Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আ.লীগের ভাবনায় বিএনপি

রফিকুল ইসলাম

মার্চ ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


আ.লীগের ভাবনায় বিএনপি
  • ইউপিতে বিদ্রোহীতে কঠোর থাকবে কেন্দ্র
  • কঠোর নজরদারিতে থাকবেন এমপি-মন্ত্রীরা
  • নির্বাচন বর্জনের ধারায় থাকা গণতন্ত্রের জন্য বড় বাধা -কাজী জাফর উল্লাহ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
  • রাজনৈতিক নয়া কৌশলেই বিএনপির নির্বাচন বর্জন -আবদুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বিএনপি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়— প্রশ্ন তুলে নির্বাচন বর্জন করেছে তারা। এদিকে বিএনপির নির্বাচন বর্জন রাজনৈতিক নয়া কৌশল মনে করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা। তারা বলছেন, পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ভরাডুবি হওয়ায় রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে বিএনপি। তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত কী কৌশল অবলম্বন করবে, সে বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা। যা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সভানেত্রীর কাছে তুলে ধরবেন তারা। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র মতে, আগামী ১১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে শুরু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপে ৩২৩টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর ধারাবাহিকভাবে কয়েক ধাপে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ করবেন তারা। এদিকে দশম জাতীয় সংসদ ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদের মতোই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। মূলত তারা চলমান পৌরসভা নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি দলটির কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের। তারা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। বিশেষ করে বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচার-প্রাচরণায় বাধা দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া, ক্ষমতাসীনদের কেন্দ্র দখল ও সাধারণ ভোটারদের ধানের শীষে ভোট দিতে বাধা দেয়াসহ চলমান পৌরসভা নির্বাচনে বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছে তারা। ফলে আসন্ন  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। এর আগেও এমন অভিযোগে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে দলটি।

আ.লীগ সূত্রে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির নির্বাচন বর্জন রাজনৈতিক নয়া কৌশল দেখছে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা বলছেন, চলমান পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। মোট পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত ২৩০টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি বিজয়ী হয়েছে মাত্র ১১টিতে। যা বিগত পৌরসভা নির্বাচনের তুলনায় অনেক কম। দলীয় প্রতীকের এমন পরাজয় থেকে বেরিয়ে আসতে চায় বিএনপি। ফলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিচ্ছে না তারা। দলটির নেতাদের দাবি, গত একযুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ভোট ও মাঠের রাজনীতিতে সফল আওয়ামী লীগ। দলটির নেতৃত্বেই  উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পাশাপাশি  বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা হয়েছে গণতন্ত্র। ফলে দেশের মানুষের পূর্ণ আস্থা নৌকায়। ফলে ভোটের মাঠে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নজিরবিহীন পরাজয় হয়েছে। তবে যেকোনো রাজনৈতিক দলের জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত।  

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না— এটা ভুল কথা। বিএনপি হয়তো দলীয় প্রতীকে অংশ নিচ্ছে না। কিন্তু তারা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবে। এটাই তাদের নির্বাচনি কৌশল। ভোটের মাঠে ধানের শীষের পরাজয় ঠেকাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।’ এদিকে বিএনপির নির্বাচন বর্জন ঘোষণার পরও ইউনিয়ন পরিষদেও বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের ইন্ধনদাতাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা। তারা বলছেন, ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী, প্রভাবশালী ও ক্ষমতালোভীরা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে দলটি নেতাদের দাবি, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না এলে ভোটগ্রহণ অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত করতে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে কিছুটা উন্মুক্ত করবে আওয়ামী লীগ। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কর্মকৌশলের ওপর নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। যা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে তুলে ধরবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান আরও বলেন, ‘বিগত দিনে যারাই নৌকার বিরোধিতা করেছে আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কেউ নৌকার বিরোধিতা করলে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমপিরাও যুক্ত থাকলে পার পাবেন না। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’ একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে অন্যটি বর্জন করা দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা উল্লেখ্য করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেশের ছোট-বড় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশের গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপপায়। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল যদি একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভোটের মাঠে হেরে গিয়ে, অন্য নির্বাচন বর্জন করে। তাহলে বুঝতে হবে, সেই দলগুলোর মধ্যে সঠিক নেতৃত্বের অভাব রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠে জয়-পরাজয় থাকবে। জনগণ আমায় ভোট নাও দিতে পারে। কিন্তু নির্বাচনে হেরেছি এ জন্য আর অংশগ্রহণ করা যাবে না; নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। বিষয়টি তেমন নয়। গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সকল রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। নইলে গণতন্ত্র ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়।’

আমারসংবাদ/জেআই