ঢাকা
শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,
এম এ আহাদ শাহীন
মার্চ ১১, ২০২১, ০৭:৫৫ পিএম
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দৌরাত্ম্য চার কার্যদিবস পর কমেছে। বড় মূলধনী কোম্পানির মধ্যে ব্যাংক খাতে বেশির ভাগের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে সূচকেও যোগ হয়েছে পয়েন্ট। তবে বিনিয়োগকারীরা এখনো বাজার পর্যবেক্ষণে। এ কারণে কমেছে লেনদেন। গত বুধবার দ্বিতীয় ব্যাংক হিসেবে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক আর চতুর্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে লংকাবাংলা ফিন্যান্স।
এই দুটি প্রতিষ্ঠানই আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করেছে মহামারিকালে। লঙ্কাবাংলার লভ্যাংশ আগের বছরের সমান আর শাহজালাল সামান্য বেশি দিয়েছে। লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বিমা খাতের রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সও। মহামারিকালে এই কোম্পানিও মুনাফা করেছে আকর্ষণীয়। সপ্তাহের শুরু থেকে আলোচনায় থাকা বহুজাতিক ও দামি শেয়ারগুলোর দর গতকাল বৃহস্পতিবার কমেছে। রেকিডবেনকিউজার লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫০ টাকা ৭০ পয়সা। গত ৩ মার্চ থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর চার হাজার ৫৪৫ টাকা থেকে বেড়ে চার হাজার ৭৫০ টাকায় উঠে। গতকাল দর কমে হয়েছে চার হাজার ৭০০ টাকা। ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৩৪ টাকা ১০ পয়সা। দুই হাজার ৮০০ টাকা থেকে দর বেড়ে উঠেছিল দুই হাজার ৯৬৩ টাকায়। গতকাল দর পতন হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯২৯ টাকায়। ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার দরও গত চার কার্যদিবসে বেড়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে দশমিক ১৮ শতাংশ। লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৩৫ টাকায়। তবে এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বোচ্চ দুই হাজার ১৪৬ টাকায় উঠেছিল।
বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার দর কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বা ১২০ টাকা। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর ছিলো এক হাজার ৯৩০ টাকা। গতকাল লেনদেন শেষে হয়েছে এক হাজার ৮০৫ টাকা। লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডে শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা ১৯ টাকা ৩০ পয়সা। দর বাড়তে থাকা ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের শেয়ার দর ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ বা ২৫ টাকা ৫০ পয়সা কমেছে। রেনেটা লিমিটেডের শেয়ার দরও কমেছে বৃহস্পতিবার। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর দশমিক ৬৫ শতাংশ বা শেয়ার প্রতি ৭ টাকা ৮০ পয়সা করে কমেছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার আমার সংবাদকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নিয়ে পুঁজিবাজারে গুজব আছে। এগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে। কিন্তু যে হারে শেয়ারের দর বেড়েছে তারপর আর বাড়া উচিত না। এখন মূলত এসব কোম্পানি থেকে মুনাফা উত্তোলনের কারণেই দর কমেছে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো। সূচক ও লেনদেনে যে স্থিতাবস্থা আছে তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিনিয়োগকারীরা চাইবেই শেয়ারের দর বাড়লে তা বিক্রি করে মুনাফা তোলে নেয়ার। এর জন্যই লেনদেন মাঝে মাঝে কমে আসে। একই বক্তব্য দিলেন পুঁজিবাজারের বিশ্লেষক আবু আহমেদও। তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিমা কোম্পানিগুলোর অর্থবছর শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে। ফলে বলা চলে এটা লভ্যাংশ ঘোষণার মাস। আগামী আরও দুই মাস এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ফলে যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছে তারা এখন অপেক্ষা করবেন কোম্পানির লভ্যাংশের জন্য। তিনি বলেন, বাজার ভালো যাচ্ছে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নির্দেশনা আছে সেটি অনেকটাই লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করছে বিনিয়োগকারীদের। সেটি দ্রুতই সমাধান করা উচিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনে এগিয়ে ছিলো বেক্সিমকো লিমিটেড। এদিন কোম্পানিটির এক কোটি ১৫ লাখ ১৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। দ্বিতীয় স্থানে ছিলো লংকাবাংলা, যার দুই কোটি ২৮ লাখ চার হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকায়। রবি আজিয়াটার লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে এক কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার, যার বাজার মূল্য ছিলো ৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সামিটপাওয়ার লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৬ লাখ ৯৮ হাজার, যার বাজার মূল্য ছিলো ৪৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬৮ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৫ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৪ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৫৪ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১০টির, কমেছে ১২২ টির ও পাল্টায়নি ১১৫টির। লেনদেন হয়েছে ৮০৯ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৮৭৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৭০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৯ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ২১৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৭টির, কমেছে ৮৭টির ও পাল্টায়নি ৬৫টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৩৯ কোটি টাকা।
আমারসংবাদ/জেআই
