Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ফের বাড়ছে সংক্রমণ

মাহমুদুল হাসান

মার্চ ১০, ২০২১, ০৮:২০ পিএম


ফের বাড়ছে সংক্রমণ
  • স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেপরোয়া চললে করোনা সংক্রমণ বাড়বেই -জাহিদ মালেক, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
  • হঠাৎ কেন সংক্রমণ বাড়ছে সে বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো তথ্য নেই -অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার খুব বেশি ভয়াবহভাবে বাড়বে না -অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সাবেক উপাচার্য, বিএসএমএমইউ

করোনা সংক্রমণের এক বছর পেরিয়ে গেলো। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভাইরাসটির প্রকোপ বাংলাদেশে কম ছিলো। তবুও প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের নমুনায় করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। যদিও তারা অধিকাংশ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষের মনে আজও শোকের মাতম চলছে। যদিও সম্প্রতি করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্তাদের। তবে সম্প্রতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিপরীত চিত্র ফুটে ওঠেছে। শীতে বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশে কমেছে।  এখন আবার শীত কেটে যাচ্ছে অন্যদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২ শতাংশের নিচে নেমে আসা সংক্রমণ হার এখন প্রায় ৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

চলতি মাসের গত ১০ দিনে প্রায় সাড়ে চারশ রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। মাসের পয়লা দিন যেখানে ৫৮৫ জনের নমুনায় ভাইরাসটির উপস্থিতি মিলেছিল; সেখানে গতকাল বুধবার এক হাজার ১৮ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলে। প্রতিদিন এভাবেই সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পাওয়া আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। কিন্তু কেন হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ছে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনই তারা জানাতে পারছেন না। এ জন্য গবেষণায় জোর দিচ্ছেন তারা। সেই সাথে ধারণা করছেন, দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগের পর সাধারণ মানুষের চলাফেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব অনেকে ভুলে গেছে। ফলে অধিকাংশ মানুষ ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তাই সংক্রমণ হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি দেশে ব্রিটেনে উচ্চমাত্রায় ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কারণেও করোনা সংক্রমণ গরমে কিছুটা বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট সরকারের শীর্ষ কর্তারাও এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন পরিকল্পনা তৈরি করছেন। সাধারণ মানুষের বেপরোয়া চলাফেরাকেও দায়ী করছেন। তারা বলছেন, মানুষ করোনাকে অবহেলা করায় নিয়ন্ত্রণে থাকা ভাইরাসটি আবারো সক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। সবাই একটু সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, মাস্ক পরিধান করলে ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে করোনা সংক্রমণ আগের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। নয়তো গরমে করোনা রোগী আরও বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতকাল আরও এক হাজার ১৮ জন নতুন করোনা রোগীসহ এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ১০৫ জন। তার মধ্যে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৬১৩ জন রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ ছাড়াও গত একদিনে সাতজনসহ এ পর্যন্ত আট হাজার ৪৯৬ জন করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার বিনামূল্যে গণটিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৭৮ জন মানুষ টিকার জন্য আবেদন করেছেন। তার মধ্যে গতকাল এক লাখ চার হাজার ৯৯০ জন টিকা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫৩ জন মানুষ করোনা ভাইরাস প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে ২৬ লাখ ২৬ হাজার ২৬৫ জন পুরুষ ও ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৬৮৮ জন নারী টিকা গ্রহণ করেছেন। মোট টিকাগ্রহীতার মধ্যে ৮৭২ জনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গঠিত জাতীয় করিগরি কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন ভাইরোলজিস্ট হিসেবে মনে হচ্ছে গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে পারে। লক্ষ্য করে দেখেছি শীতপ্রধান দেশে শীতে ভাইরাসের সংক্রমণ হার বেড়েছিল। তখন আমাদের দেশে সংক্রমণ হার কমতে ছিলো। চলতি মাসে শীতে কেটে গিয়ে গরম পড়তে শুরু করেছে আর একটু একটু করে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করেছে। তবে এটা খুব বেশি ভয়ঙ্করভাবে বাড়বে না।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আমরা বেশ কয়েকটি ইউকে ভ্যারিয়েন্ট আইডেন্টিফাই করি। ইউকে-তে যে ভ্যারিয়েন্ট, তার হুবহু ছিলো। এই পেশেন্টরা আমাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন, আমরা তাদের আইসোলেশনে রেখেছি। ইউকের মতো আমাদের এখানে স্প্রেডিং দেখিনি। পৃথিবীর ৮০টি দেশে এটি দেখা গেছে। পৃথিবীর বহু দেশে সংক্রমণ যে বেশি হয়েছে, বিষয়টি এমন না। ইউকের মতো কোথাও হয়নি। আমাদের এই অঞ্চলে সেরকম স্প্রেডিং ক্যাপাসিটি অর্জন করেনি বলেই আমাদের ধারণা।’

তিনি বলেন, ‘ইউকে থেকে যারা আসছে তাদের প্রত্যেককে টেস্ট করিয়ে যাদের পজেটিভ আসছে, তাদের স্যাম্পল সিকুয়েঞ্চিং করছি। নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে নিয়মিত ফলোআপ করছি। এটা করেই আমরা কয়েকটি পেয়েছি। সেটা অব্যাহত রয়েছে। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করে যাদের কন্ট্রাক্টে এসেছে তাদের ফলোআপে ১৪ দিন রেখে আমরা রেপিডেট টেস্ট করিয়েছি। তেমন কিছু পাইনি। আমরা এই ভ্যারিয়েন্টটির সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। তবে হঠাৎ কেন এই সংক্রমণ বাড়ছে সে বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো তথ্য নেই। আমরা মনে করছি, মানুষ উদাসীনভাবে চলছে। বিয়েশাদি, সামাজিক অনুষ্ঠানে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। সেই কারণে শনাক্তের হার বাড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে দুই ব্যক্তির শরীরে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনার নতুন ধরনের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। সেটার জিনোম সিকোয়েন্স করেই জানা গেছে। এটার আরও জিনোম সিকোয়েন্স করছে সায়েন্স ল্যাব, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবিসহ বেশ কয়েকটি ল্যাব। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। করোনার টিকা নতুন ধরনের করোনাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হার ইদানিং বাড়ছে। কেন বাড়ছে? আমাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। অনেকেই মাস্ক পরতে চায় না। যেভাবে পর্যটন এলাকা কক্সবাজার, সিলেট মানুষ সমাগত হচ্ছে এভাবে বেপরোয়াভাবে চললে করোনা সংক্রমণ বাড়বেই।’

তিনি বলেন, ‘শুধ ভ্যাকসিন নিলে চলবে না। পার্সোনাল প্রটেকশন বাড়াতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।’

আমারসংবাদ/জেআই