Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

একক নাম কেন্দ্রে হতাশ বঞ্চিতরা

রফিকুল ইসলাম

মার্চ ১২, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


একক নাম কেন্দ্রে হতাশ বঞ্চিতরা

‘সারা জীবন দলের জন্য শ্রম দিলাম, মেধা দিলাম, দুর্দিনে মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিলাম,  বিএনপি-জামায়াত নেতাদের কাছে নির্যাতনের শিকার হলাম; অথচ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন তুলতে পারলাম না। তাহলে কি মনোনয়ন তোলার যোগ্যতা আমার নেই! আমি কি আওয়ামী লীগের কেউ নই! বঙ্গবন্ধুর নৌকা কি এভাবে বিতরণ করা হয়! শেষ বয়সে আওয়ামী লীগ থেকে এমন অবহেলা পাবো, তা তো কখনো ভাবিনি। আমার প্রশ্ন, আওয়ামী লীগের কী যোগ্য প্রার্থীর এতই অভাব, একক প্রার্থীর তালিকা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।’ গতকাল ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এভাবেই মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নির্মল চন্দ ঘোষ।

তিনি অভিযোগ করে আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তা থাকার পরও জেলার নেতারা, আমার নাম কেন্দ্রে পাঠায়নি। তারা নিজেদের পছন্দের লোকের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। এটা খুবই হতাশাজনক।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলায় মোট ৩২টি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে আগামী ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে ৩১টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা একক নাম দিয়ে প্রার্থীদের রেজ্যুলেশনের তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। ওই তালিকায় থাকা সবাই দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে জমাও দিয়েছেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা প্রতিটি ইউনিয়নে ত্যাগী, পরিশ্রমী, যোগ্য, জনপ্রিয় এবং দলের দুর্দিনে মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে নিজ নিজ বলয়ের প্রার্থীদের একক নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। যার মধ্যে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ও নানামুখী বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত নেতারাও রয়েছেন। ফলে ক্ষুব্ধ প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়নবঞ্চিতরা। তারা বলছেন, বড় অংকের টাকায় মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে। যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। তারা বলছেন, গ্রহণযোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের নামই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস কাজী জাফর উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জন্য তৃণমূল থেকে পাঠানো তালিকা থেকে যোগ্য ও ক্লিন ইমেজের নেতাদের নৌকা দেয়া হবে। যারা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে যুক্ত, সাধারণ ভোটারের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই; তাদের কোনোভাবেই মনোনয়ন দেয়া হবে না।’  এ বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত আমরা সবসময় সম্মান করি। অবশ্যই যোগ্যদের নাম পাঠিয়েছে।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় প্রার্থীদের একক নাম থাকায় অনেকটাই নিশ্চিত সবাই। তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ভোটের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোনো কোনো প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা মিষ্টি বিতরণ করেছেন নির্বাচনি এলাকায়। তৈরি করেছেন ব্যানার-ফেস্টুন। দলীয় কর্মী বা সাধারণ জনগণের মাঝে নিজেদের নৌকার মনোনীত প্রার্থীও দাবি করছেন কেউ কেউ। জানতে চাইলে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ২ নং বিনয়কাঠি ইউনিয়নের নৌকা মনোনয়নপ্রত্যাশী মইন উদ্দিন পলাশ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমি নৌকাপ্রত্যাশী। কেন্দ্রেও আমার নাম পাঠানো হয়ছে। তবে, কিভাবে আমার একক নাম পাঠানো হয়েছে তা ঠিক বলতে পারবো না। এটি জেলা আওয়ামী লীগ বলতে পারবে।’ জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা যোগ্য প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন বলে দাবিও করেন তিনি। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা কেন্দ্রে একক নাম পাঠানোর কারণে কর্মীদের মাঝে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ফলে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে মুখোমুখি হতে পারে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। শুধু ঝালকাঠি নয়, প্রথম ধাপের বেশ কিছু স্থানে এমন একক নাম পাঠিয়েছেন জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। অথচ স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের বলয়মুক্ত ও মনোনয়নবাণিজ্যমুক্ত রাখতে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কিছুটা উন্মুক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা।

আ.লীগ সূত্র জানায়, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ‘মাইম্যান’ প্রার্থী করতে গিয়ে ‘জনপ্রিয়দের’ বাদ দিয়ে কেন্দ্রে তালিকা পাঠান স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতারা। এমন অভিযোগ জমা পড়েছে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে। ফলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় ফরম বিক্রি উন্মুক্ত করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি চায়, যেকোনো মূল্যে ত্যাগী, পরিশ্রমী ও দলীয় জনপ্রিয় প্রার্থীদের হাতে নৌকার দায়িত্ব দিতে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে এভাবে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ উন্মুক্ত করেছিল আওয়ামী লীগ। 

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের হাতে নৌকা দেয়া হবে। বিতর্কিতদের কোনোভাবেই নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যারা দলের সিদ্ধান্ত বাইরে গিয়ে ব্যক্তিবলয় তৈরি করতে চায় নিজ পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন নিয়ে দিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। এটা আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত।’ 

এদিকে প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী নির্ধারণ করতে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বসবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ সকাল সাড়ে ১০টায়  প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি।

আমারসংবাদ/জেআই