Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষায় ‘পথচলা’ শুরু বাংলাদেশ পুলিশের

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান

মার্চ ১০, ২০২১, ০৮:২০ পিএম


বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষায় ‘পথচলা’ শুরু বাংলাদেশ পুলিশের

‘দুর্নীতি এবং দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা জয়ী না ব্যর্থ হবো, তোমরাই বলো? পুলিশের সর্বোচ্চ পদে আসীন ড. বেনজীর আহমেদ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন নিজ বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ পদের কনস্টেবলদের উদ্দেশে। সম্মিলিত কণ্ঠে উচ্চারিত হলো— ‘আমরা জয়ী হবো’। অন্তরের মর্মমূল থেকে উৎসারিত এমন কণ্ঠে সেদিন কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন ডিআইজি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত আইজিপিরাও। দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের চেনা সেই সংস্কৃতিকে বিদায় জানিয়ে আলোকিত স্বপ্নময় স্পৃহাকে জাগিয়ে তুলতেই শত কণ্ঠে ঐক্য শক্তির স্ফুরণ ঘটানোর অভিনব চিত্রকেই পুলিশপ্রধান প্রকারান্তরে উপস্থাপন করলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনে; গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে একটি জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে।

বাস্তবিক এই চিত্রটি কী কেবলই একদিনের বা কোনো একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চের? হিসাবের খেরোখাতা বলছে, চিত্রটি নিত্যকার। বাতাসের ভায়োলিন উল্টিয়ে আইজিপি হিসেবে সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, কুতুবদিয়া থেকে তেঁতুলিয়ায়— পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১১ মাসের প্রতিটি দিনের দিনপঞ্জিকার প্রতিটি পাতায় এমন সব শব্দগুচ্ছতেই নিজেকে মেলে ধরেছেন ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।

‘জনগণের সাথে দুর্ব্যবহারকারী, দুর্নীতিবাজদের আমরা পুলিশে দেখতে চাই না।’ দুর্নীতি রুখতে পুলিশের সব সদস্যকে হুইসেল ব্লোয়ার (বাঁশিওয়ালা) হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। নিজের সুস্পষ্ট এমন বক্তব্যের মাধ্যমে  নিজ বাহিনীর কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যেই ডে-নাইট কাজ করে চলেছেন ড. বেনজীর। জঞ্জাল পরিষ্কারের মাধ্যমে জনগণের পুলিশ গড়ে তুলতে সুদৃঢ় এমন আশাবাদের আলোকবর্তিকার মতোই প্রতিনিয়ত প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারে তিনি উদ্বেলিত করে চলেছেন নিজ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে। আইজিপি মনে করেন, প্রত্যেক পুলিশ সদস্য হতে পারেন একেকজন ‘চেঞ্জ এজেন্ট’। একজন পুলিশ সুপার হতে পারেন একজন ‘চেঞ্জ মেকার’। দেশের জন্য, সমাজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য পরিবর্তন নিয়ে আসার মধ্যে দিয়ে ভালো কাজে ‘বেস্ট অব দ্য বেস্ট’ হতে পারেন মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের প্রথম প্রতিরোধ গড়ায় নেতৃত্ব দেয়া দেশপ্রেমিক বাহিনীর প্রতিটি সদস্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক প্রাজ্ঞময় নেতৃত্বে ২০৪১ সালের উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতেই নিজের লক্ষ্য স্থির করে বাস্তবিক অর্থেই  কঠিন চ্যালেঞ্জকেই আইজিপি আলীঙ্গন করেছেন হাসিমুখেই। পিতা মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীতে তার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার পুলিশকে সর্বোচ্চ স্তরে উত্তীর্ণ করার টার্গেটেই আন্দোলিত করেছেন সোয়া দুই লাখ সদস্যের বিশাল বাহিনীকে। বঙ্গবন্ধুর অনিঃশেষ প্রেরণায় নিজেদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে ঐতিহাসিক এই পথযাত্রায় সংযোজন করেছেন নতুন প্রাণাবেগের। সূত্রপাত করেছেন নতুন এক অধ্যায়েরও। অতিমারি করোনার দুঃসময়ে নিজেদের কল্যাণকর্মের শত শত দৃষ্টান্তকেও ‘পুলিশ অভিভাবক’ দীপ্তিমান করেছেন সমান তালেই। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বান্দরবন, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকা সফরকালে পুলিশে দুর্নীতি রুখে দেয়া এবং নিজেদের আচরণে আমূল পরিবর্তন আনতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দুর্নীতি করলে পুলিশে থাকা যাবে না। বিট পুলিশিংয়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। মাদকমুক্ত পুলিশ গড়তে ডোপ টেস্ট চালুর পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে নিজেদের শূন্য সহিঞ্চুতার নীতির কথাও পুনরুচ্চারিত করেছেন। নিজের মোহন জাদুতে তুমুল আলোড়ন তোলার এসব অমিয় বার্তায় প্রগাঢ় লাল আলতার রঙে পরিবর্তনের মানসিকতারই অটল দৃঢ়চিত্ত রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। চিরায়ত বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে মগজ থেকে খসে অনেকটাই অতলে হারিয়ে যেতে বসা নীতিবোধ ও নৈতিকতার বীজ প্রতিটি সদস্যের অন্তরে বপণের মাধ্যমে দ্বিগুণ অত্মশক্তিতে উজ্জীবিত হতেও বলেছেন পুলিশের ৩৯তম এই আইজি। সময় ও যুগের প্রয়োজনেই নিজেদের পরিবর্তন হতে বলেছেন। নিজেদের কর্মের মাধ্যমে ঘুণে ধরা চিরাচরিত রীতির চেহারা পাল্টে দিতে পুলিশের আইজি জানিয়ে দিয়েছেন— পুলিশের চাকরি করতে হবে ভালোবেসে। চাকরিতে ‘প্রাইড’ নিয়ে আসতে হবে, যাতে আমাদের সন্তানরা গর্বভরে বলতে পারে, আমার বাবা পুলিশ ছিলেন, আমার মা পুলিশ ছিলেন। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘জনগণের পুলিশ’ হতে চাই। ‘পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমদ নিজের সম্মোহনী নেতৃত্বের মাধ্যমে সব রকমের অপবাদ গুচিয়ে নিজের বিশাল বাহিনীটিকে যেনো কার্যত দিয়েছেন মুক্তির দিশা। বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন— ‘মানুষ বিপদে পড়ে পুলিশের কাছে আসে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে, তাদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। মানুষকে ভালোবাসলে তাদেরও ভালোবাসা পাওয়া যায়। করোনাকালে আমরা এর প্রমাণও দেখেছি।’ নিজের অবিনাশী এমন উচ্চারণের মাধ্যমে আশাবাদের স্বর্ণালোকে আলোকবর্তিকার মতোই নিজেকে জ্বলজ্বল করছেন প্রতিটি সদস্যের চিত্তে। প্রেরণাদায়ক চিরন্তর কল্যাণমুখী বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ন্যায় এবং সুবিচারের অমোঘ মন্ত্রকে উজ্জ্বলতরও করেছেন। পুলিশের নতুন অভিযাত্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও হিমাদ্রিস্পর্শী এক ব্যক্তিত্বে যেমন নিজেকে পরিণত করেছেন তেমনি নিজের আপসহীন অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দুষ্টচক্রকে চিরতরে নির্মূল করতে চাইছেন’, এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিজেদের দায়িত্বের উদাসীনতার অদৃশ্য ধারাকেও বর্জন করতে বলেছেন পুলিশপ্রধান। নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি জনবান্ধব প্রতিচ্ছবি উপস্থাপনের মাধ্যমে স্বস্তি ও শান্তি নিশ্চিত করতেও ভিন্ন রকম এক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত। আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ড. বেনজীর দুর্নীতি রোধ, মাদকমুক্ত, পুলিশের নিষ্ঠুরতা বন্ধ, বিট পুলিশিং ও পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ— এ সুনির্দিষ্ট পাঁচটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এসব লক্ষ্য পূরণের চর্চায় পরিপূর্ণ মনোনিবেশ করেছেন। সর্বদা ব্যপ্ত করেছেন বিজয়ী হওয়ার মানসিকতা। অর্থাৎ, পুলিশের আকাশে কেবলই জ্বলজ্বল করবে মানবতার নক্ষত্র।

এখানকার উছলে পড়া মায়াবী আলোয় দূরীভূত হবে গুটিকয়েক সদস্যের অপকীর্তির অন্ধকার ছায়া। পুলিশ জনতার কার্যকর সেতুবন্ধনে রচিত হবে নতুন এক সোনালি ভোরের, এমন স্বপ্নই যেনো দীপ্যমান করেছেন প্রতিটি সদস্যের চোখের তারায়। পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আমার সংবাদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপদানের আশাবাদে পুলিশপ্রধান ড. বেনজীর আহমেদ ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’ স্লোগানকেও কোয়ালিটি সার্ভিসের মাধ্যমে উদ্ভাসিত করেছেন জনমানসে।’ লোভী মনোবৃত্তির লোলুপ-করাল গ্রাস চিরতরে মুছে রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি প্রান্তের পুলিশ সদস্যকে স্বচ্ছতা ও সৃষ্টিশীলতার নবতর তরঙ্গে এবং প্রতীতিতে জাগিয়ে তুলেছেন। জনমুখী ও সুকীর্তিতে নিজেদের বলীয়ান করতে সরল, সহজ ও সোজা পথেই প্রতিটি সদস্যকে পরিচালিত হওয়ার বার্তাই দিচ্ছেন আইজিপি, একদিন-প্রতিদিন। পুলিশের আধুনিকতার এই সুমহান রূপকারের জন্য দেশপ্রেমিক বাহিনীটির প্রতিটি সদস্যের কণ্ঠেই যেনো গুঞ্জরিত হচ্ছে কবিগুরুর সেই অমর পিক্তমালা— ‘তিমির-বিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়।’

আমারসংবাদ/জেআই