Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ট্যুরিজমে সহজ শর্তে ঋণ চান উদ্যোক্তারা

এম এ আহাদ শাহীন

মার্চ ১৪, ২০২১, ০৮:৩৫ পিএম


ট্যুরিজমে সহজ শর্তে ঋণ চান উদ্যোক্তারা
  • ট্যুরিজমকে রিস্ক সেক্টর থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে
  • ট্যুরিজম সেক্টরের জিডিপি ২০ শতাংশের উপরে নেয়া সম্ভব -এম এ রশিদ শাহ সম্রাট, পরিচালক, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

করোনা মহামারির কারণে দুঃসময় পার করছে দেশের ট্যুরিজম খাত। এছাড়া ট্যুরিস্ট নির্ভর দেশগুলোর ভিসা প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক হয়নি। অন্যদিকে কোনো কোনো দেশ বিশেষ ক্যাটাগরিতে ভিসা চালু রেখেছে। সে কারণে কবে নাগাদ বিভিন্ন দেশের ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হবে সেটা কেউই এখনো বলতে পারছেন না।

সূত্র জানায়, গত বছর এপ্রিল মাস থেকে করোনা মহামারির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচল ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ভিসা প্রক্রিয়াও বন্ধ রাখে। তবে করোনা পরিস্থিতির প্রকোপ কমে আসায় বেশ কয়েকটি দেশ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করলেও ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রাখে।

এছাড়া বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পপরিসরে চালু হয়েছে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। তবে করোনা প্রকোপের কারণে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এ খাতের উদ্যোক্তারা। সরকার সব খাতের জন্য প্রণোদনা দিলেও ট্যুরিজম খাতের জন্য তেমন কিছু করেনি। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সেগুলো তুলতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে এ খাতের সঙ্গে জড়িতদের। ব্যাংকের বিভিন্ন শর্তের কঠোরতার জন্য লোন নিতে চাইলেও পারছেন না তারা।

উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে এর ৫৪ শতাংশ ব্যবহার হয়েছে মাত্র। বাকিগুলো যেনো ব্যবসায়ীদের ঠিকমত দেয়া হয়। তাহলে ট্যুরিজম খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকগুলোতে আমানত আসার প্রবণতা বাড়লেও তারা সেভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে না। যদিও আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু নিশ্চিত মুনাফা ও নিরাপদে টাকা ফেরতের আশায় সাধারণ মানুষ ব্যাংকগুলোতেই টাকা রাখছে। এছাড়া এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহও বেড়েছে। এই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে নিয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ নগদ টাকা ব্যাংকের হাতে এসেছে। এতে ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বিনিয়োগ না হওয়ার কারণে ব্যাংকের হাতে তারল্য বেড়ে গেছে। এছাড়া মহামারির মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি ও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে গতি আসাও তারল্য বাড়াতে সহায়তা করেছে। এর বাইরে নগদ জমার হার (সিআরআর) কমানোর ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে তারল্য বেড়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যক্তি খাতের ঋণ বিতরণ বাড়েনি। এমনকি সরকারও আগের তুলনায় ঋণ নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া কমে গেছে ট্রেজারি বিল-বন্ডের বিপরীতে আয়ের পরিমাণও।

দেশের পর্যটন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সহজশর্তে লোন চান ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পরিচালক এম এ রশিদ শাহ সম্রাট। তিনি অনলাইন ই-টিকেটিং সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট এক্সপার্টেরও প্রেসিডেন্ট। জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশের ট্যুরিজমের পরিস্থিতি যেমন- গত বছরও হজ ও ওমরাহ হলো না। এবারো ওমরাহ হলো না। সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। হজ হওয়ার সম্ভাবনা এখনো ক্ষীণ। এই সেক্টরে যারা আছে এখনো পর্যন্ত ট্যুরিজম সেক্টরগুলো যেমন ব্যাংকক, নেপাল বিভিন্ন দেশের বিমানগুলো চালু হচ্ছে না। এই সেক্টরকেও সরকার পর্যটনশিল্প হিসেবে ঘোষণা দিলে দেশের জন্য অনেক সুবিধা। কারণ সারাবিশ্বে জিডিপির ১১ শতাংশ আসে ট্যুরিজম খাত থেকে। মালদ্বীপে ট্যুরিজম সেক্টর থেকে আসে ৭১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে লোন না পাওয়ার বিষয়ে ট্যুরিজম খাতের এই উদ্যোক্তারা বলেন, সরকার শিল্প হিসেবে যে ঘোষণা দিয়েছে সেটা আসলে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর করে না। অন্যান্য সেক্টরগুলো যেমন গার্মেন্টসে লোনের জন্য তাদের গুরুত্ব আছে। এই সেক্টরে তারা নিরুৎসাহিত হয়। লোন দিতে চায় না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ খাতকে রিস্ক সেক্টর বলে জানিয়ে মক্কা গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট বলেন, ট্যুরিজম সেক্টরকে রিস্ক সেক্টর বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা এটাকে রিস্ক সেক্টর হিসেবে ধরে রাখছে। রিস্ক সেক্টর থেকে এই সেক্টরকে আউট করে নিতে হবে। যেমন আমাদের দেশে ট্যুরিজম থেকে জিডিপি আসে মাত্র ৬ শতাংশ। যেখানে মালদ্বীপে আসে ৭১ শতাংশ। সারাবিশ্বে আসে ১১ শতাংশ। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে। যেমন- বান্দরবান, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সুন্দরবন। এগুলো যদি আমরা কার্যকর করতে পারি তাহলে আমাদের ট্যুরিজম সেক্টরের জিডিপি ২০ পার্সেন্টের উপরে নেয়া সম্ভব বলে আমরা আশা করছি।

আমারসংবাদ/জেআই