Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

পুরো দেশকে আনন্দমুখর করলেন আইজিপি

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

মার্চ ৭, ২০২১, ০৮:২৫ পিএম


পুরো দেশকে আনন্দমুখর করলেন আইজিপি

ঠিক ৫০ বছর আগে ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সমুদ্রে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সূচনা করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে বাঙালির চূড়ান্ত অভিযাত্রার। বাঙালির মন-মননে, স্বপনে-জাগরণে, চিন্তা-চেতনায় আর আদর্শ-অনুপ্রেরণায় প্রদীপ্ত শিখারূপে প্রবাহিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সুবর্ণজয়ন্তীর মাত্র ৯ দিন আগে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

রাজনীতির মহান কবির বজ্রনির্ঘোষ মুক্তিমন্ত্র উচ্চারণের ৫০ বছর পূর্তি এবং সব দৈন্য আর মলিনতা মুছে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অবিস্মরণীয় অর্জনকে ইতিহাসের পাতায় চির অমলিন করে রাখতেই দেশব্যাপী ৬৬০টি থানাসহ পুলিশের সকল ইউনিটে আনন্দ উদযাপনের অংশ হিসেবেই অনিন্দ্যসুন্দর ও অনাবিল আনন্দে মুখর করে তুলেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।

গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাঙালিকে মুক্তি আর স্বাধীনতার মন্ত্র উচ্চারণে ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নির্ভয়চিত্ত, মহান স্বাধীনতার শৌর্য-বীরত্ব, বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাঙালির আত্মগৌরব অর্জনের পথে দুর্নিবার অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে চলার অদম্য প্রয়াসকে পুলিশের আইজি প্রতিভাত করেছেন, শানিত করেছেন অকাট্য যুক্তির সন্নিবেশে, তথ্যনির্ভর আলোচনায় এবং অসাধারণ বাগ্মীতায়। সেই রক্তের শিহরণ দোলা দিয়েছে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাইকে।

কখনো রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর অমর কাব্য রচনার বর্ণনা দিয়েছেন হূদয়ছোঁয়া পংক্তিমালায় আবার ঘৃণাভরেই সমালোচনা করেছেন স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির হালসময়ের কথিত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের। কালজয়ী গানের উজ্জ্বল কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বারের গান পরিবেশন করলেই যে একজন আব্দুল জব্বার হওয়া যায় না সেই বিষয়টিও চোখ বরাবর আঙুল রেখেই ধ্রুপদি ছন্দময় উচ্চারণে।

তার প্রশান্ত দীঘল চোখের ভাষায় প্রতিফলিত হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর বাঙালি জাতির অন্তর-আত্মার অভিব্যক্তি। নিজের প্রায় ১৮ মিনিটের ঐতিহাসিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞাময় রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বগুণের সারি সারি চিত্রপট বর্ণনা করেছেন ইতিহাসের অনন্য দলিলের মতোই। বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে জানতে বঙ্গবন্ধুর ওপর চর্চা বাড়ানোর গুরুত্ব যেমন দিয়েছেন তেমনি ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে উদযাপন করতে বলেছেন হাজার বছর ধরে।

অনুষ্ঠানের মাঝপথে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ৭ মার্চ উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের লাইভ সম্প্রচার করা হয়। ৭ মার্চের উত্তাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণার সেই দিনটিতে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত বরেণ্য চলচ্চিত্র অভিনেতা আলমগীরের স্মৃতিচারণও অনুষ্ঠানটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও চলচ্চিত্রের স্বনাম খ্যাত তারকারাও উপস্থিত ছিলেন অনাবিল-অনাস্বাদিত আনন্দের এই মাহেন্দ্রক্ষণে।

বঙ্গবন্ধু বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চাননি : নিপীড়িত-শোষিত কোটি বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা, আর্তনাদ নিজের বুকে ধারণ করা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে উদ্ধত তর্জনী তুলে অত্যাচারী-শোষক পাকিস্তানি শাসকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ সেই বিষয়টি উপস্থাপনের আগে কীভাবে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হয়েছে সেটি উপস্থাপন করতেই ইতিহাসের সড়কে পথ চলেছেন পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ।

ইতিহাসের অমর আখ্যানের সূত্র ধরে তিনি বলেছেন, ‘ষাটের দশকে একে একে অনেক দেশ স্বাধীন হচ্ছিল। ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি কলোনিয়াল কান্ট্রি মুক্ত হচ্ছিল। একই সময়ে কিছু স্বাধীনতা আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে নাইজেরিয়া থেকে বায়াফ্রা প্রভিন্স বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করে। ওই সময় ফ্রান্সসহ কিছু কলোনিয়াল কান্ট্রি, আফ্রিকান কান্ট্রি বায়াফ্রা প্রভিন্সের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করেন। ২৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় বায়াফ্রা প্রভিন্সের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ফলে। কিন্তু বায়াফ্রানরা মুক্ত হতে পারেননি। কারণ, পৃথিবীতে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সফল হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি জানতেন। তাই তিনি কখনই বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে চাননি। যখন পাকিস্তানিরা নিরীহ জনগণের ওপর হামলা করে আমাদের দেশের মানুষকে হত্যা করেছে নির্বিচারে তখনই তিনি মুক্তির স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই যে রাজনৈতিক বিষয়গুলো জানতে ছোটখাটো পড়াশুনা জানতে হয়। এখন অনেকেই হঠাৎ করে আবির্ভূত হন আমাদের দেশে। আমরা এখন অনেক ধরনের এন্টারটেইনমেন্ট দেখছি। কেউ কেউ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র খুলে বসেছেন। আরে ভাই, আব্দুল জব্বারের গান ভালো করে গাইলেই কী আব্দুল জব্বার হওয়া যায় না কী? আমরা তামাশা দেখছি।

প্রধানমন্ত্রী দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশকে : পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি দুর্নিবার গতিতে। এখানে আমাদের শ্রম, ঘাম, প্রতিজ্ঞা ও প্রত্যয় রয়েছে। মাঝেমধ্যে ব্রেক লাগে। কমিক রিলিফ লাগে মাঝে মধ্যে। টান টান উত্তেজনা যখন সিনেমা বা নাটকে তৈরি হয় তখন কমিক রিলিফ আসে। গত ১০ থেকে ১১ বছর যাবত দেশের ১৮ কোটি মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্রাজুয়েট করেছি। এই যাত্রা সহজ ছিলো না।

কলেরা, টাইফয়েড অতীত, ম্যালেরিয়া ইতিহাস : ইতিহাস ঘেঁটে যুক্তিনির্ভর আলোচনায় ড. বেনজীর আরও বলেন, ‘১৯৭১ এ আমি প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। তখন দারিদ্র্যের যে কঠোর রূপ আমার দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছিল। গ্রামের মানুষ যে কত কষ্ট করে জীবনযাপন করতো, ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যকে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছিল। আমরা যেহেতু বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি, আমরা মনে রাখি না, ভুলে যাই।

ওই সময় অসুখ, অশিক্ষা ছিলো আমাদের নিত্যদিনের সহচর। শত শত মানুষ মরেছে টাইফয়েড, কালাজ্বর ও কলেরায়। আজকে কলেরা, টাইফয়েড অতীত, ম্যালেরিয়া ইতিহাস। অথচ এগুলোর কারণে এদেশের হাজার হাজার মানুষ মরেছে নির্বিচারে। চৈত্র মাসে অভাব ছিলো অনিবার্য। মানুষ একবেলা খেতে পারলে মনে করতো ভাগ্যবান। তখন এই দেশটিই ছিলো গরিব। আমি বুনো কুচোর নিচের অংশটুকু কুড়িয়ে কুড়িয়ে মানুষকে খেতে দেখেছি। শাপলার সিজ সিদ্ধ করে খেতে দেখেছি। দারিদ্র্যতার কী কঠিন চেহারা এখনো মনে হলে বিভীষিকা মনে হয়। সেখান থেকে আজ বাংলাদেশ কোথায়? এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেড়াতে যান। আপনাকে গৃহকর্ত্রী বসিয়ে ছেলে-মেয়েকে বলবেন, যা পাঁচটি ঠাণ্ডা নিয়ে আয়। গ্রামের ওই পর্যন্ত রাস্তা, বিদ্যুৎ ও রেফ্রিজারেটর পৌঁছেছে। এক সময় যেখানে গেলে লেবু পাতা আর চিনি দিয়ে জগ ভর্তি করে শরবত খাওয়ানোই ছিলো অনেক বড় ব্যাপার। সেখানে এখন এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভিশনারি লিডারশিপের প্রশংসা : স্ট্রং ভিশনারি লিডারশিপ প্রধানমন্ত্রীর, এমন তথ্য উপস্থাপন করে ড. বেনজীর বলেন, ‘সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকে আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা- এসব সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশনারি লিডারশিপের বদৌলতে। যেটি গুজেরেস্তার বক্তৃতায় বলেছে, আপনারা শুনেছেন আমরা দেখিয়েছি। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করেছে এদেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত। এই অর্জনের জন্য আমাদের শ্রম, ঘাম-অহর্নিশ দিবারাত্রি পরিশ্রম রয়েছে। সেজন্য মাঝে মাঝে এটি যখন দেখি তখন আমার কাছে মনে হয় পিউর এন্টারটেইনমেন্ট। আমরা যে পরিশ্রম করছি সেজন্য এন্টারটেইনমেন্ট দরকার আছে। কিন্তু দিনশেষে এটি তামাশাই বটে! পরিপূর্ণ তামাশা।

বাঙালি জাতি এসেছে অনেক দূর, যেতে হবে বহুদূর : বাঙালি জাতি এসেছে অনেক দূর, যেতে হবে বহুদূর, এমন উচ্চারণ করে আইজিপি বলেন, ‘আগামীর যাত্রা ২০৪১ এ আমরা আধুনিক ও ধনী বাংলাদেশে রূপান্তরিত হতে চাই। বঙ্গবন্ধু জাতিকে ক্ষুধা, অপমান ও দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য যে আন্দোলন করেছিলেন, সেই ক্ষুধা-দারিদ্র্যকে পরাজিত করে আমাদের অবশ্যই সোনার বাংলার সমৃদ্ধ বন্দরে নোঙর করতে হবে। আমি মনে করি, এটিকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর উদযাপন করা উচিত। এটি আমাদের দারিদ্র্র্যের শেকল ভাঙার উৎসব, সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসব, সম্মান ও আত্মমর্যাদার উৎসব। এজন্য এই উৎসব আমাদের প্রতিদিন করতে হবে। বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের যে প্রত্যয় রয়েছে সেই প্রত্যয় বাস্তবায়ন করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের অন্তর্নিহিত ভাষ্য : ড. বেনজীর আহমেদ বলতে থাকেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার জন্য মঞ্চে দৃঢ় কিন্তু রুজু পায়ে উঠছিলেন তখন আমার কাছে মনে হয় তিনি সমগ্র বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে ধারণ করেছিলেন। তিনি যখন সবাইকে অ্যাড্রেস করেন, ভাইয়েরা আমার আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। এই দুঃখ ভারাক্রান্ত মন কী মার্চের প্রথম সপ্তাহের দুঃখ ভারাক্রান্ত মন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। আসলে এই দুঃখ ভারাক্রান্ত মন ছিলো হাজার বছরের দুঃখ ভারাক্রান্ত মন, হাজার বছরের বাঙালির বঞ্চনা, দুঃখ ও কষ্টের জন্য ভারাক্রান্ত মন। বঙ্গবন্ধু তখন শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু ছিলেন না, তিনি বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে বিলীন হয়েছিলেন। ধারণ করেছিলেন বাঙালিকে।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র সেই বিখ্যাত কবিতা নিজের কণ্ঠে উচ্চারণ করেন পুলিশের আইজি। অজর পঙক্তিমালায় বলেন, ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি, যার পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিলো’। সেই ক্ষত কিন্তু দাসত্ব ও অত্যাচারের ক্ষত। বঙ্গবন্ধু মূলত বাঙালির হাজার বছরের নিপীড়ন, নির্যাতন ও ক্ষত তৈরি করা হয়েছিল বলেই রাজনীতির মহাকবি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা এই ভূখণ্ড, রাষ্ট্রীয় পতাকা ও মানচিত্র পেয়েছি। আজকে আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে দারিদ্র্যতার কোনো ধারণা নেই। যার বয়স পাঁচ বছর ও দারিদ্র্য কী জিনিস চিনবে না, জানবে না। আত্মবিশ্বাসী বাঙালি হিসেবে এদেশের মানুষ হিসেবে সে বড় হবে। সেজন্য বঙ্গবন্ধুর চর্চা আমাদের করতে হবে, ৭ মার্চ উদযাপন করতে হবে হাজার বছর ধরে।’

বঙ্গবন্ধুই প্রথম দেশকে শাসন করার সুযোগ করে দিয়েছেন : এদেশ বাঙালি কখনো শাসন করেনি, মন্তব্য করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আমরা পাল বংশের কথা বলি। কিন্তু তারা ছিলো একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের লোক যারা এখানে এসেছে তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করার কারণে। এদেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলতার কারণে তারা কিছুদিন রাজত্ব করেছিল। কিন্তু তারা বাঙালি ছিলেন না। আমরা ইতিহাসে পড়েছি ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজী ১৭ জন সৈনিক নিয়ে বাংলা দখল করেছিলেন। আসলে ১৭ জন না, তার পেছনে এন্টায়ার সেনাবাহিনী ছিলেন। কিন্তু তিনি এত দ্রুত এসেছিলেন উনার সঙ্গে মাত্র ১৭ জন সৈনিক আসতে পেরেছিলেন। বাকিরা পেছনে পড়ে গিয়েছিল।

তিনি যখন লক্ষণ সেনের রাজপ্রাসাদে হাজির হন তখন লক্ষণ সেনের হাউজগার্ড দ্রুত অগ্রসরমান বাহিনী দেখে পালিয়ে যায়। আর লক্ষণ সেন তখন বর্ষাকাল ছিল। তিনি বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে একটি বজরায় করে পালিয়ে যান। তিনি যখন বজরায় করে পালিয়ে যান তখন ওই অঞ্চলের প্রচুর মানুষ বর্ষাকালে বিলের ভেতর মাছ ধরছিল। আপনারা জানেন এ অঞ্চল এক সময় আট মাস পানির নিচে থাকতো। এ কারণে আমাদের প্রবাদ আছে— ‘আমরা মাছে ভাতে বাঙালি।’

কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী এম আর আখতার মুকুলের একটি বইয়ে লিখেছেন— এক সময় পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা একসঙ্গে ছিলো। এ কারণে পানির জন্য বুঝা যেতো না কোনটা পূর্ব বাংলা, কোনটা পশ্চিম বাংলা। একটা কারণে বুঝা যেতো সেটি হচ্ছে মাছের গন্ধ। মাছের গন্ধ পেলে বুঝা যেতো আমরা পূর্ব বাংলায় প্রবেশ করেছি। ওই সময় প্রচুর লোক মাছ ধরছিলেন। তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। কারণ ওনি বাঙালি ছিলেন না। ওনি ছিলেন কর্নাটকের ব্রাক্ষণ। আমাদের ইতিহাস নেই। বঙ্গবন্ধুই প্রথম আমাদের দেশকে শাসন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে কমপক্ষে দুই থেকে তিন হাজার বছর এগিয়ে দিয়েছেন। আমরা যদি ইতিহাস দেখি, চার হাজার বছরের আগ পর্যন্ত আমরা বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সর্বপ্রথম নিগুঢ় খুঁজে পাই। ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত আমাদের দেশ শাসনের কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না। কিন্তু অপমানিত, বঞ্চিত, অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হওয়ার অভিজ্ঞতা ছিলো। সেখান থেকে আজকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণে বা বঙ্গবন্ধুর তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো এবং ইনশাআল্লাহ ২০৪১ সালে আমরা আধুনিক ও ধনী দেশে রূপান্তরিত হবো। সেই লক্ষ্যে আমরা ইস্পাতকঠিন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ঐক্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করবো, সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের সঙ্গে। এটাই হোক আমাদের আজকের দিনের প্রত্যয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর কনক কান্তি বড়ুয়া, অতিরিক্ত আইজি (এএন্ডও) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, সিআইডির অতিরিক্ত আইজি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঞা, চলচ্চিত্র অভিনেতা আলমগীর এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আমারসংবাদ/জেআই