Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

অর্থপাচার মামলার নিষ্পত্তি বেড়েছে

মার্চ ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


অর্থপাচার মামলার নিষ্পত্তি বেড়েছে
  • উচ্চ আদালতে সাজা বাতিল হওয়া পুরনো মামলা ফের সচল হচ্ছে
  • এক বেঞ্চেই ছয় মাসে ছয় শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি জট খুলেছে এক হাজার মামলার
  • অর্থপাচারে যাবজ্জীবন সাজা বিধান রাখা দরকার -মত সংশ্লিষ্টদের

গত এক দশকে বিদেশে অর্থপাচার ও দুর্নীতি বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের তৎপরতাও। দুদকে আসা বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে নিয়মিত। অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কেউ কেউ আবার গ্রেপ্তার এড়াতে বিদেশেও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো সিকিউরিটি মানি নেই। যারা লোন নিচ্ছে তাদের ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে।

সম্প্রতি দুর্নীতি ও অর্থপাচার মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করছে হাইকোর্ট। দুর্নীতি রুখতে দিচ্ছেন নানা নির্দেশনাও।

এদিকে অতীতে বিচারিক আদালতের দেয়া যেসব মামলার সাজা উচ্চ আদালতে বাতিল হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটি নিয়ে অ্যাটর্নি অফিস ও দুদক সমন্বয় করে আলাদা আলাদাভাবে প্রতিবেদন দিচ্ছে হাইকোর্টে। ফলে ফের পুরনো মামলা সচল হচ্ছে। বিচারপ্রক্রিয়া শেষে সাজা হচ্ছে অপরাধীদের।  ইতোমধ্যে বেশ কিছু মামলার পুনর্বিচার চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আবার অর্থপাচারের মামলায় এত লঘু দণ্ড দিয়ে দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধ হবে না বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে পাচারকারীদের যাবজ্জীবন সাজা চেয়েছেন। অর্থপাচারের মামলার বিচারের জন্য বিদ্যমান আইনে সাজার অপ্রতুলতার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, আইনে (মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২) সাজার পরিমাণ অনেক কম। এ ধরনের গুরুতর অপরাধের মামলার বিচারের জন্য আইনে যাবজ্জীবন সাজার বিধান রাখা দরকার ছিলো। চট্টগ্রামের বিসমিল্লাহ গ্রুপের অর্থপাচারের মামলার এক আসামির জামিন শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩ ফেব্রুয়ারি এই মন্তব্য করেন। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে হওয়া পুরনো মামলাগুলো সচল হচ্ছে।

বয়সের সঠিক তথ্য গোপন করে চাকরি নেয়ার অভিযোগ ছিলো স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের (সিএমএমইউ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে। এ কারণে তার নামে মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু মামলাটি বাতিল চেয়ে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে আবেদন জানান তোজাম্মেল। এরপর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আটকে থাকা মামলার জট খোলে এ বছরের ২১ জানুয়ারি। দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের মামলা শুনানির জন্য প্রশাসন পৃথক বেঞ্চ গঠন করায় নতুন-পুরান মিলিয়ে এমন হাজারো মামলার জট খুলতে শুরু করেছে হাইকোর্ট বিভাগের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তার পদে যোগ দেয়ার পর দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২৪ জুন গঠন করেন একটি পৃথক হাইকোর্ট বেঞ্চ। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চটিতে আরও আছেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

হাইকোর্টের এই বেঞ্চটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় অর্থপাচার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন সংক্রান্ত সব ধরনের ফৌজদারি ও রিট মোশন, রিভিশন মামলা, আপিল মঞ্জুরির আবেদন এবং এসব মামলায় রুল, আবেদন গ্রহণ ও শুনানির জন্য। আদালত সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি বাদ দিয়ে দুর্নীতির মামলা শুনতে পৃথক এই বেঞ্চটি এরই মধ্যে তাদের কার্যক্রমের প্রায় ছয় মাস সময় অতিক্রম করেছে। আর এই ছয় মাসে ৬০০ বা তার বেশি মামলা নিষ্পত্তি করেছে এই বেঞ্চ। হাইকোর্টে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এটি একটি নজির বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বেঞ্চটি গঠনের শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য নিযুক্ত আছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি  বলেন, ‘আমাদের এই হাইকোর্ট বেঞ্চে দুদক ও অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়ে থাকে। দুর্নীতি মামলায় জামিন, বিচারিক আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে অনেকেই ফৌজদারি রিভিশন, দুদকের কোনো নোটিসের বৈধতা প্রশ্নে রিট বা আপিল মামলার এ কোর্টে শুনানি হয়। ফলে যুগ যুগ ধরে আটকে থাকা মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে বেঞ্চটি কাজ করছে। রাষ্ট্রপক্ষের পাশাপাশি দুদক আইনজীবীরাও এ কোর্টে মামলার শুনানিতে অংশ নেন। এছাড়া, প্রধান বিচারপতি বিশেষ কোনো মামলা পাঠালে সেটার ওপরও শুনানি হয় এই বেঞ্চে।’

এদিকে, সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তির পরিসংখ্যান নিয়ে সন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতেই বেঞ্চটি গঠন করা হয়েছিল। নিয়মিত এর ভালো ফলাফলও আমরা পাচ্ছি।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্যানেল আইনজীবীদের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার  সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তিতে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চটি কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে দুর্নীতির মামলা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় মাত্র একটি বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তিতে চাপ বেশি পড়ছে। বিচারপতিরা নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবুও ফৌজদারি আপিল, রুল ও বিবিধ মামলার শুনানি করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই আরও  কয়েকটি বেঞ্চ গঠন করা হলে এসব মামলা নিষ্পত্তির পথ সুগম হবে বলে মনে করছি।’

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির মামলা নিষ্পত্তিতে আরও বেঞ্চ গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আমাদের কাছে এখনো কেউ আবেদন করেননি। এ ধরনের আবেদন এলে প্রশাসন অবশ্যই তা ভেবে দেখবে।’

আমারসংবাদ/জেআই