Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

আইজিপির বক্তব্যের পর অ্যাকশনে মন্ত্রী!

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

মার্চ ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


আইজিপির বক্তব্যের পর অ্যাকশনে মন্ত্রী!
  • গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নামের একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের টিজার প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনিই বলেছিলেন ‘সুন্দরবনে বিষ (কীটনাশক) দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে।’ এর ফলে সুন্দরবন মৎস্যহীন হওয়ার আশঙ্কার কথাও উচ্চারণ করেছিলেন। পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার কণ্ঠে এমন উচ্চারণের পর বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে সবাইকে

প্রায় ৪০০ বছর জলদস্যুদের ভয়াবহ উৎপাত ছিলো সুন্দরবনে। সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছিল অপহরণ, হত্যা আর দস্যুতায়। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সেখানে ছিলো বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনকে ভীতিকর সেই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সম্মুখ থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখানকার মাওয়ালি, বাওয়ালি থেকে শুরু করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হাতি-হরিণসহ বন্যপ্রাণীদেরও নিরাপদ এক আবাস উপহার দিয়েছেন পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ। ফলে স্বভাবতই বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি-সুন্দরবন নিয়ে একটি বাড়তি আবেগ রয়েছে তার। হূদয়ের গভীর সেই ভালোবাসা থেকেই সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ ও জলজ প্রাণী রক্ষায় তিনি গুরুত্বারোপ করেছিলেন। 

‘র‌্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’-এর প্রযোজনায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নামের একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের টিজার প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনিই বলেছিলেন ‘সুন্দরবনে বিষ (কীটনাশক) দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে।’ এর ফলে সুন্দরবন মৎস্যহীন হওয়ার আশঙ্কার কথাও উচ্চারণ করেছিলেন। পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার কণ্ঠে এমন উচ্চারণের পর বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে সবাইকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলে। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের এমন বক্তব্যের আটদিনের মাথায় সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

গত বুধবার দুপুরে রাজধনীর আগারগাঁও বনভবন হৈমন্তী মিলনায়তনে ‘বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন সংরক্ষকদের এই নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী। এবারের দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো ‘মানুষ ও পৃথিবী বাঁচাতে : বন ও জীবিকা’। সেদিন নিজের বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধের গুরুত্ব তুলে ধরে স্পেনের ভূমধ্যসাগর উপকূলের মৎস্যহীন হয়ে যাওয়ার উদাহরণও টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘আমি একবার স্পেনে গিয়ে ভূমধ্যসাগর উপকূলে বসেছি। স্পেনের একটি বিখ্যাত খাবার আছে, যেটির নাম পাইয়া। এটি সামুদ্রিক ফিস ও চিকেন দিয়ে তৈরি হয়। আমি সমুদ্রের পাশে বসে আই আসকড ফর পাইয়া। ওরা আমাকে চিকেন পাইয়া অফার করলো। কিন্তু আমি সামুদ্রিক মাছের পাইয়া খাবো। ওরা বললো, ওভার ফিশিংয়ের মাধ্যমে ওই অঞ্চলকে মৎস্যমুক্ত করা হয়েছে।’

পুলিশপ্রধান ড. বেনজীর আহমেদের এই বক্তব্যের পর রাজধানীর আগারগাঁও বনভবন হৈমন্তী মিলনায়তনে ‘বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভাতেও গুরুত্বের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার বিষয়টি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারও এ ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে নিজের বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। কেন বিষ দিয়ে মাছ ধরা হবে? সরকারি বাহিনী ও বনবিভাগের কর্মকর্তারা থাকতেও বিষ দিয়ে মাছ ধরা হবে। সে মাছ আবার মানুষ খাবে। তাহলে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার কথা আমি আর শুনতে চাই না। বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে।’ সুন্দরবন-সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সুন্দরবনের খাল ও নদীতে নজরদারির অভাবেই মূলত বিষ (কীটনাশক) দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছে না। জেলে নামধারী সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা দাদনদাতা ও আড়তদারদের ছত্রচ্ছায়ায় অবৈধভাবে কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। এর ফলে মৎস্যসম্পদ ও জলজ প্রাণী এখন ধ্বংসের প্রান্তসীমায় রয়েছে।’

আমারসংবাদ/জেআই