Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বছরজুড়ে চলবে যক্ষ্মার সচেতনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ৯, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


বছরজুড়ে চলবে যক্ষ্মার সচেতনতা
  • করোনার চেয়ে যক্ষ্মা আরও বেশি ভয়ংকর সংক্রামক রোগ -জাহিদ মালেক, মন্ত্রী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
  • অস্ত্রোপচার-সংক্রান্ত যক্ষ্মা নির্ণয় ও প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে -অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে  ৯৬ শতাংশ সাফল্য এসেছে -অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম, লাইন ডিরেক্টর, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

যক্ষ্মা পুরোনো সংক্রামক রোগ। সামাজিক সচেতনতা আর রোগী শনাক্তের অভাবে দীর্ঘদিনেও রোগটি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। দেশে মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ এই যক্ষ্মা। দেশের মোট মৃত্যুর হিসেবে যক্ষ্মা সপ্তম অবস্থানে। দেশে তিন লাখেরও বেশি রোগী রয়েছে। প্রতিবছর অন্তত এক লাখের বেশি রোগী বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় কমে এসেছে মৃত্যু। এক সময় যক্ষ্মায় প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হলেও এখন সংখ্যাটা ৪০ হাজারের নিচে নেমেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসেনি যক্ষ্মা।

পরিসংখ্যান বলছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার চেয়েও ভয়াবহভাবে যক্ষা্ম সংক্রমিত হচ্ছে। এক বছরে করোনায় সাড়ে আট হাজার লোকের মৃত্যু হলেও যক্ষ্মায় ৪০ হাজারের বেশি মারা যাচ্ছে। কিন্তু তবুও যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতনতার কথা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে সরকার বদ্ধপরিকর। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে যক্ষ্মাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হলো বছরব্যাপী যক্ষ্মা সচেতনতামূলক কর্মসূচির। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের মাঠকর্মী পর্যন্ত অংশ নেন এতে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা ভাইরাসের চেয়ে ভয়ংকর রোগ যক্ষ্মা। বছরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক বছরে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ মারা গেছে। তবে, দুটি রোগের লক্ষণেই যথেষ্ট মিল রয়েছে। রোগ ছড়ানোর উপায়ও প্রায় একই ধরনের। দুটি রোগের ক্ষেত্রেই ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটে। এক্ষেত্রে আমরা যক্ষ্মাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেই না। কিন্তু কোনো রোগই আসলে ছোট নয়। কোনো রোগকেই অবহেলা করা উচিৎ নয়। আমরা এক সময় মনে করতাম সংক্রামক রোগে বেশি মানুষ মারা যায়, কিন্তু সেটাই এখন নিয়ন্ত্রণে। আর এদিকে অসংক্রামক রোগ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সুতরাং আমাদের যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য খাতকে কখনোই গুরুত্ব দেইনি। শুধু আমরা নই, সারা বিশ্বই স্বাস্থ্য নিয়ে এতোটা ভাবেনি। কিন্তু করোনা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেয়া কতোটা প্রয়োজনীয়। করোনা আমাদের শিখিয়েছে স্বাস্থ্যকে অবহেলা করলে একটা জাতির কী অবস্থা হয়।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ কম। এটা বাড়াতে হবে। এই খাতে বিনিয়োগ করলে ১০ গুণ ভালো সেবা পাওয়া যায়। করোনায় পৃথিবীর ১২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে এখন পর্যন্ত। বাংলাদেশের ১২ থেকে ৩০ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো বিশ্বের যেসব দেশ করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে তাদের অর্থনীতি এখনো ভালো অবস্থানে রয়েছে। যারা করোনাকে অবহেলা করেছে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লোকসান গুণতে হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আমরা দেশ থেকে টিবি নির্মূল করতে চাই। কিন্তু দিনে দিনে এর জটিলতা বাড়ছে। বিশেষ করে হাড়, অন্ত্র, জরায়ু এবং অস্ত্রোপচারস্থলে যক্ষ্মার সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে, যা নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে অস্ত্রোপচারসংক্রান্ত যক্ষ্মা নির্ণয় ও প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, যক্ষ্মা শুধু নির্দিষ্ট কোনো একটি অঙ্গের রোগ নয়। যক্ষ্মা হয় না, শরীরে এমন অঙ্গ খুব কমই আছে। শতকরা ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা ফুসফুসেই হয়ে থাকে। তাই যক্ষ্মা নির্মূলে সবাইকে এ তথ্য জানাতে হবে যে, যক্ষ্মা ওষুধ খেলে ভালো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. সামিউল ইসলাম বলেন, একজন যক্ষ্মা রোগী থেকে কমপক্ষে ছয়জনে রোগটি ছড়াতে পারে। তাই কোথাও একজন যক্ষ্মা রোগী পাওয়া গেলে তার সম্পৃক্ত কমপক্ষে ছয়জনকেই পরীক্ষা করাতে হবে। করোনার কারণে যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচিতে কিছুটা শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশ যক্ষ্মা নির্মূলে যথেষ্ট সফল।

তিনি বলেন, যক্ষ্মা শনাক্তকরণই আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। যক্ষ্মায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে  ৯৬ শতাংশ সাফল্য এসেছে। জটিল যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একশ উপজেলায় ডিজিটাল এক্সরে স্থাপন করা হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

আমারসংবাদ/জেআই