Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ছেলে সন্তানকে শিক্ষা দিন যদি না মানে শাস্তি দিন

আশরাফি দিবা

মার্চ ৭, ২০২১, ০৯:০০ পিএম


ছেলে সন্তানকে শিক্ষা দিন যদি না মানে শাস্তি দিন

পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়, কিংবা সোস্যাল মিডিয়ায় চোখ মেললেই শিশু ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, যৌতুকের কারণে বাড়ির বউয়ের গায়ে আগুন খুব সাধারণ ঘটনা। অথচ চারপাশে শোনা যায় নারীদের স্বাধীনতার চর্চা। এইতো ২০২০ সালে গাজীপুরে পাঁচ বছরের শিশু তাহিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এই তো গত বছরের জুনের ঘটনা, লক্ষ্মীপুরে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে মা ঢাকা গেলে মেয়েকে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনা থেকে শুধু একটি প্রশ্নেরই সূত্রপাত হয়, নারীরা নাকি স্বাধীন? তবে এই কী নারী স্বাধীনতার চিত্র? সমাজের জ্ঞানী মানুষদের মুখে আজকাল একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, মেয়েরা এখন এগিয়ে গেছে। আর আগের মতো লিঙ্গবৈষম্য নেই। মেয়েরাও তো চাকরি করছে। যেনো মেয়েদের চাকরি করার কোনো কথাই ছিলো না। কোনো নারী বিসিএস ক্যাডার হলে তার পত্রিকায় বড় ছবির সাথে হেডলাইন হয়” সংসারের কাজ করেও বিসিএস হলেন এই নারী। এই তো গত বছরের জুলাইয়ের কথা, প্রথম আলো পত্রিকার শিরোনাম” সংসার-সন্তান সামলেই পুলিশ ক্যাডারে নুসরাত।

নুসরাতের পুলিশ ক্যাডার হওয়া যেনো নবম আশ্চর্য বিষয়। আবার এই পত্রিকাতেই আরেকটি শিরোনাম এসেছিল” বিসিএসে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। যেনো বিসিএস নারীর অংশগ্রহণ কম হওয়াটাই ভবিতব্য। এমনকি আমাদের সমাজের নারীরাও নিজেদের জায়গা এইভাবে ব্যাখ্যা করেন ‘আমার শ্বশুরবাড়ি খুবই লিবারেল, আমাকে চাকরি করতে দেয়, জিন্স পরতে দেয়।’ যেনো এমনটি হওয়া খুব বিষ্ময়কর। এই যে পাইয়ে দেয়া স্বাধীনতা, পাইয়ে দেয়া অধিকারবোধের মতো শব্দগুলো একেকটি ছদ্মঘাতক। যেগুলো আগেই বলে দেয় নারী তুমি ভৃত্য,  পুরুষ তোমার মালিক। একজন অভিনেত্রীর স্বাক্ষাতকারে প্রশ্ন করা হয় বিয়ের পরেও কি সিনেমা করবেন?’ অথচ কোনো অভিনেতাকে জিজ্ঞেস করা হয় না বিয়ের পর সিনেমা করাটা তার কাছেও আদৌ ‘অপশন’ কি-না! মিথিলা-সৃজিতের বিয়ের পরও বড় করে শিরোনাম দিয়ে নিউজ হয়েছিল” বিয়ের পর কাজে ফিরলেন মিথিলা। বিয়ে তো সৃজিতেরও হয়েছে তবে নিউজের বিষয় শুধু মিথিলা? এমনকি বাসন  মাজা, কাপড় কাচার বিজ্ঞাপনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো পুরুষ চরিত্র নেই। বিয়ের বিজ্ঞাপনেও ঘরোয়া পাত্র চাই লেখা চোখে পড়া যেনো অবিশ্বাস্য বিষয়। আবার ‘ওসব মেয়েছেলের কাজ’—জাতীয় অবজ্ঞা বাক্যও রোজই এপাশ-ওপাশ ফিরলেই শোনা যায়। সুতরাং লিঙ্গবৈষম্য এখন আর ততটা নেই বলে যারা নিজেদের সান্ত্বনা দিতে চান তাদের কাছেই প্রশ্ন রয়ে যায়, সমস্যা নেই নাকি সমস্যাকে চিনতে আমাদের ভুল হয় আজও?

চার-পাঁচ-ছয় করে এমন হাজারো উদাহরণ পাওয়া যায়, যার প্রত্যেকটিই সত্য এবং বাস্তব। প্রতি বছর নারী দিবস এলেই অর্ধেক আকাশ শব্দটার প্রতি মোহ কাজ করে হয়তো। সোস্যাল মিডিয়া ভর্তি পোস্টের মধ্যে দিয়ে আমরা জাহির করতে চাই আন্তর্জাতিক নারী দিবস মানেই উল্লাসের দিন, আসলে বুঝি না কীভাবে শারীরিক সৌন্দর্য, লিঙ্গভেদ, বিয়ে এবং মাতৃত্বের বাধ্যতা ছাড়া ওই অর্ধেক আকাশে আর কিছুই নেই। আসলে সমস্যা শুরু হয় একটি শিশুকে মানুষ করার সময় থেকেই। মানুষ করা হয় না, পুরুষ হয় সে, বা নারী। কোনো এক অজানা রোগাভ্যাস থেকে মেয়ে সন্তানের জন্য রান্না-বাটি আর বার্বিডল ছাড়া উপহার আমাদের মনেই পড়ে না। ছেলের বেলায় গতিময় গাড়ি আর খেলনা বন্দুক ছাড়া কিছু ভাবতেই পারি না। শিশুকন্যাটি শেখে, ‘বর আসবে এখুনি, নিয়ে যাবে তখুনি। ‘আর শিশু খোকাটি জানে, বীর পুরুষ হওয়াই ভবিতব্য।’ ছোট থেকেই সন্তানকে গল্পে শোনানো হয়, অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা কেমন একটার সাথে একটা ফ্রির মতো গছিয়ে দেয়ার অভ্যাস আমাদের মজ্জায়। সুতরাং এই শিশুকন্যা বড় হলে কন্যাশ্রীর টাকা যে আদতে মেয়ের বিয়ের জন্যই জমানো হবে এমন তো অলিখিত নিয়মই বলা যায়।

নারী দিবসে আমরা নারীদের সমান অধিকারের স্লোগান লিখেই খুশি হয়ে যাই। কিন্তু ভাবিনা এই জোরে জোরে স্লোগান দেয়ার মাঝেই আমি বলে দিচ্ছি আমি নারী,  আমি পুরুষের থেকে পিছিয়ে? এই স্লোগানে নিজেকে কী আগেই দুর্বল করে দেয়া হচ্ছে না? একটা মেয়ে যেমন সেই স্কুল থেকে কর্মজীবন অবধি সবটা নির্যাতন সয়ে যাচ্ছে, তেমনি একটি ছেলেশিশুও সেসব দেখেই কখনো উৎসাহ বোধ করছে, কখনো অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। তাই হয় তো নারী দিবস শুধু দিবস হয়েই রয়ে যাচ্ছে, এর সঠিক কোনো প্রতিফলন হচ্ছে না। যার ফলাফল এত এত ধর্ষণ!   এত ডমেস্টিক ভায়োলেন্স!

এত নারী নির্যাতনের ঘটনা : তাই শিশুর বেড়ে ওঠাকেই প্রথমে সুস্থ করতে হবে। পরিবার থেকেই বুনতে হবে সুস্থ চিন্তার বীজ। রাস্তায় ভিড় জমিয়ে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বলার প্রয়োজন নেই মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কম নয়। কারণ আপনি যখন আগেই বলছেন মেয়েরা কম নয়, তার মানে আপনি কথার মাঝেই মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে দুর্বল। বরং পরিবারের ছেলে সন্তানকে শিক্ষা দিন, যদি না মানে তাকে শাস্তি দিন। আজ আপনার পরিবার থেকে নেয়া একটা পদক্ষেপই হয়তো পরবর্তীতে পুরো সমাজটাই বদলে দেবে, আনবে নতুন আলোর পথ।

আমারসংবাদ/জেআই