Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রশাসনে সফলতায় নারীরা

আসাদুজ্জামান আজম

মার্চ ৭, ২০২১, ০৯:০০ পিএম


প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রশাসনে সফলতায় নারীরা

নারীর ক্ষমতা সারা দুনিয়ায়। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই বাংলাদেশি নারীরা এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে এগিয়ে। সক্ষমতার ছাপ রেখে চলেছেন যেকোনো চ্যালেঞ্জিং কাজে। যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সফলতা কুড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। পিছিয়ে নেই দেশগড়ার কাজেও। রাষ্ট্রের শীর্ষপদ থেতে শুরু সর্বনিম্ন স্তরে সমান তালে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত আছে নারীরা। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে প্রশাসনের শীর্ষ পদসহ বিভিন্ন দপ্তরে নারীরা সফলভাবে কাজ করে চলেছেন। নিজ যোগ্যতা আর কর্মযজ্ঞে তারা এ পদে এসেছেন। কারো করুণা নয়। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষপদে নারী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে কর্মরত পাঁচ হাজার ৪৪৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে এক হাজার ৪৪৭ জন নারী। নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তারা। প্রশাসনের শীর্ষ পদ সিনিয়র সচিব, সচিব ও সমমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করছেন ৭৪ জন কর্মকর্তা। একজন সিনিয়র সচিবসহ সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন ১০ জন নারী। গ্রেড-১ কর্মকর্তা রয়েছেন ১৬ জন । এরমধ্যে নারী কর্মকর্তা রয়েছেন দুইজন। গত তিন দশকে নারীর এগিয়ে চলা দেখেছেন এবং সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রশাসনে নিজেকেও মেলে ধরেছেন এমন একজন সফল নারী কর্মকর্তা হলেন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (সচিব) জাকিয়া সুলতানা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে দৈনিক আমার সংবাদের সঙ্গে আলাপকালে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নানা দিক তুলে ধরেন তিনি।

প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করে জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘সর্বোচ্চ স্তরে সচিব পদে দায়িত্ব পালনের শুরুটা হয়েছিল ১৯৯১ সালে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিলো মানুষের কল্যাণে কাজ করার। সে স্বপ্নই আমাকে বর্তমান পদে আসার কঠিন পথকে সফলতার সাথে অতিক্রম করার শক্তি যুগিয়েছে। শুরুটা তেমন কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। প্রশাসন ক্যাডারের নারী কর্মকর্তাদের অন্যান্য সেক্টরের তুলনায় কম বাধার সম্মুখীন হতে হয়, আমার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। তা ছাড়া আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম, উদ্যোগ, চেষ্টা, সততা ও একাগ্রতার মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে কর্মক্ষেত্রে স্বাক্ষর রাখার চেষ্টা করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বে নারী কর্মকর্তাদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ বৃদ্ধি, পুরুষ কর্মকর্তাদের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব কর্মপরিবেশ উন্নয়নের ফলে নারী কর্মকর্তাদের কর্মপরিবেশ যথেষ্ট উন্নত হয়েছে।’

নারী দিবস নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কর্মস্থালে নারী শ্রমিকের প্রতি বৈষম্য ও অবিচারের প্রতিবাদের বলিষ্ঠ এক পদক্ষেপের ফসল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কের নারী শ্রমিকদের আন্দোলনের মাধ্যমে, শত সহস্র বছরের তিল তিল করে জমতে থাকা ক্ষোভের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯০৯ সালে নিউইয়র্ক সর্বপ্রথম এবং ১৯১০ সালে ডেনমার্কে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ডেনমার্কের সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন, প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রস্তাবনা করেন। ১৯১৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হলেও ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে, প্রতি বছর স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের চলমান রীতি-নীতি, আইন-কানুন ও সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নারীর ন্যায্য অধিকার আদায় করা সম্ভব হলেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।’

নারীর অগ্রযাত্রা সম্পর্কে বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (সচিব) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ ইনডেস্ক-২০২০ অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের ৫০তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, কুসংষ্কারাচ্ছন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ সংস্কার প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী আজ অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। নারী আজ আর সহচারী নয়, সংগ্রামী জীবনের সহকর্মী, জীবন যুদ্ধের অন্যতম শরিক। আজকের এ অবস্থানের জন্য শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হয় মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, বেগম রোকেয়া, জাহানারা ইমাম, বীরকন্যা প্রীতিলতা বিশেষ করে বাংলাদেশের অহঙ্কার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। যার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতায় অভিভূত হয়ে, বিশ্ব আজ তাকে ‘নারী অধিকারের স্তম্ভ’, ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’, ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করছে। তার দৃঢ় পদক্ষেপ শুধু বাঙালি নারীকে নয়, সমগ্র জাতিকে বিশ্ব দরবারে একটি সুদৃঢ় অবস্থান সৃষ্টি করতে সাহায্য করছে।

প্রশাসনে নারী কর্মকর্তাদের প্রত্যয়ী থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘জীবনে সফল হতে হলে আইডল নির্বাচন করতে হবে। যার জীবন্ত উদাহরণ আমাদের মাঝে বর্তমান। বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা যখন তাণ্ডব চালিয়ে চীন, জাপান, আমেরিকার মতো দেশকে বিপর্যস্ত করছে, তখন আমাদের নির্ভীক প্রধানমন্ত্রী বিরামহীন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সকল নগারিকের খবরা খবর নিচ্ছেন। জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যমে তা সম্প্রচার করে তিনি সমস্ত জাতিকে সচেতন করতে সক্ষম হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং প্রশাসন ক্যাডারকে আমরা পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছি। দেশের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পরিচালনাই আমাদের মূল দায়িত্ব। কর্তব্য পালনের সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যক্তির চেয়ে সংস্থা বড়, সংস্থার চেয়ে দেশ। কর্মক্ষেত্রে লোভ লালসা ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে এবং দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স থেকে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।’

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি : ১৯৬৮ সালে নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন জাকিয়া সুলতানা। জাকিয়া সুলতানা দশম বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল), পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকায় অবস্থায় তিনি ব্যাংকগুলো ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

আমারসংবাদ/জেআই