Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

মান ভালো হলেও হস্তান্তর হয়নি

জাহাঙ্গীর আলম

মার্চ ১১, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


মান ভালো হলেও হস্তান্তর হয়নি
  • আইএমইডি সচিবের ময়মনসিংহের সাত প্রকল্প পরিদর্শন
  • কাজের গতি বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ 

পুলিশ বাহিনীর সদস্য ও পরিবারের উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসাসুবিধা সমপ্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়। ‘বিদ্যমান পুলিশ হাসপাতাল আধুনিকীকরণ প্রকল্পের’ আওতায় ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণকাজও করা হচ্ছে। আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বাস্তবায়ন অগ্রগতি জানতে সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। 

প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা ভবনটির কাজের মান ভালো হলেও কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। হাসপাতালটিতে ৫০টি বেডের সংস্থান রয়েছে। তবে বিভাগীয় শহরের হাসপাতাল হিসেবে এর সংখ্যা অপ্রতুল। এভাবে গত জানুয়ারি মাসে ময়মনসিংহের অসংখ্য প্রকল্প পরিদর্শন করে ধীরগতির প্রকল্পের গুণগত মান বজায় রেখে গতি বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

সূত্র জানায়, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মান যাচাই করতে ও বাস্তব চিত্র জানতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সারা বছরই বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করে। অন্যান্য বিভাগের মতো আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী জানুয়ারি মাসেও ময়মনসিংহের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এর মাধ্যমে কোনো প্রকল্পের কি অবস্থা তা উল্লেখ প্রতিবেদনে করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের পুলিশ হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে। এর কাজের মান ভালো হয়েছে। হাসপাতালটিতে ৫০টি বেডের সংস্থান রয়েছে। কিন্তু বিভাগীয় শহরের হাসপাতাল হিসেবে এর সংখ্যা অপ্রতুল। অপরদিকে হাসপাতালটি তৈরি হলেও তা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তাই ব্যবহারের জন্য দ্রুত হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাঁচটি র্যাব কমপ্লেক্স এবং একটি র্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহে র্যাব-১৪ কমপ্লেক্সও নির্মাণ হচ্ছে। এটিও ৩০ জানুয়ারি পরিদর্শন করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পুলিশ অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি র্যাব কমপ্লেক্স ও একটি র্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল স্থাপনের সংস্থান রয়েছে, যার একটি র্যাব-১৪ কমপ্লেক্স ময়মনসিংহ স্থাপন। সরকারি অর্থায়নে কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২০ সালের জুলাই মাসে। নির্ধারিত সময় পার হয়েও ছয় মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো কাজ শেষ হয়নি। তাই প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে চারটি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজও হচ্ছে। তা পরিদর্শন করা হয়।  প্রকল্পের আওতায় প্রধান কাজগুলো ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট ছয়তলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণকাজ। এর অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট ছয়তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ। এর অগ্রগতি ২০ শতাংশ। চারতলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা ছাত্রী হোস্টেল ভবন নির্মাণকাজ। এর অগ্রগতি হয়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। ছয়তলা ভিতসহ ছয়তলা ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণকাজ। অগ্রগতি ২০ শতাংশ। এ ছাড়া পাঁচতলা ভিতবিশিষ্ট পাঁচতলা ডরমিটরি ভবন নির্মাণ এবং তিনতলা স্টাফ কোয়ার্টার ভবন নির্মাণ করার কথা। কিন্তু কাজের কোনো অগ্রগতি নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুনে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা।  প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ধীরগতির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। প্রকল্পটির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আরও নিবিড় তদারকি করা প্রয়োজন। বিভাগীয় শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজের বর্তমান অবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়।

সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় পানির উৎস স্থাপন প্রকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট বরাদ্দ ছিলো তিন হাজার ৭৭০টি। কাজের অগ্রগতির হার ৫৭ শতাংশ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে প্রকল্পটি। ৩১ জানুয়ারি পরিদর্শন করে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের কার্যক্রম সরাসরি জনসাধারণের মৌলিক চাহিদার সাথে সম্পর্কিত। তাই প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে এবং এই বিষয়ে বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিকে অবহিত করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে পরামর্শ দেয়া হয়। ওইদিন জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (ময়মনসিহং জোন) উন্নয়ন কাজও পরিদর্শন করা হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৫.৫৪ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারের কাজে গতি আনতে এবং কাজের গুণগত মানের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। ত্রিশাল-বালিপাড়া-নান্দাইল (কানুরামপুর) জেলা সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের উন্নয়নকাজও পরিদর্শন করা হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ জেলার ১৩.৪৫ কিলোমিটার এবং কিশোরগঞ্জ জেলার ৯ কিলোমিটার সড়ক ৩.৭ মি./৫.৫০মি. থেকে ৭.৩০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮৫.৬১ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া ভালুকা-গফরগাঁও-হোসেনপুর সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের উন্নয়নকাজ পরিদর্শন করা হয়। এই প্রকল্পটিও ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়ন করার কথা।

প্রায় ২১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ জেলায় ভালুকা ও গফরগাঁও উপজেলার ৩২-৮৫ কিলোমিটার সড়ক ১০.৩০ মিটার চওড়া করা হবে। এ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত করা যাবে না। আরও অন্তত ছয়মাস প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে। বিষয়টিও বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করা দরকার। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ এবং গুণগত মান বজায় রেখে কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই