Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

জামায়াত ছাড়তেও ভয়!

মার্চ ৮, ২০২১, ০৯:৪০ পিএম


জামায়াত ছাড়তেও ভয়!
  • জামায়াতকে ছাড়তে ইচ্ছুক নন খালেদা-তারেক, আলোচনা হয়েছে মাত্র, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি
  • জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের দুই সদস্যের দাবি— কিছুই জানেন না তারা
  • দ্বাদশ নির্বাচনেও জামায়াত দেড়শ আসন চাইতে পারে, এখনই ভাবাচ্ছে বিএনপিকে
  • ভেতরে ভেতরে বিএনপির সঙ্গে বাংলাদেশ এবং লন্ডনকেন্দ্রিক ঘনিষ্ঠতা আগের মতোই

জামায়াত নিয়েই মজবুত বিএনপির সংসার। আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পেতেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছরে কৌশলগতভাবে জামায়াত থেকে দৃশ্যত কর্মসূচি থেকে দূরত্ব বজায় রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তারেক রহমান। পাশের দেশের সমর্থন পেতে জামায়াতকে ছাড়ার জন্য দলের কয়েকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য সমপ্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা তোলেন। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জামায়াতকে সঙ্গে রাখার ব্যাপারে দৃঢ় থাকায় জামায়াতকে ছাড়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। জামায়াত নিয়ে বিএনপি প্রভাবশালী কিছু দেশের সহযোগিতা পাচ্ছে না, ধর্মীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ আসছে বিএনপির ওপর। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র— এমনই জানিয়েছে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র।

অন্যদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের দুই সদস্য জানান, এখন পর্যন্ত জামায়াত ছাড়ার কোনো বিষয় তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিএনপি এখন পর্যন্ত জামায়াতকে কিছু বলেনি বলে দাবি করেন তারা। তবে জামায়াতের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কৌশলগতভাবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে তারা বিএনপি থেকে দূরে রয়েছেন। চলছেন একলা চলা নীতিতে। জামায়াত নিজেদের দল গোছানোসহ সাংগঠনিক পরিধি বাড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামী আরও ২০-২৫ বছর হয়তো অতীতের ন্যায় আর নির্বাচনেও আসবে না। সমঝোতার মাধ্যমে সুযোগ এলে তবেই তারা প্রার্থী দেবেন অন্যথায় নয়। এ নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপি ধারণা করছে অতীতের ন্যায় আগামী দ্বাদশ নির্বাচনেও জামায়াত প্রায় দেড়শ আসন চেয়ে বসতে পারে। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জামায়াত কমপক্ষে ৭০টি আসন দাবি করে। ২০ দল ঐক্যফ্রন্টের চাইতেও জামায়াতকে বেশি আসন দিতে হয়েছে। তাই এবারো জামায়াত দ্বাদশ নির্বাচনে বৃহৎ সংখ্যক আসন চাইতে পারে এটিই বিএনপিকে এখন থেকে ভাবাচ্ছে। তবে বাইরে বাইরে দূরত্ব চললেও ভেতরে ভেতরে বিএনপির সঙ্গে বাংলাদেশ এবং লন্ডনকেন্দ্রিক ঘনিষ্ঠতা সম্পর্ক আগের মতোই রয়েছে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বছরব্যাপী কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি জামায়াতকে। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ মহাজোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোটের শরিকসহ বিকল্পধারাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির দাবি— স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাসে মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মীয় চিন্তা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে চায় দলটি। তাই বিএনপি দলের সিদ্ধান্তের আলোকে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানায়নি। শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ৭ নভেম্বর, জামায়াত ও ধর্মীয় রাজনীতিসহ প্রতিটি বিষয়ে স্পষ্ট বাস্তবভিত্তিক অবস্থান তৈরি করার বিষয়টি উপলব্ধি করে যুদ্ধাপরাধী ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতকে জাতীয় কর্মসূচিগুলোতে দূরে রাখা হয়েছে। জামায়াতকে সঙ্গে রাখার কারণে বহুমুখী চাপ বহন করতে হচ্ছে দলটিকে। আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপিকে ইসলামপন্থি দল হিসেবেও কেউ কেউ ভাবছেন। এমন নানা বিশ্লেষণে জামায়াতকে ছাড়ার বিষয়ে বারবার পরামর্শ এলেও ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। দলটির বড় অংশ মনে করছে, জামায়াতকে ছাড়লেও বিএনপির বিপদ। এখন জামায়াতের প্রভাব বেশি ২০ দলে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে জামায়াতের পরামর্শ বেশি গ্রহণ করা হচ্ছে। জামায়াতকে ছাড়ার যদি হুট করে এখন ঘোষণা দেয়া হয় তাহলে জামায়াত যদি দ্বাদশ নির্বাচনের আগে নিজস্ব ছকে নির্বাচনের চিন্তা করে কিংবা অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোট করে তাহলে দিনশেষে বিএনপিরই ক্ষতি বেশি হবে। 

বিএনপি এখন পর্যন্ত জামায়াতকে কোনো ইঙ্গিত দিয়েছে কি-না দল ছাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আসলে বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব খবর দেখছি এগুলোর মৌলিকতা নেই। আমাদের কেউ এখনো স্পষ্ট কিছু বলেনি। জামায়াতের আরেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম বলেন, আসলে এসব বিষয়ে আমাদের এখনো কিছু জানা নেই। আমাদের কেউ কিছু  বলেনি।

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই জামায়াত বিএনপি থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে। জামায়াত নিজস্বগতিতে চলছে। নিজেদের দলীয় বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজনীতি থেকে মৌলিকভাবে দূরে না থাকলেও সিদ্ধান্তের আধিক্যের ভিত্তিতে কিছু বিষয় বিবেচনা করে সম্পৃক্ত থাকবে।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়মিত স্থায়ী কমিটিতে উপস্থিত না থাকা সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে দলে আলোচনা হচ্ছে শুনতেছি। আমি বরাবরই জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে।

আমারসংবাদ/জেআই