Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

হাজী সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল, হারাচ্ছেন এমপি পদ!

মার্চ ৯, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


হাজী সেলিমের ১০ বছর সাজা বহাল, হারাচ্ছেন এমপি পদ!
  • রায়ের আগেই বাসা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন হাজী সেলিম
  • ব্যবস্থা নিতে রায়ের কপি স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে -দুদক আইনজীবী
  • সংবিধানের ৬৬(২) অনুযায়ী পদ হারানো সময়ের ব্যাপার -জেড আই খান পান্না

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এক মামলায় ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ১০ বছর বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তথ্য গোপনের অভিযোগে বিচারিক আদালতে তার যে তিন বছরের সাজা হয়েছিল, তা বাতিল করেছেন আদালত।

বিচারিক আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাজী সেলিমের আপিল আবেদন খারিজ করে বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ রায় দেয়। সেই সাথে রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। তবে হাইকোর্টের দেয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন হাজী সেলিম।

এদিকে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হওয়ার পরও তার সংসদ সদস্যপদ থাকবে কি থাকবে না সেটা নিয়েও নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে সাংবিধানিক ও আইনি প্রশ্ন। সংবিধানে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে ন্যূনতম দুই বছর সাজায় এমপি পদ খারিজ হওয়ার বিধান রয়েছে। আইন প্রণেতা হয়েও বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়ায় সংসদ সদস্যপদ হারাতে বসেছেন তিনি। দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড হাইকোর্টে বহাল থাকায় এমপি পদ হারাচ্ছেন ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম। সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্যপদ থাকবে না বলে মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, সাজা বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সেটি দুদকের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এরপর স্পিকার হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সংসদ সদস্যপদ বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ বিষয়ে জানতে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমার সংবাদকে বলেন, যেহেতু তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সম্পদ অবৈধভাবে কুক্ষিগত করার দায়ে সাজা হয়েছে এবং সেটা দুই বছরের অধিক তাই সংবিধান ও আইন অনুযায়ী তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারেন না। সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, কেউ যদি নৈতিক স্খলনজনিত ও ফৌজদারি অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয় তবে তার সংসদ সদস্যপদ থাকবে না।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না আমার সংবাদকে বলেন, যেহেতু দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের সাজা হাইকোর্টেও বহাল রয়েছে এবং এটা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ তাই সংবিধানের ৬৬ এর (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার সংসদ সদস্যপদ হারানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

সংবিধানে যা আছে : সংবিধানে সংসদ সদস্যপদ বাতিল-সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি কোনো উপযুক্ত আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা করেন, তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর যদি দায় হইতে অব্যাহতি লাভ না করেন, তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন, তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তিনি যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন সংসদের অনুমতি ছাড়া তিনি যদি একাধিক্রমে ৯০ দিন অনুপস্থিত থাকেন। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় আইনিভাবে পাপুল আর সংসদ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন না। কেননা সংসদ সদস্য হিসেবে অযোগ্যতা নিয়ে সংবিধানে যেসব বিধান রয়েছে সেগুলো সবই তিনি করেছেন। যেহেতু তিনি বিদেশের আদালতে দণ্ডিত এবং বন্দি এখন তাকে সেখানেই আইনি মোকাবিলা করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।

এদিন আদালতে হাজী সেলিমের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার, আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান মনির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তামান্না ফেরদৌস। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

জানা যায়, গতকাল সকালে হাইকোর্টে আপিল আবেদনের রায় পড়া শুরুর ছয় মিনিটের মধ্যেই চকবাজারের বাসা থেকে বের হয়ে যান ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিম। এদিকে সাংসদ হাজী সেলিমের গাড়ি বের হওয়ার তিন মিনিট আগে তার ব্যবহূত কালো রঙের আরেকটা গাড়ি তার বাস ভবন থেকে বের হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে গাড়ি দুটি চকবাজার থেকে রওনা হয়ে পলাশীর দিকে যায়। তবে হাজী সেলিম ঢাকার বাইরে বেড়াতে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এর আগে হাজী সেলিমের করা আপিলের ওপর ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। ধার্য দিনে সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের করা আপিলের ওপর এ রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চ। ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার সাজা বাতিল করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টে ওই আপিল (হাজী সেলিমের) পুনরায় শুনানি করতে বলা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর ওই আপিলের শুনানি হয়নি। সমপ্রতি আপিলটি শুনানির উদ্যোগ নেয় দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে থাকা মামলার যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেন। এরপর কয়েক দিবস শুনানি শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিলটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

আমারসংবাদ/জেআই