Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

অবহেলায় বাড়ছে সংক্রমণ

মাহমুদুল হাসান

মার্চ ১৪, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


অবহেলায় বাড়ছে সংক্রমণ
  • স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আমরা আরও বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছি -অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • সংক্রমণ ঠেকাতে বেপরোয়া চলাফেরা বন্ধ করতে হবে -অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, সাবেক উপাচার্য, বিএসএমএমইউ ও সদস্য, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গঠিত জাতীয় করিগরি কমিটি

এক বছরে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। শনাক্তের হার ২ শতাংশে নেমেছিল। কিন্তু সম্প্রতি নিয়ন্ত্রণে থাকা সংক্রমণ ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই সংক্রমণ শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল আড়াই মাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু বেড়েছে অন্য সময়ের চেয়ে। ঝিমিয়ে পড়া সংক্রমণ সক্রিয় হয়ে ওঠার এখনো কোনো সঠিক কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্রীষ্মপ্রধান দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে সংক্রমণ বাড়তে পারবে। যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়তে পারে। টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কথা উঠেছে। তবে সবচেয়ে বেশি সন্দেহ করা হচ্ছে করোনা ভাইরাসকে অবহেলায় সংক্রমণ বাড়ছে। কারণ এক বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি সম্পর্কে ধারণা পাল্টে গেছে। করোনা ভাইরাস সাধারণ মানুষের কাছে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ৫৪তম দেশ হিসেবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান শুরু হওয়ার পর করোনাকে সবাই তুচ্ছ ভাবতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্যবিধি ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা এখন অনেকটা হারিয়ে গেছে। ফলে পরিস্থিতি দিনকে দিন অবনতি হচ্ছে। ২ শতাংশের নিচে নেমে আসা করোনা সংক্রমণ এখন বেড়ে ৭.২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দেশ এখনো করোনামুক্ত হয়নি। কী কারণে হঠাৎ করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী সেটি এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। স্প্যানিশ ফ্লু কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আরও শক্তিশালী ও ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলাফেরা বন্ধ করতে হবে। নয়তো হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ দূরূহ হয়ে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশের সমস্ত হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনসহ সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সারা দেশে আইসিইউগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। গতকাল কাজের অগ্রগতি ও পরিকল্পনা করতে সিভিল সার্জনদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি জোরদার করতে এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে কি-না সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল আড়াই মাসে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে। একই দিনে মৃত্যুও তুলনামূলক বেড়েছে। গত একদিনে আরও এক হাজার ১৫৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এই সংখ্যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের চেয়ে বেশি রোগী হয়েছিল। সেদিন মোট এক হাজার ২৩৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এ পর্যন্ত সর্বমোট ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫১টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫ জন হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৬৯৫ জন সুস্থ হলেও মৃত্যু বেড়ে আট হাজার ৫৪৫ জনে পৌঁছেছে। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ২১৯টি ল্যাবে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। গতকাল শনাক্তের হার ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫৩ শতাংশ।

অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত শনিবার পর্যন্ত সারা দেশে ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার ৭০৫ জন  করোনা ভাইরাসের টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন। তার মধ্যে গত শনিবার মাত্র ৮৬ হাজার ১৩২ জন টিকা নিয়েছেন। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৬২ হাজারের মতো মানুষ টিকা নিয়েছেন। সেই সংখ্যা প্রতিনিয়িত কমছে। যদিও প্রতিদিন তিন লক্ষাধিক মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৩ লাখ চার হাজার ২৫৯ জন টিকা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৮৫ জনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গঠিত জাতীয় করিগরি কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন ভাইরোলজিস্ট হিসেবে মনে হচ্ছে গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে পারে। লক্ষ করে দেখেছি, শীতপ্রধান দেশে শীতে ভাইরাসের সংক্রমণ হার বেড়েছিল। তখন আমাদের দেশে সংক্রমণ হার কমছিল। চলতি মাসে শীতে কেটে গিয়ে গরম পড়তে শুরু করেছে আর একটু একটু করে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করেছে। তবে এটা খুব বেশি ভয়ঙ্করভাবে বাড়বে না।  সংক্রমণ ঠেকাতে বেপরোয়া চলাফেরা বন্ধ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, স্প্যানিশ ফ্লুর দ্বিতীয় ঢেউয়েই বেশি মানুষ মারা যায়। টিকা নেয়া মানে স্বাস্থ্যবিধি না মানা নয়। কারণ, প্রথম ডোজ নেয়ার পর প্রতিরোধ ক্ষমতা সেভাবে তৈরি হয় না। আবার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পরও  প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন থাকবে তাও কেউ জানেন না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আগামীতে বিপদের মুখে পড়বে দেশ।’ তিনি বলেন, গেল দুই মাস আমরা স্বস্তিতে ছিলাম, তাই এখন আমরা কোনো কিছু মানছি না। নতুন করে এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই তরুণ, বেশির ভাগেরই আইসিইউ লাগছে।  সামনের দিকে আমরা আরও বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছি, যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি জোরদার করতে এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউকে ও আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন রূপের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিমন সিকোয়েন্সের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুরশীদ আলম জানান, শিগগিরই আসছে কেনা টিকার পরবর্তী চালান।

আমারসংবাদ/জেআই