Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ড. হাছান মাহমুদ: বঙ্গবন্ধুর আদর্শের, শেখ হাসিনার নির্ভীক যোদ্ধা

আসাদুজ্জামান আজম ও বেলাল হোসেন

মার্চ ১৫, ২০২১, ০৯:২০ পিএম


ড. হাছান মাহমুদ: বঙ্গবন্ধুর আদর্শের, শেখ হাসিনার নির্ভীক যোদ্ধা
  • দল ও সরকারে কাজ করছেন সমানতালে

দল ও সরকারে সমানতালে কাজ করছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি। করোনা সংকটে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিরলস দায়িত্ব পালন করছেন। একজন ছাত্রনেতা থেকে কিভাবে জননেতায় পরিণত হন, ড. হাছান মাহমুদ তার উদাহরণ। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে অদ্যাবধি কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ়তায় প্রতিটি সেক্টরে সফলতার ছাপ রাখছেন চট্টগ্রামের এ সন্তান। যার ফলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন নেতা হিসেবে তিনি স্বীকৃত।

ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী দলের দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিতি পান তিনি। তৎকালীন সময়ে আ.লীগের বাঘা বাঘা অনেক নেতা যখন আত্মগোপনে, সংস্কারপন্থির ভূমিকায়, তখন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেত্রীর পক্ষে গণমাধ্যমে সরব ভূমিকা পালন করেন। শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে ছিলেন অগ্রভাগে। ২০০৮ সালে যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন হাছান মাহমুদ। এরপর প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং পরে পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর  ড. হাছান মাহমুদকে পরবর্তীতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই সময়ে দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় সফলতার সঙ্গে কাজ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ও স্নেহভাজন নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি। ২০০৯ সালে দল ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। যার কারণে দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ ও সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হন ড. হাছান মাহমুদ। দুটি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে দক্ষতার পরিচয় দেন তিনি। যার কারণে তৃতীয়বারের মতো মন্ত্রিপরিষদ সদস্য এবং দলীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন করে পুরস্কৃত করেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে দুটি পদেই সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

  • শৈশব ও ছাত্রজীবনে মেধাবী দুরন্ত ও গুরুভক্ত

মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ ১৯৬৩ সালের ৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রামের খ্যাতিমান আইনজীবী প্রয়াত নুরুচ্ছফা তালুকদারের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তার বাবা চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং দুই মেয়াদে চট্টগ্রাম আদালতের পিপি ছিলেন। ছোট বেলা থেকে তিনি অত্যন্ত মেধাবী, দুরন্ত ও ডানপিটে ছিলেন। শৈশব ও ছাত্রজীবনের বড় অংশ কেটেছে চট্টগ্রামে। ড. হাছান মাহমুদ স্কুলজীবনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের  রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার মৌলবাদী অপশক্তি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি কয়েকবার তার প্রাণনাশেরও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো রক্তচক্ষু হাছান মাহমুদকে তার সংগ্রামের পথ থেকে পিছু হটাতে পারেনি। ড. হাছান মাহমুদের মধ্যে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মেধার অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে। তার সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয়পর্যায়ে এবং বিদেশেও তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

[media type="image" fid="115109" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

স্কুলজীবনে মেধাবী হওয়ার কারণে শিক্ষকদের কাছে অতি আদরের ছিলেন হাছান মাহমুদ। তিনি শিক্ষকদের শ্রদ্ধাভরে মান্য করতেন। অতি সম্প্রতি তার নজিরও স্থাপন করেছেন। মন্ত্রি এবং জাতীয় রাজনীতিতে এতো ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতার খবর পেয়ে শৈশবকালের শিক্ষকের কাছে ছুটে গেছেন। গত ১ মার্চ স্কুলজীবনের শিক্ষক মোহাম্মদ ইসহাকের খোঁজ নিতে তার বাসায় যান তথ্যমন্ত্রী। চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে তার শিক্ষক ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসর নেন। ১৯৭৮ সালে এই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। শিক্ষক ইসহাকের বয়স এখন ৮০ বছর।

ওই সময়ে স্কুলজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, স্কুলজীবনে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় আপনি স্যার একবার আমার বাবাকে অভিযোগ দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি পড়ালেখার চেয়ে রাজনীতি নিয়ে ঘুরছি বেশি। এরপর বাবা আমাকে প্রচণ্ড পিটিয়েছিলেন।’ তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইসহাক স্যার সে সময় বাইসাইকেল নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন। স্যারের মতো গুণী শিক্ষকরা তাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশে আলোকিত মানবসম্পদ উৎপাদনে অসামান্য অবদান রেখেছেন। স্যারের অসামান্য অবদান ভুলে যাওয়ার নয়। এ গুণী শিক্ষক তার সৃষ্টি ও কর্মের মধ্যে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন। তাদের ত্যাগ আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

  • ছাত্রনেতা থেকে জননেতা

চট্টগ্রামের সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সময়ে তিনি বয়স্কাউটের দলনেতা ছিলেন। জুনিয়র রেডক্রস টিমেরও সদস্য ছিলেন। আন্তঃবিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগতায়ও তিনি স্কুলের বিতর্ক দলের দলনেতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক দলের দলনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে প্রথমে চট্টগ্রাম শহরের জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৭৮ সালে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে সরকারি হাজী মহসিন কলেজে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি সামরিক শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তার সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য বিপুল বিজয় লাভ করে। সেই নির্বাচনের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারলেও তিনিই ছিলেন সেই নির্বাচনে সমস্ত প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান। ১৯৯২ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার কার্যকরী সংসদের সবচেয়ে নবীনতম সদস্য মনোনীত হন।

[media type="image" fid="115110" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

ড. হাছান মাহমুদ ২০০১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির বিশেষ সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে বয়োকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে পরিবেশ-বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন। ২০০৭ সালে যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে সামরিক সমর্থিত সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার করা হয়, তখন ড. হাছান মাহমুদ দলীয় সভাপতির মুখপাত্র হিসেবে অকুতোভয়ে কাজ করেন, যা দলের সকল কর্মী ও সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়। ২০০৮ সালে তিনি তখনকার দেশের নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯-২০১৩ সময়কালে তিনি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রী হিসেবে তার নিয়োগের আগে ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

  • করোনা সংকটে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে ছিলেন মাঠে

করোনা সংকটে নানা অজুহাতে অনেকেই যখন ঘরে বসে আছেন তখন কিন্তু হাছান মাহমুদ একদিনও ঘরে বসে থাকেননি। প্রতিনিয়ত মন্ত্রণালয়ের কাজে সক্রিয় ছিলেন। সরকার ও দলে  দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিকে তাচ্ছিল্য করেছেন আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

[media type="image" fid="115111" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরই সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তথ্য মন্ত্রণালয়। ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরুর আগে থেকেই পূর্বপ্রস্তুতি মোতাবেক কার্যক্রম করেছে মন্ত্রণালয়টি। তথ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বিশেষ করে জনগণকে ভাইরাসটির প্রকোপ থেকে বাঁচতে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

করোনাকালে পরিবার ও সহকর্মীদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দল ও সরকারে সমানতালে কাজ করেছেন। করোনা সংকটেও মন্ত্রণালয়ে তার সাক্ষাতে এসে কেউ ফিরে যাননি। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায়ও মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র স্বাক্ষর অব্যাহত রাখেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি অক্ষুণ্ন রাখতে নথিপত্র পর্যালোচনা ও স্বাক্ষর করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের নির্মাণকালের মেয়াদ বৃদ্ধি, চলচ্চিত্রের কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকারদের সম্মানী, রাশপ্রিন্ট অবলোকন, বিদেশি শিল্পী-কলাকুশলীদের আগমন, তাদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি, তথ্য অধিদপ্তর ও গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের পদ সৃজন ও মঞ্জুরি, অধিদপ্তরগুলোর টিও অ্যান্ড ই-তে যানবাহন অন্তর্ভুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র হাসপাতালে থেকেই স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রী।

করোনাকালীন সময়ে অন্য পেশার মতো গণমাধ্যমকর্মীরাও অসহায় হয়ে পড়েন। অনেকেই বেতন-ভাতা এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন। ঠিক সে সময়ে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বকেয়া বিজ্ঞাপন বিল প্রদানের উদ্যোগ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সাংবাদিকদের নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেন। প্রতিনিয়ত মন্ত্রণালয়ের কাজে সক্রিয় ছিলেন। মন্ত্রী হলেও দলীয় কাজে একটুও অমনোযোগী ছিলেন না ড. হাছান মাহমুদ।  করোনা পরিস্থিতিতে দলের প্রতিটি কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছিলেন অগ্রভাগে। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রেখেছেন নিয়মিত। ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে দলের সভায় অংশগ্রহণ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।

জাতীয় পর্যায়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজ নির্বাচনি এলাকা ভুলে যাননি ড. হাছান মাহমুদ। নিজ নির্বাচনি এলাকায় সমানতালে কাজ করছেন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের এ সংসদ সদস্য। নির্বাচনি এলাকার মানুষকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণমুক্ত রাখতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকারি ত্রাণ সহায়তা সুষম বণ্টনে নিয়েছেন কার্যকর পদক্ষেপ। ব্যক্তিগতভাবে করোনা থেকে রক্ষা পেতে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছেন। অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন প্রতিটি ইউনিয়নে। চিকিৎসক ও নার্স সুরক্ষায়ও নিয়েছেন পদক্ষেপ।

  • খ্যাতিমান পরিবেশবিদ ও শিক্ষক ড. হাছান মাহমুদ

ড. হাছান মাহমুদ শুধু রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন খ্যাতিমান পরিবেশবিদ ও শিক্ষক। রাজনীতির পাশাপাশি এ দুটি ক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়েছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় কাজ করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ড. হাছান মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে। উত্তাল ছাত্ররাজনীতির পাঠ চুকিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য একসময় ইউরোপ চলে যান। ভর্তি হন বিশ্বের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ভ্রিজে ইউনিভার্সিটি ব্রাসেলসে। পাশাপশি বেলজিয়াম আ.লীগকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। নির্বাচিত হন বেলজিয়াম আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক। ব্রিজে ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক স্টুডেন্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। বেলজিয়াম ব্রিজ ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস থেকে ‘হিউম্যান ইকোলজি’ ও ইউনিভার্সিটি অব লিবহা দু ব্রাসেলস থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন তিনি। এরপর পরিবেশ রসায়ন বিষয়ে বেলজিয়ামের লিম্বুর্গ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি অর্জন করেন তিনি।

[media type="image" fid="115112" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

শিক্ষাজীবন শেষ করে ব্রাসেলসের ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে ভিজিটিং ফেলো এবং একাডেমিক বোর্ড মেম্বার হিসেবে মনোনীত হন ড. হাছান মাহমুদ। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে বিদেশে শিক্ষকতার চাকরি ফেলে দেশে ফিরে আসেন। আ.লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সে দায়িত্ব পালন করেন ড. হাছান মাহমুদ। পরিবেশ নিয়ে শুধু দলে নয় সরকারেও বন ও পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে সফলতা কুড়ান সৎ, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এ রাজনীতিক। এরই মধ্যে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন খ্যাতিমান পরিবেশবিদ হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ-১৫ (মেক্সিকো), কপ-১৬ (ডেনমার্ক), কপ-১৭ (ডারবান), কপ-১৮ (দোহা), কপ-১৯ (পোল্যান্ড), কপ-২০ (লিমা), কপ-২১ (প্যারিস), কপ-২২ (মরক্কো)-এ বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিনিধিত্ব করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হন। বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকিজনিত বিষয়াবলি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরে জলবায়ু মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি ধনী রাষ্ট্রগুলোর সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরিবেশে অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক গ্রিন স্টার পদকেও ভূষিত হন এ আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিজ্ঞানী। বন ও পরিবেশমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে প্রতিবেশ ও  জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, বনজসম্পদ উন্নয়ন ও সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর বাস উপযোগী টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. হাছান মাহমুদ। মূলত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি এবং অনুরোধে ড. হাছান মাহমুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাসে ১০টি ক্লাস নেয়ার অনুরোধ করেছিলেন হাছান মাহমুদকে। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে একটি করে ক্লাস নিতে সম্মত হন তিনি। এর আগে পরিবেশ বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ স্টাডিস বিষয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন ড. হাছান মাহমুদ। শিক্ষাজীবন শেষ করে ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস, ব্রাসেলস, বেলজিয়ামে ভিজিটিং ফেলো এবং একাডেমিক বোর্ড মেম্বার হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ।

আমারসংবাদ/জেআই