Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

‘গুজব’ বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ

এম এ আহাদ শাহীন

মার্চ ৭, ২০২১, ০৮:৫০ পিএম


‘গুজব’ বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
  • অসচেতনভাবে বিনিয়োগ করলে মুনাফার চেয়ে লোকসানের আশঙ্কা বেশি

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দুই শতাধিক কোম্পানির শেয়ারে মূল্য পতনে একদিনেই সূচক কমেছে আড়াই শতাংশ। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হতেই ছয় পয়েন্ট বেড়ে গেলেও এরপর থেকে টানা পড়তে থাকে সূচক। টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর গত সপ্তাহের বুধ ও বৃহস্পতিবার সূচকের উত্থানে বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হন। এক হাজার আটশ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর তিনশ পয়েন্টের মতো সংশোধন শেষে এই উত্থানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা জন্মে যে, মূল্য সংশোধন মনে হয় শেষ হয়েছে। তবে এখন স্পষ্ট হয়ে গেলো, মূল্য সংশোধন শেষ হয়নি। বরং প্রায় দেড়শ পয়েন্ট পতনে বাজার নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন শঙ্কা। ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ ১৬৮ পয়েন্ট সূচক হারিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশে যখন প্রায় স্বাভাবিক অবস্থা, তখন কেন এই পতন, ভাবিয়ে তুলেছে বাজার সংশ্লিষ্টদের।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলছেন, এই পতন স্বাভাবিক কি-না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে পতনের কারণ অনুসন্ধান করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে যখন উত্থান শুরু হয়েছিল তখন কয়েকটি কোম্পানির সবচেয়ে বেশি লেনদেন ছিলো দৃশ্যমান। এখন সেগুলোর দামও তলানিতে নেমে এসেছে। মাঝে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লে এখন সেগুলোর দাম কমেছে। তবে পতন যাতে দীর্ঘ না হয় সেদিকেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজর দেয়া উচিত। তবে সূচকের এমন পতনের মধ্যেও ভালো অবস্থানে ছিলো তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর। এই খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দর বাড়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে আটটিই বিমা খাতের। বিমা খাতের দাম বাড়ার কারণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএর এক সিদ্ধান্ত। গত বৃহস্পতিবার নির্দেশ আসে, নন-লাইফ বিমা কোম্পানির এজেন্টদের কোনো কমিশন দেয়া যাবে না। এতদিন এজেন্টদের বিমার বিপরীতে ১৫ শতাংশ বা তারও বেশি হারে কমিশন দেয়া যেত। আবার বিমার উন্নয়ন কর্মকর্তাদের প্রিমিয়ামের বিপরীতেও কোনো কমিশন দেয়া যাবে না। তাদের কোনো সুযোগ সুবিধা দিতে হলে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য যে আলাদা ব্যাংক হিসাব আছে সেখান থেকে নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে দিতে হবে।

এতে কোম্পানির আয় বেড়ে যাবে— এমন ধারণা থেকে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়েছেন এই খাতে। সবচেয়ে খারাপ দিন গেছে ব্যাংক খাতে। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র একটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। আটটি কোম্পানির দর পাল্টায়নি। বাকি সবগুলোর দর কমেছে। এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি ও পরিচালক শাকিল রিজভী আমার সংবাদকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সময় সচেতন থাকতে হবে। অসচেতনভাবে বিনিয়োগ করলে মুনাফার চেয়ে লোকসানের আশঙ্কা বেশি। প্রতিটি শেয়ার সম্পর্কে ধারণা নিয়ে কিনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে কোন কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে বা কেনা উচিত তা নির্ভর করে প্রবৃদ্ধির ওপর। ছোট মূলধনী কোম্পানির শেয়ারও কেনা যাবে যদি সেসব কোম্পানির উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ঠিক থাকে। আবার বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শাকিল রিজভী বলেন, কোম্পানির ইপিএস কী রকম, ডিভিডেন্ড দিতে পারবে কি-না এগুলো বিবেচনায় নিতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। টাকা আছে বাজারে এসে যেকোনো শেয়ার কিনলাম। নানা গুজব শুনে বিনিয়োগ করলাম। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজারে অন্যান্য পণ্যের মতো বেচাবিক্রি হয় না। এখানে ঝুঁকি রয়েছে। সবাইকে তাই সচেতনভাবে চিন্তা করতে হবে। বাজার কখনো খুব বেশি বাড়বে আবার অনেক কমেও যেতে পারে। সেটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় না। তাই সচেতনতা ছাড়া কারও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত নয়।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘বাজারে নানা ধরনের গুজব প্রচার হয়। অনেকে ফেসবুক, অনলাইনে শেয়ার আইটেম খোঁজ করে কেনার জন্য। এগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো শেয়ার না কিনে প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন স্বাভাবিক আছে এমন কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। সতর্কতার সঙ্গে শেয়ারের প্রবৃদ্ধি দেখে বিনিয়োগ করা উচিত।’ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বাজারে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ার কয়েক দিনের মধ্যে দুই-তিন গুণ বেড়ে যায়। কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ে। কোনো কিছু না বুঝে এসব কোম্পানির শেয়ার কেনে বিনিয়োগকারীরা। যারা গুজব ছড়ায় তারাই এর জন্য দায়ী। গুজব ছড়িয়ে নিজেদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে চলে যায় কারসাজি চক্র। তাদের কারসাজিতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। যারা বিনিয়োগ করে তারা না বুঝেই অতিরিক্ত মুনাফার আশায় শেয়ার কেনে। এভাবে বিনিয়োগ করা উচিত নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিভিডেন্ড সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত রিভিউ করা উচিত। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত। কম মূল্যে মানুষ ভালো শেয়ার কিনতে চায়। বেশি ডিভিডেন্ড না দিতে পারলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মুনাফা করতে পারবে না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘শেয়ার বাজারে কেনো পতন তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা পুঁজিবাজারের জন্য অনেক উদ্যোগ নিচ্ছি। কিন্তু যার সবগুলোই পুঁজিবাজারবান্ধব। তারপরও কেন বাজারের লেনদেন বাড়ছে না তা দেখা হবে।’

আমারসংবাদ/জেআই