্ড মেডেল, ওমেনস সাইনটিস্ট অ্যাসোসিয়েশন গোল্ড মেডেল, স্পেশাল প্রাইজ, দ্য রোটারো হাশিমতো এশিয়া প্যাসিফিক ফোরাম ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএফইডি) অ্যাওয়ার্ড ফর গুড প্রাকটিস, দ্য রিফ্লেকটর অ্যাওয়ার্ড, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কৃষি পদক, কেআইবি কৃষি পদক, ব্র্যাক ম্যান্থন ডিজিটাল ইনোভেশন পদক ইত্যাদি।

উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তি : বারির বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসলের ৫৮৫টি জাত এবং ৫৫১টি উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল আলুর জাত কৃষকপর্যায়ে চাষাবাদের জন্য গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ আলুচাষে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। নিজস্ব সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ১১টি জাত, সিআইপি জার্মপ্লাজম থেকে ৬টি জাত, বিদেশি জাত মূল্যায়নের মাধ্যমে ৪৮টি জাত এবং ২টি টিপিএস জাতসহ মোট ৯১টি আলুর জাত কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে এ পর্যন্ত বারি থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও বারি এ পর্যন্ত ১৬টি মিষ্টি আলুর জাত অবমুক্ত করেছে, এদের মধ্যে কয়েকটি উচ্চ ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। বারির কন্দাল ফসল কেন্দ্র হতে উদ্ভাবিত উন্নত জাতেসমূহের মধ্যে রয়েছে গোল আলু-ডায়ামন্ট, গ্রানোলা, আলট্রা, ডুরা, প্রভেন্টো, এসটেরিঙ, লেডিরোসেটা, কারেজ, এলগার, স্টেফি, বারি আলু-৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১ ; বারি আলু-৭২ খরা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চাষের উপযোগী; বারি মিষ্টি আলু-১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬; কচু-মুখীকচু বিলাসী, বারি মুখীকচু-২; পানি কচু-লতিরাজ, বারি পানিকচু-২, ৩, ৪, ৫, ৬ এবং বারি ওলকচু-১, ২। বারি বাংলাদেশে এরোপনিক্স পদ্ধতিতে মানসম্পন্ন বীজ আলু (মিনি-টিউবার) উৎপাদিত হচ্ছে। ভাইরাস ও অন্য রোগবালাই মুক্ত মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন করতে আধুনিক ও জীব প্রযুক্তির বিকল্প নেই। তাই আধুনিক ও জীব প্রযুক্তির (টিস্যু কালচার) মাধ্যমে উন্নতমানের বীজ আলু উৎপাদন করে এদেশের বীজ আলুর আমদানি নির্ভরতা যেমন কমিয়ে আনা সম্ভব, তেমনি দেশে উদ্ভাবিত উন্নত জাতসমূহের বীজ দ্রুত কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াও সম্ভব।

বাংলাদেশে ৯০টির অধিক বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়ে থাকে। বারি উদ্ভাবিত সবজির উন্নত জাতসমূহ হচ্ছে বেগুন-উত্তরা, কাজলা, নয়নতারা, বারি বেগুন-৬, ৮, ৯, ১০; বারি হাইব্রিড বেগুন-২ (তারাপুরি), বারি হাইব্রিড বেগুন-৩, বারি হাইব্রিড বেগুন-৪; বারি বিটি বেগুন-১, ২, ৩, ৪; টমেটো-বারি টমেটো-১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২১ (ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট প্রতিরোধী), বারি হাইব্রিড টমেটো- ৫, ৬, ৭, ৯ (শীতকালীন); বারি হাইব্রিড টমেটো-৪, ৮, ১০ (গ্রীষ্মকালীন); বারি ফুলকপি-২; বারি বাধাকপি- অগ্রদূত; বারি বাটিশাক-১; বারি চিনাশাক-১; মুলা-তাসাকিসান, পিংকি, বারি মুলা-৩, ৪; বারি লাউ-৩ (শীতকালীন), বারি লাউ-৪ (গ্রীষ্মকালীন); বারি শিম-১, ৪, ৫ (খাটো), ৬, ৭, ৮, ৯, ১০; বারি ঝাড়শিম-১, ২, ৩; বারি ঝিঙ্গা-১, ২; বারি চিচিঙ্গা-১; বারি পটোল-১, ২; বারি করলা-২, ৪; বারি হাইব্রিড করলা-২, ৩; বারি মটরশুটি-১, ২, ৩; বারি বরবটি-১, বারি ঢেঁড়স-২; বারি লালশাক-১; বারি সবুজ ডাঁটাশাক-১, বারি ডাঁটা-১ (লাবণী); বারি পুঁইশাক-১, ২; বারি লেটুস-১; বারি মিষ্টি কুমড়া-১, ২, বারি হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া-২, ৩ ; বারি গীমাকলমি- ১; বারি মিষ্টি মরিচ-১; ইত্যাদি।

বারি উদ্ভাবিত ফলের উন্নত জাতসমূহ হচ্ছে বারি আম-১, ২, ৩, ৪ (হাইব্রিড), ৮, ৯, ১০, ১১(বারমাসি); বারি কাঁঠাল-১, ২ (অমৌসুমী), ৩; বারি কলা-১, ৩, ৪, ৫(কাঁচকলা); বারি লিচু-২, ৩, ৪, ৫; বারি পেয়ারা-২ (বছরব্যাপী), বারি পেয়ারা-৪ (বীজবিহীন); বারি লেবু-২, ৩, ৪ (বন্যা সহনশীল); বারি বাতাবি লেবু-৩, ৪, ৫, ৬; বারি নারিকেল-১, ২; বারি আমড়া-১, ২; বারি আমলকি-১; বারি বিলাতি গাব-১, বারি সফেদা-২, ৩; বারি কুল-১, ৩, ৪, ৫; বারি আঁশফল-২; বারি কামরাঙ্গা-১, ২; বারি তেঁতুল-১; বারি রাম্বুতান-১; বারি জামরুল-১, ২, ৩; বারি মিষ্টি লেবু-১; বারি কাগজি লেবু-১;  বারি কমলা-১, ২, ৩; বারি মাল্টা-১, ২; বারি স্টবেরি-১, ২, ৩; বারি ড্রাগন ফল-১; বারি জলপাই-১; বারি বেল-১; বারি কদবেল-১; বারি অ্যাভোকেডো-১ ইত্যাদি অর্থকরী ও পুষ্টিকর ফলের আবাদ করুন।

বারি উদ্ভাবিত ডালের উন্নত জাতসমূহ হচ্ছে বারি ছোলা-৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০; বারি মসুর- ৫, ৬, ৭, ৮, ৯; বারি মুগ- ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮; বারি মাস-১, ২, ৩, ৪; বারি খেসারি-৩, ৪, ৫; বারি মটর-১, ২, ৩; বারি ফেলন-১, ২ ইত্যাদি।

উচ্চ ফলনশীল তৈলবীজের জাতসমূহ হচ্ছে বারি সরিষা ১১, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮; বারি চীনা বাদাম-৭, ৮, ৯, ১০; সয়াবিনের সোহাগ, বারি সয়াবিন-৫, ৬; বারি তিল-২, ৩, ৪; এবং বারি সূর্যমুখী-২, ৩ ছাড়াও গর্জন তিল, তিসি ও কুসুম ফুল ইত্যাদি উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহ চাষ করে ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

বারি উদ্ভাবিত মসলার উন্নত জাতসমূহ: বারি মরিচ-১, ২, ৩, ৪; বারি পেঁয়াজ-১, ৪, ৬ (শীতকালীন); বারি পেঁয়াজ-২, ৩,  ৫ (গ্রীষ্মকালীন), বারি পাতা পেঁয়াজ-১; বারি রসুন- ২, ৩, ৪; বারি হলুদ-২, ৩, ৪, ৫; বারি আদা-১, ২, ৩; বারি কালোজিরা-১;  বারি ধনিয়া-১, ২; বারি বিলাতি ধনিয়া-১, বারি মেথি-১, ২; গোলমরিচ-জৈন্তা; বারি পান-১, ২, ৩; বারি আলুবোখারা-১, বারি পাতা পেঁয়াজ-১, বারি তেজপাতা-১, বারি একাঙ্গি-১, বারি চিভস-১, বারি দারুচিনি-১; বারি পুদিনা-১, ২; বারি ফিরিঙ্গি-১ ইত্যাদি।

বারি উদ্ভাবিত ঊন্নত জাতের ফুল ও ফসলসমূহ হচ্ছে বারি গ্লাডিওলাস-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬; বারি অর্কিড-১, বারি জারবেরা-১, ২; বারি চন্দ্রমল্লিকা-১, ২, ৩, ৪ ; বারি অ্যান্থরিয়াম-১; বারি ডালিয়া-১; বারি লিলি-১; বারি এলপিনিয়া-১, বারি গাঁদা-১ এবং বারি রজনীগন্ধ্যা-১। এসব উন্নত জাতের ফুলচাষ যেমন সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

মাঠে ব্যবহার উপযোগী বারি উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতিসমূহের মধ্যে রয়েছে বারি বীজ বপন যন্ত্র, বারি বেড প্লান্টার, বারি আলু রোপণ যন্ত্র, বারি জিরো টিলেজ প্লান্টার, বারি শুকনা জমি নিড়ানি যন্ত্র, বারি গুটি ইউরিয়া গ্রয়োগ যন্ত্র, বারি আলু উত্তোলন যন্ত্র, বারি স্ব-চালিত রিপার, বারি শক্তি-চালিত শস্য মাড়াই যন্ত্র, বারি শক্তি-চালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র, বারি আলু গ্রেডিং যন্ত্র, বারি ফল শোধন যন্ত্র, এবং বারি সবজি ধৌতকরণ যন্ত্র।

বারি উদ্ভাবিত উন্নত গম ফসলের জাতসমূহ হলো— বারি গম ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ইত্যাদি। এ জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী ও তাপসহিষ্ণু। বারি গম ২৫ জাতটি লবণাক্ততা সহিষ্ণু হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চাষের উপযোগী। এ ছাড়া বারি ট্রিটিক্যালি-১, ২ জাত থেকে একই সঙ্গে সবুজ ঘাস ও দানা পাওয়া যায়।

বারি উদ্ভাবিত ভুট্টার উন্নত হাইব্রিড জাতসমূহ হচ্ছে বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ (কিউপিএম), ৭, ৮, ৯, ১৪, ১৫, ১৬। এ ছাড়াও হাই ভ্যালু ভুট্টা ফসলের জাত : খৈ ভুট্টা, বারি মিষ্টি ভুট্টা-১। বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১২ ও ১৩ খরা সহনশীল ও কম সেচে উৎপাদনক্ষম সাদা দানা বিশিষ্ট বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য উপযোগী।

অপ্রচলিত গৌণ দানাদার ফসল বারি কাউন ২ ও ৩ (খাটো আকৃতির) এবং চিনা-১ কম ঊর্বর জমি ও চরাঞ্চলে চাষ করা যায়। এ ছাড়া খোসাযুক্ত বারি বার্লি-৪ (মাঝারি লবণাক্ততা সহিষ্ণু), খোসামুক্ত বারি বার্লি-৬, ৭, ৮ (মাঝারি লবণাক্ততা সহিষ্ণু) এবং বারি বার্লি-৯ (খরা সহিষ্ণু)। এ ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানটি ভাসমান কৃষি, সামুদ্রিক শৈবাল এবং পাহাড়ি কৃষি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বিগত চার দশক ধরে দেশের কৃষির উন্নয়নে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ফলশ্রুতিতে ক্রমাগতভাবে উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন ফসলের উচ্চফলনশীল জাত ও উন্নত উৎপাদন বিষয়ক প্রযুক্তি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী, গবেষক, ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তথ্য সহযোগিতার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে উদ্ভাবিত জাত এবং প্রযুক্তির তথ্য বিষয়ে নিয়মিত বুকলেট, লিফলেট, ম্যানুয়াল, বার্ষিক প্রতিবেদন, নিউজলেটার, উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তি (প্রতি বছর প্রকাশিত), কৃষি প্রযুক্তি হাত বইসহ (উদ্ভাবিত জাত এবং প্রযুক্তির তথ্যবহুল সংকলন) বিভিন্ন প্রকাশনা করে থাকে। এ ছাড়া বারির প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ উইং এবং সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, এনজিও ও অন্য উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে সমপ্রসারণ কাজ করা হচ্ছে। প্রযুক্তি হস্তান্তরে দেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে অবস্থিত খামার পদ্ধতি গবেষণা ও উন্নয়ন এলাকা এবং বহুস্থানিক গবেষণা এলাকা এবং বারি প্রযুক্তি পল্লী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ সমপ্রসারণ কর হয়। বারি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়াও বারি তার গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির সাথে যুগপৎভাবে সহায়তা প্রদান ও গ্রহণ করে আসছে।

আমারসংবাদ/জেআই