Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বিএনপির আগুনে জ্বলছে খালেদা!

মার্চ ১৪, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


বিএনপির আগুনে জ্বলছে খালেদা!
  • অসুস্থতা নিয়ে স্বয়ং বিএনপিই বড় আকারে রাজনীতি করে যাচ্ছে 
  • খালেদা জিয়ার ইস্যুতে করণীয় কী এখনো তৃণমূলকে বলছে না হাইকমান্ড
  • জিয়া পরিবারের নারীদের কেউ হতে পারে ক্ষমতার প্রধান- বার্তা তারেকের

ইসির পদত্যাগ নিয়ে সরব ও আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা প্রস্তুতির বার্তা দিলেও এখনো বিএনপির আগুনেই জ্বলছেন সাবেক সেনাপ্রধানের স্ত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বন্দি থেকে গৃহবন্দি অবস্থায়ও খালেদা জিয়ার ইস্যুতে এখনো করণীয় কী, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না দলটি। কিভাবে হবে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা, নাকি সাজা নিয়েই দুর্ঘটনার শিকার হবে এমন প্রশ্ন দলের ভেতরে বাইরে চলমান থাকলেও উত্তর মিলছে না। অসুস্থতার ডেঞ্জার সময়ে থাকা নেত্রী সরকারের করুণার দিকে তাকিয়ে থাকবে নাকি চাপ প্রয়োগ করে সরকারকে বাধ্য করবে লন্ডন থেকে এখনো খালেদা জিয়ার অনুসারীদের জন্য ভালো খবর আসছে না।

দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, জীবন্ত খালেদা জিয়ার প্রভাব সময়ে ক্ষমতা নিয়ে চিন্তা করছে না দলটির নীতিনির্ধারকরা। অসুস্থ নেত্রীকে ক্ষমতার চেয়ার থেকে চির মাইনাসের প্রক্রিয়াই ভেতরে চলছে। হয়ে আছে চূড়ান্ত। বাকি শুধু ঘোষণা। আবার অন্যদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও বড় আকারে রাজনীতি করতে চাইছে স্বয়ং বিএনপির বড় একটি অংশ। বন্দি অবস্থায় খালেদা জিয়ার যদি দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে সরকারের জন্য বড় বিপদ বয়ে আনবে। জনগণ ও আন্তর্জাতিক চাপে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্ব সময়ে যদি খালেদা জিয়ার দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য হবে রাজনীতিতে কালো অধ্যায়। আজীবন আওয়ামী লীগকে খালেদা জিয়ার দুর্ঘটনার দায়ভার ভোগ করতে হবে। চলমান সময়ে আওয়ামী লীগ নয় বিএনপির কৌশলের কাছেই স্বয়ং খালেদা জিয়া আগুনে পুড়ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রায় সমাপ্তি ঘটছে খালেদা জিয়ার! নেতৃত্ব নিয়ে হয়তো আর জনগণের মাঝে আসবেন না তিনি। গুলশান থেকে নয়াপল্টনে গুরুত্ব হারিয়েছে দলটির প্রধান নেত্রীর নির্দেশনা। অভাব জাতীয়তাবাদের চরিত্রেরও। সংস্কারবাদী বাম আদর্শে পরিচালিত হচ্ছে বিএনপি! সরকারের করুণা নিয়ে আপসহীন নেত্রী মুক্তি পাওয়ার পর বয়স, অসুস্থতা ও শারীরিক অবস্থা সব মিলিয়ে আগের জায়গায় নেই খালেদা জিয়া। স্বাভাবিক অবস্থায় তিনি এখন হাঁটতে ও দাঁড়াতেও পারছেন না। সুস্থ হয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসার সক্ষমতা অনেকটাই হারিয়েছেন। সঙ্গে আছে জেল ও মামলা আছে বহু। নিজ দলেই খালেদা জিয়ার অনুগত ও সম্মানের জায়গা কমে গেছে। এখন নানা চাপে পড়ে সম্মান বাঁচাতে অঘোষিতভাবেই দলের হাল ছেলের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা কিংবা সার্বিক বিষয় পরিবার থেকেই দেখা হচ্ছে। অসুস্থতার কোনো বিষয় দলীয় সিদ্ধান্তে দেখা হচ্ছে না। অসুস্থতার বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে কোনো ভূমিকা পালন করতেও দেয়া হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি এখন রাজনীতিতে আর হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছেন না। নেতৃত্ব নিয়ে প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা অনেকটাই কম। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক থাকাই তার এখন প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল এখন যেভাবে চলছে এভাবেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলবে। প্রেক্ষাপট তৈরি হলে খালেদা জিয়ার একক ইচ্ছেতেই ঘোষণা আসবে। তিনি দলে থাকবেন কি থাকবেন না।

এদিকে লন্ডন নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে দলে চলছে নানা প্রশ্ন। ভবিষ্যতে কে হবেন ক্ষমতার প্রধান। মিলছে না উত্তর। দলীয় সূত্রমতে, দেশ-বিদেশে প্রশ্নের বাইরে থাকতে বিকল্প কাউকেও চিন্তা করে রাখছেন। আর তা হচ্ছে জিয়া পরিবার থেকে নারিদের কেউ। যেহেতু পার্শ্ববর্তী দুটো দেশ বাংলাদেশে পুরুষ নেতৃত্ব চাচ্ছে না, সেটিও লন্ডনে বসে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। সময়ের আলোকে সেই নারী নেত্রীর নাম ঘোষণা করা হবে। দলকে এমন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।

হাইকমান্ডের ভাষ্যমতে, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর নির্দেশনা ও অঙ্কিত ছকে আন্দোলন না হওয়া, শতভাগ ব্যর্থতার ইঙ্গিত পেয়েও নির্বাচনে যাওয়া, নির্বাচিত পাঁচ-ছয় সংসদ সদস্যকে সংসদে পাঠানো, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে স্থায়ী কমিটিতে লোক বাড়ানো এগুলোর মাধ্যমেই দলে খালেদা জিয়ার অবস্থানকে নিম্নস্তরে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নতুনভাবে আনা হয়েছে অতীতে খালেদা জিয়ার ব্যর্থতাগুলো। বারবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েও ব্যর্থ হওয়া, আলোচনা-সমালোচনার পরও খালেদা জিয়ার একক অবস্থানের কারণে জামায়াতকে সঙ্গে রাখা, যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং ৬৪ জেলাসহ সাংগঠনিক ইউনিটিতে কমিটি গঠনে ব্যর্থতাগুলো দলের তরুণদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এসব অবস্থানের কারণে দলে যারা খালেদা জিয়ার অনুসারী রয়েছেন তারাও চুপ হয়ে গেছেন। বয়স্করা শেষ সময়ে সম্মান রক্ষায় কেউ আর খালেদা জিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারছেন না। তারেক রহমান যে নির্দেশনা দেন তাই মেনে চলছেন। খালেদা জিয়ার অবর্তমানে স্থায়ী কমিটিকে নিজের মতো করে তৈরি করেছেন। মাকে কারাগারে রেখেই, মায়ের বুদ্ধি পরামর্শ আনুগত্যকে উপেক্ষা করে সেলিমা রহমানকে নারী কোঠায়, ইকবাল হাসান মাহমুদকে নিজের পছন্দে কমিটিতে আনেন।

বিএনপির চলমান বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে হলে তারেক রহমানকে নয়, তার একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। জাইমা দলে এলে যে আন্দোলনের জোয়ার শুরু হবে তাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি তার যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী এসেছে বলে টের পাবেন। আর এটি এখন বলতেই হবে, বিএনপির রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দিন শেষ। তাদের কথা এখন মানতে চায় না দলটির নেতাকর্মীরা। দুজনই বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যার কারণে নেতাকর্মী ও দেশবাসীর কাছে তাদের কদর কমে গেছে। তাই বিএনপিকে পুনরায় চাঙ্গা করে রাজনীতিতে ফেরাতে হলে খালেদা-তারেককে বাদ দিয়ে বিকল্প নেতা খুঁজে বের করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তারেককন্যা জাইমা রহমান বেস্ট অপশন।’

খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মানুষ এখন খালেদা জিয়াকেই ভুলে যাচ্ছে। তিনি এখন অসুস্থ। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার। তাহলে দেশের মানুষ জানবে অন্তত তার চিকিৎসা হচ্ছে। এছাড়া মানুষ বিএনপিকেও ভুলে যাচ্ছে, কারণ বিএনপি মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বিএনপি যদি মানুষের ভাষা বুঝে তাহলে তাদের রাস্তায় নামতে হবে, আন্দোলন করতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেছেন, বিএনপি দুঃসময় অবশ্যই কাটাতে পারে। যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা মানুষের জন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। দলীয় প্রধানের মুক্তি দাবির পাশাপাশি সরকারের জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে হবে তাদেরকে। সে ক্ষেত্রে তারা অনেক পিছিয়ে। তাদের এটিও করা উচিত। বিএনপিকে জনগণের আস্থা অর্জনে বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। তারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে কারা দেশ পরিচালনা করবেন, তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। এ নেতৃত্বকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হতে হবে। একই সঙ্গে শ্যাডো ক্যাবিনেট প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, তাতে রাজনীতি বলেন, দলের নেতৃত্ব বলেন- তার ফেরার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। আগের মতো আছে। ডা. জোবায়দা রহমানের পরামর্শে চিকিৎসা চলছে। রুটিন অনুযায়ী ওষুধগুলো চালানো হচ্ছে। প্রোপার ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে একটা সেন্টারে (হাসপাতাল) নেয়া প্রয়োজন। সেটি করা যাচ্ছে না।

সংকট-দুঃসময় মোকাবিলায় বিএনপির সব নেতাকর্মী দলের অনুগত দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপি অতীতের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। বিএনপিতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। দেশের জনগণ ও দলের নেতাকর্মীরা সবই বুঝেন। দলের দুঃসময়ে, সংকট মোকাবিলায় সব নেতাকর্মী বুদ্ধিদীপ্ত ও চৌকসের পরিচয় দিয়ে যার যার অবস্থান থেকে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’ আমির খসরু আরও বলেন, ‘বিএনপি জনগণের রাজনীতি করে, জনগণের শক্তিতে বিএনপি বিশ্বাসী, তাই রাজনীতির এই দুঃসময়ে এই দলের প্রতি মানুষের আস্থাও অতীতের চেয়ে আরও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

আমারসংবাদ/জেআই