Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

লজ্জায় থানায় আসছেন না কেউ

মার্চ ১৩, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


লজ্জায় থানায় আসছেন না কেউ
  • গুলশানে একটি পাঁচতারকা হোটেল ও কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার ডিকে ইন্টারন্যাশনাল হোটেলেও ধনাঢ্যদের সঙ্গী হিসেবে ছিলো যাওয়া-আসা, নিকেতনের একটি ফ্ল্যাটে নিয়মিত আড্ডায় শামিল হতেন কতিপয় রাজনৈতিক নেতাও
  • প্রতারিত হয়েছেন এমন যে কেউ-ই থানায় এসে অভিযোগ করতে পারেন। এখন পর্যন্ত অন্যদের কেউই কেন থানায় এসে অভিযোগ করছেন না তা বলা মুশকিল -মৃত্যুঞ্জয় দে সজল, এডিসি, মোহাম্মদপুর জোন

মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। রিয়েলিটি শোর মাধ্যমেই শোবিজ জগতে যার আগমন। শোবিজ জগতের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কায়দায় নিজের রূপ-যৌবনের মুগ্ধতা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলেন এ অভিনেত্রী। বগলদাবা করেছেন এক শ্রেণির বিত্তশালীদের। বাদ পড়েনি প্রভাবশালী কিছু নেতাও। এরই মধ্যে সর্বশেষ কামরুল হাসান নামে এক সৌদি প্রবাসীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকেই তাকে নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে তার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের দীর্ঘ তথ্য।

তবে কামরুল হাসানের করা মামলায় রোমানা ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন ২৮ জনের কথা পুলিশ বললেও এখন পর্যন্ত তাদের কাউকেই সরাসরি থানায় এসে অভিযোগ করতে দেখা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, কামরুল হাসান ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগকারী এখনো থানায় আসেননি। তবে রোমানা স্বর্ণার প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন কেউ চাইলেই থানায় যোগাযোগ করার সুযোগ রয়েছে, রয়েছে অভিযোগ করার সুযোগও।

এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর অভিযোগকারী কামরুল হাসানের স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। যে কারণে অনেকেই ধারণা করছেন, লোকলজ্জার ভয় আর পারিবারিক কারণেই হয়তো অন্য অভিযোগকারীরা এখন আর প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন না।

জানতে চাইলে ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল আমার সংবাদকে বলেন, ‘প্রতারিত হয়েছেন এমন যে কেউই থানায় এসে অভিযোগ করতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত অন্যদের কেউই কেন থানায় এসে অভিযোগ করছেন না তা বলা মুশকিল।’ ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করুক বা নাই করুক— আড়ালে থাকা অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের তথ্য বেরিয়ে আসছে বিভিন্নভাবে। জানা গেছে, ফরিদপুর জেলা সদরের দক্ষিণ টেপাখোলার এ টি এম নজরুল ইসলামের মেয়ে রোমানা স্বর্ণা শোবিজ জগতে থেকেই ছড়াচ্ছিলেন নিজের রূপ-যৌবনের মুগ্ধতা। তার রমণীয় আহ্লাদে সাড়াও দিচ্ছিলেন এক শ্রেণির বিত্তশালী। নাটক, ফিল্ম, শর্টফিল্মেও নিজেকে উপস্থাপন করে বাড়াচ্ছিলেন চাহিদা। একান্তে সময় দিতে গুলশানের লেক সংলগ্ন একটি পাঁচতারকা হোটেল ও কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার ডিকে ইন্টারন্যাশনাল হোটেলেও ছিলো আসা-যাওয়া। ধনাঢ্যদের সঙ্গী হিসেবে রাতের পর রাত এ দুই হোটেলে কাটিয়েছেন স্বর্ণা। কলকাতা ও ঢাকায় একশ্রেণির বিত্তশালীরে সঙ্গে রয়েছে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্কও। এ ছাড়াও নিকেতনের একটি ফ্ল্যাটে ছিলো নিয়মিত আড্ডা। আড্ডায় শামিল হতেন প্রভাবশালী কয়েক নেতাও। অল্প দিনেই বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার লোভে সঙ্গী হতেন বিত্তশালীদের। যে লোভের বাধা মনে করে ২০১৭ সালে স্বামী তানভীর ইউসুফকে ডিভোর্স দেন এক সন্তানের জননী স্বর্ণা। এরপর বিয়ে করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন এক আইনজীবীর। আড়ালেই ঘটা এসব ঘটনা ছাড়াও কথিত রয়েছে, আরেক ট্রাভেল এজেন্সির মালিককেও বিয়ে করেছিলেন স্বর্ণা। যদিও স্বর্ণা এসব স্বীকার করেননি কখনো। সর্বশেষ মাদারীপুরের রাজৈরের শ্রীকৃষ্ণদি গ্রামের আব্দুল মান্নান মাতবরের ছেলে সৌদি প্রবাসী কামরুল হাসানকে বিয়ে করেন তিনি। ধনাঢ্য কামরুল অভিযোগ করেছেন, বিয়ে, ব্ল্যাকমেইলই স্বর্ণার পেশা। ব্ল্যাকমেইল করেই অর্থ-বিত্ত হাতিয়ে নেন এই অভিনেত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা। মোহাম্মদপুর থানায় এ সংক্রান্তে কামরুল হাসানের করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার লালমাটিয়া এলাকা থেকে স্বর্ণাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকেই তাকে নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা।

পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে সৌদি প্রবাসী কামরুলের সঙ্গে পরিচয় হয় স্বর্ণার। পরে ফেসবুকে কথোপকথন। ২০১৯ সালের মার্চে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর কামরুল সৌদি আরবে চলে যান। গাড়ি, ব্যবসা, ফ্ল্যাট কেনাসহ নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে এক কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন স্বর্ণা। সমপ্রতি কামরুল দেশে আসেন এবং স্বর্ণার বাসায় যান। এ সময় স্বর্ণা জানিয়ে দেন, তাকে অনেক আগেই তিনি তালাক দিয়েছেন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হত্যার হুমকিও দেয়া হয় কামরুলকে। প্রবাসী কামরুল হাসান বলেন, ‘স্বর্ণার ব্যবহূত মোবাইল, ঘড়ি, গাড়ি সবই আমার কিনে দেয়া। সে যে দামি গাড়িতে চড়ছে ওটা আমার। তার হাতে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের ঘড়িও আমার দেয়া। হাতে থাকা দুটি আইফোন প্রো-মোবাইল ফোনও আমি কিনে দিয়েছি। সব মিলিয়ে আমার থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বর্ণা।’ তিনি বলেন, ‘এরপর মোহাম্মদপুর থানায় আমার নামে জিডি করে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বলে জানায় স্বর্ণা। কিন্তু বিষয়টি মিথ্যা। সে ডিভোর্স দেয়নি। আমি এমন কোনো পেপার পাইনি। অবশেষে আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’ কামরুল আরও বলেন, ‘দেশে আসার পর স্বর্ণার বাসায় গেলে আমাকে কিছুদিন আটকে রাখে তারা। অথচ স্বর্ণাকে বিয়ে করার কথা শোনার পর আমার আগের স্ত্রীও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।’

রোমানা স্বর্ণার প্রতারণার শিকার ২৮ জনের বিষয়ে তথ্য না দিলেও কামরুল ইসলামের প্রতারিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ডিএমপির ডিসি হারুন অর রশীদ বলেছেন, রোমানা স্বর্ণার বিরুদ্ধে এমন প্রতারণার অনেক অভিযোগ পেয়েছেন তারা। তাদের অনেককেই প্রলোভন দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে সর্বস্বান্ত করেছেন রোমানা। টেলিফোনে প্রতারিতরা এসব অভিযোগ করছেন। আমরা তাদের থানায় আসতে বলেছি। যদিও গতকাল শনিবার পর্যন্ত এমন কেউই অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেননি। এদিকে পুলিশ রোমানা স্বর্ণাকে গত শুক্রবার আদালতে তুললে আদালত রিমান্ড ও জামিন আবেদন নাকচ করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফের কাছে জানতে চাইলে আমার সংবাদকে তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদ এখনো করা হয়নি। তবে রোববার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসবাদ করতে যাবেন। এ ছাড়া কামরুল হাসান ছাড়া অন্য অভিযোগকারীদের কেউ থানায় এসেছিল কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অন্যদের কেউই এখনো অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেননি।’

আমারসংবাদ/জেআই