Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বজন হারিয়েছে সাড়ে ৮ হাজার পরিবার

মাহমুদুল হাসান

মার্চ ৭, ২০২১, ০৮:২৫ পিএম


স্বজন হারিয়েছে সাড়ে ৮ হাজার পরিবার

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের এক বছর। গেলো বছর আট মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। সেদিন ইতালিফেরত প্রবাসী ও তার পরিবারের তিনজনের নমুনায় অদৃশ্য এ ভাইরাসের উপস্থিতি মেলে। এরপর ভাইরাসটি ছোট্ট দেশে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। অল্পদিনেই শহর থেকে গ্রামে আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে করোনা ভাইরাস। গুজবও ডালপালা মেলতে থাকে। মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করে।

রোগী শনাক্তের ১০ দিনের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। তখন অদৃশ্য ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের দেশে দেশে লকডাউন জারি করা হয়। বাংলাদেশেও চলতি মাসের শেষদিকে লকডাউন জারি করা হয়। গোটা দেশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যদিও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রভাব পড়েনি। কিন্তু তবুও শুরু থেকে ভাইরাস মোকাবিলায় সরকার তৎপর ছিলেন। নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর থেকে অনেককে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর পরিবর্তন আসতে শুরু করে। প্রণোদনা, ত্রাণ সহায়তাসহ নানা সহযোগিতায় লকডাউনে চলতে থাকে মানুষের জীবন। এত কিছুর পর বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খুলে দেয়া হয়। নো মাস্ক নো সার্ভিসের মাধ্যমে চলছে এখন সবকিছু।

কিন্তু এত কিছুর পরে এক বছরে রোগী শনাক্তের হার কম নয়। মোট নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার মধ্যে ১৩ শতাংশের বেশি মানুষের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। একটি আরটিপিসিআর ল্যাব থেকে দেশে এখন আরটিপিসিআর, জিন-এক্সপার্ট ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবসহ মোট ২১৯টি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব ল্যাবে ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ২০৫টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি মিলে। তার মধ্যে শুধু একদিনেই চার হাজার ১৯ জনের নমুনায় ভাইরাসটির অস্তিত মিলে। যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। রোগী শনাক্তের ১০ দিনের মধ্যে মৃত্যুর দুঃসংবাদ আসে।

এরপর আর মৃত্যুর মিছিল থামেনি। সেদিন একজনের মৃত্যু হলেও এখন পর্যন্ত করোনায় আট হাজার ৪৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য দেশের মতো একদিনে শত সহস্র্র ব্যক্তির মৃত্যু না হলেও সর্বোচ্চ একদিনে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ১১ জনের মৃত্যু হলেও এখন মৃত্যুহার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৫৪তম দেশ হিসেবে করোনার প্রতিষেধক গণটিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে। ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ কোভিশিল্ড টিকা ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে। সেখান থেকে ৭০ লাখ ডোজ দুই কিস্তিতে দেশে এসেছে। উপহার হিসেবে আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এক মাসে ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮০৪ জন মানুষ করোনার টিকার নিবন্ধন করেছেন।

ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশের এক হাজার সাতটি সরকারি হাসপাতালের দুই হাজার ৫০০ টিমে ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫২ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। গর্ভবতী নারী ও ১৮ বছরের কম বয়সি ছাড়া মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স থেকে আরও এক কোটি ৯ লাখ আট হাজার ডোজ টিকা সংগ্রহ করছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব টিকা প্রয়োগ সম্পন্ন হলে দেশে করোনা সংক্রমণ প্রশমিত হবে বলে জনস্বাস্থ্যবিদরা মত দিয়েছেন। এদিকে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে শনাক্তের হিসেবে ৩৩তম এবং মৃতের হিসেবে ৩৯তম অবস্থানে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে ১১৮টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৯টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৭২টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবসহ মোট ২১৯টি ল্যাবে গতকাল আরও ১৪ হাজার ৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ২০৫টি নমুনা। তার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৪টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও ৯ লাখ ৬১ হাজার ৫৭১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

তার মধ্যে গতকাল রোববার আরও ৬০৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ফলে এক বছরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত রোগী সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনে পৌঁছেছে। তার মধ্যে গতকাল সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৩৭ জন। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ তিন হাজার তিনজন হয়েছে। একদিনে ১১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে আট হাজার ৪৬২ জনে পৌঁছেছে।

এ ছাড়াও আরও ৩৯ হাজার ৩০৭ জন করোনা রোগী হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

অধিদপ্তর আরও জানায়, গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়, তিনমাস পর ১৮ জুন তা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর ঠিক একমাস পর ১৮ জুলাই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখে। এর পরের এক লাখ রোগী শনাক্ত হয় এক মাস ৯ দিনে, ২৬ আগস্ট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়ায় তিন লাখ। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে যায় এর দুই মাস পর, ২৬ অক্টোবর। ৫৫ দিন পর গত ২০ ডিসেম্বর তা পাঁচ লাখে পৌঁছায়। এর পরের ৭৭ দিনে শনাক্ত রোগীর তালিকায় যুক্ত হয় আরও ৫০ হাজার নাম। এর মধ্যে গত ২ জুলাই চার হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। গত বছরের ৩০ জুন একদিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

যারা গতকাল যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ এবং দুইজন নারী। তাদের সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। তাদের সাতজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, দুইজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং একজন করে মোট দুইজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ ও ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিলো। মৃতদের মধ্যে ছয়জন ঢাকা বিভাগের, চারজন চট্টগ্রাম বিভাগের এবং একজন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া আট হাজার ৪৬২ জনের মধ্যে ছয় হাজার ৩৯৭ জনই পুরুষ এবং দুই হাজার ৬৫ জন নারী। তাদের মধ্যে চার হাজার ৭১২ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি। এ ছাড়াও দুই হাজার ৯৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৯৫৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪২৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৭৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬৪ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৭ জনের বয়স ছিলো ১০ বছরের কম। এর মধ্যে চার হাজার ৭৩৫ জন ঢাকা বিভাগের, এক হাজার ৫৫৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৮১ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৬৩ জন খুলনা বিভাগের, ২৫৪ জন বরিশাল বিভাগের, ৩১১ জন সিলেট বিভাগের, ৩৬৩ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৯৬ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

আমারসংবাদ/জেআই