Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ক্ষণজন্মা মুজিব বাঙালির মুক্তির মহানায়ক

আসাদুজ্জামান আজম ও রফিকুল ইসলাম

মার্চ ১৬, ২০২১, ০৯:৪০ পিএম


ক্ষণজন্মা মুজিব বাঙালির মুক্তির মহানায়ক
  • বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী: ১০ দিনের বর্ণিল আয়োজনের শুরু আজ অংশ নেবেন বিশ্বনেতারা, মুজিবীয় সাজে ঢাকা, রাজনীতির মহাকবির আদর্শ তুলে ধরা হবে নতুন প্রজন্মের মাঝে

১৯২০ সালের আজকের এই দিনে (১৭ মার্চ) তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার অজ পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন এক শিশু। বাঙালি জাতির শতবর্ষের পরাধীনতার শিকল ভাঙতে আলোর দিশারি হয়ে এসেছিলেন সেই শিশু।

বাবা-মায়ের আদরের সেই খোকা একদিন হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক। যার আলোয় গোটা জাতি পেয়েছিল আলোর মশাল। বাঙালির সেই অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস আজ। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা লাভের সুবর্ণজয়ন্তীতে পা রাখছে বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির জন্মশতবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণকে বর্ণিলভাবে পালন করতে ১০ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। বছরব্যাপী কর্মসূচি থাকলেও মূল আয়োজন হচ্ছে ১০ দিনব্যাপী।

টুঙ্গিপাড়ায় ক্ষণজন্মা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাঙালির মুক্তির দূত। বঙ্গ বা বাংলার সত্যিকারের আপনজন হয়ে উপাধি পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। অদম্য সাহস আর বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, ত্যাগ, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকা সম্বলিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক হয়েছিলেন। জাতির পিতার সকল অনুভূতি ছিলো এ দেশের মানুষের প্রতি। তাই তো বাঙালি জাতির প্রতি তার গভীর ভালোবাসা, মমত্ববোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শের দ্বারা সমগ্র বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত আত্মত্যাগে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন। তার নেতৃত্বে ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের জন্মলাভ, ’৪৮-এর মার্চে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন, ’৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্ম, ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয়দফা, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ’-এর নিরঙ্কুশ বিজয়সহ ইতিহাস সৃষ্টিকারী নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যায়।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি ৭ মার্চ এসেছিল শত বছরের বঞ্চনার শিকার পথ হারানো বাঙালির আলোকবর্তিকা হয়ে। সেদিন একটি কণ্ঠের ধ্বনিতে সুর মেলায় গোটা জাতি, হয় পরাধীনতামুক্ত। আজো প্রতিটি বাঙালির প্রাণে বাজে ৭ মার্চের সে বজ্রকণ্ঠ। সেদিনের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিশপথে বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেন বঙ্গবন্ধু। এরপর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।

বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী নেতৃত্বে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। যার কারণে বাঙালি জাতির অস্থিমজ্জায় মিশে আছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিবাদর্শে শানিত বাংলার আকাশ-বাতাস জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবাহমান থাকবে। তিনি বাংলার মাটি ও মানুষের পরম আত্মীয়, শত বছরের ঘোর নিশীথিনীর তিমিরবিদারী অরুণ, ইতিহাসের বিস্ময়কর নেতৃত্বের কালজয়ী স্রষ্টা, বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা।

উন্নত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নসারথী। ২০০৪ সালে, বিবিসির বাংলা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শিরোনাম নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপটিতে বাংলাদেশ, ভারতসহ (পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম রাজ্য) বিশ্বব্যাপী অবস্থানরত বাঙালিরা অংশগ্রহণ করে। ওই জরিপের মনোনয়নে মোট ১৪০ জনের নাম আসে।

১৪ এপ্রিল চূড়ান্ত দিনে, যা পহেলা বৈশাখও (বাংলা নববর্ষ) ছিলো, বিশ্বব্যাপী অবস্থানরত বাঙালিদের ভোটদানের ভিত্তিতে বিবিসি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে ঘোষণা করে। জরিপে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয় স্থান অধিকারী গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পয়েন্ট পেয়েছেন, যেখানে ঠাকুর নিজেই কাজী নজরুল ইসলামের চেয়ে দ্বিগুণ পয়েন্ট পেয়েছেন এবং নজরুল ইসলাম এ কে ফজলুল হকের চেয়ে দ্বিগুণ পয়েন্ট পেয়েছেন।

পরাধীনতা ভেদ করে স্বাধীন পতাকা নিয়ে যখনই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে একজন মুজিব নিরন্তন ছুটে চলতে শুরু করলেন। ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আর এদেশীয় দোসরদের নির্মমতার বলি হন জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। পরবর্তীতে অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী বঙ্গবন্ধুর খুনি স্বৈরশাসক স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারার বিকৃত ইতিহাস ও মূল্যবোধের বিস্তার ঘটানোর পাঁয়তারা চালায়। খুনিরা ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির অনির্বাণ হয়ে প্রজ্জ্বলিত থেকেছে প্রতিটি বাঙালি হূদয়ে। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোনো পরিসমাপ্তি ঘটেনি। জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী নেতাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করে আসছে।

বিগত বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তি কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘আমি হিমালয়কে দেখিনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি’। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি ছিলেন হিমালয় সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি।

শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা (নৃশংস হত্যার শিকার) বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তার স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়।’

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য বইয়ে লিখেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সম্মোহনী এবং অসীম সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার জনগণের নেতৃত্বদান করেছিলেন। জার্মানির সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান উলফ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেন, এই স্মৃতি জাদুঘর আমাদের একজন মহান রাষ্ট্রনায়ককে স্মরণ করিয়ে দেয়, যিনি তার জনগণের অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াই করেছিলেন এবং অতিদ্রুত স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে অটল সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছেন।’ বাঙালি ও বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কালজয়ী নাম।

বিশ্ব বাঙালির গর্ব মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বাঙালি মানসে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির নির্মাতা। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি সারাটি জীবন পরাধীনতার শিকল থেকে বাঙালি জাতিকে স্বাধীন, ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন।

জাতির পিতা বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগমুহূর্তে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।

১০ দিনের বর্ণিল আয়োজনের শুরু আজ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী উদযাপন উপলক্ষে ১০ দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের শুরু হচ্ছে আজ। করোনা প্রকোপ এড়াতে সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে দেশব্যাপী নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণিল এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশিদের শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন বিশ্বনেতারা। অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ভিডিও বার্তায় জানাবেন শুভেচ্ছা। ১০ দিনের কর্মসূচির বিভিন্ন সময়ে অংশ নেবেন এসব বিশ্বনেতারা। একই সঙ্গে বিশ্বনেতারা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনে যাবেন, বিশেষ সামরিক কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করবেন, রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অংশ নেবেন এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

উদযাপন জাতীয় কমিটি সূত্র মতে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ প্রথম শীর্ষ বিদেশি আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথি হিসেবে আজ ১৭ মার্চ ঢাকায় পৌঁছাবেন। তিনি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। এরপর ১৯ মার্চ দুদিনের সফরে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বাংলাদেশে আসবেন। নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি দুদিনের সফরে ২২ মার্চ ঢাকা পৌঁছাবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ ও ২৫ মার্চ ঢাকা সফর করবেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা আসছেন আগামী ২৬ মার্চ। ১০ দিনের অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে তিনি অংশ নেবেন। ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসবেবন। তাদের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর গ্রামে তার মাজার পরিদর্শনে যাবেন। এছাড়া তিনি ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় দুটি হিন্দু মন্দির পরিদর্শন করবেন। এই মন্দিরগুলো বিশেষত হিন্দু মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রার্থনার স্থান। এদের একটি বড় অংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বাস করে।

এছাড়া চীন, কানাডা ও ফ্রান্সের সরকার প্রধান এবং জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন নেতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে সরকার ও বাংলাদেশিদের অভিনন্দন জানিয়ে ভিডিও বার্তা দেবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সড়ক। সরকারি দপ্তরের ভবনগুলোও সাজানো হয়েছে। আলোকসজ্জা করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও দপ্তর। তুলে ধরা হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন চিত্র। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমানের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে অনুষ্ঠানমালায়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের অনুষ্ঠানের চারদিন অতিথি ও দশনার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। বাকি ছয়দিন ধারণ করে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী ধারাবাহিক অনুষ্ঠানে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনুষ্ঠানে আসা রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, বিশিষ্ট ব্যক্তিরাসহ বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। পুরো অনুষ্ঠান করা হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, বড় আকারে জনসমাগম করা হবে না। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অতিথিদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস টেস্ট করাতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক। এটার মেয়াদ থাকবে ৪৮ ঘণ্টা। নেগেটিভ রিপোর্টটি তারা সঙ্গে নিয়ে আসবেন, যাতে সেখানে অন্য কোনো পরিস্থিতি না হয়। ১০ দিনের পুরো প্রোগ্রামটি সারা পৃথিবীতেই সম্প্রচার করা হবে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালিত হবে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী অঙ্গ সংগঠনসহ সরকারি ও বেসরকারিভাবে সারা দেশে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সকাল ৬.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ১১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।  সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।  মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন।  জীবনের কৈশোর, যৌবন পুরোটা সময়ই বাঙালির অধিকার আদায়ে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। স্বাধীনতা লাভের পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে ভগ্ন অর্থনীতির দেশটাকে অর্থনৈতিক মুক্তির রূপরেখা ঠিক করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করে বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছিল ঘাতকরা। নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উঠে এসেছে। যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না, সেই মহানায়কের শত বছর পূর্ণ হলো আজ। মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু কতটা নিবিড় তা আমার সংবাদের কাছে তুলে ধরেছেন বেশ কয়েকজন তারকা রাজনীতিবিদ।

  • মুজিবের স্বপ্নেই আজকের বাংলাদেশ -আমির হোসেন আম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেছেন, ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অত্যাচার ও নির্যাতন মাথায় নিয়ে সংগ্রাম করেছেন আমৃত্যু। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থরক্ষায় তিনি একধাপ পিছপা হননি। তিনি আরও বলেন, সদ্য স্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব ধরনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার মধ্যদিয়ে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠা হয়েছে প্রতিটি মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার। আজকের এই বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।   

১৭ মার্চ পুরো বাঙালি জাতির জন্য শুভদিন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চে (আজকের এই দিন) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় হন পরাধীন বাঙালির মুক্তির দাবিতে। প্রতিটি বাঙালিকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে আত্মত্যাগ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শিকার হয়েছেন নানামুখী ষড়যন্ত্রের। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনো অন্যায় ও অবিচারের কাছে মাথা নত করেননি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বারবার গড়ে তোলেন দুর্বার আন্দোলন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ডাক দিয়েছেন স্বাধীনতার। পুরো বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন— ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না । বন্ধ হতো না বাঙালির ওপর পাকিস্তানি গোষ্ঠীর অন্যায় ও নির্যাতন। এই মহান নেতার জন্মদিন মানেই পুরো বাঙালি জাতির খুশি ও আনন্দের দিন। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী (মুজিববর্ষ) পালন করা ভাগ্যের উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, যে মহান নেতা একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন ভাষা, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের সুযোগ দিয়ে গেছেন, সেই মহান নেতার জন্মশতবর্ষ পালন পুরো বাঙালি জাতির ভাগ্যের।

  • বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি এখনো বেদনার -মোজাফফর হোসেন পল্টু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি ছিলেন সত্যিকারের বাঙালি, অনেক বড় মানবিক মানুষ। বঙ্গবন্ধুর হূদয় ছিলো- আটলান্টিক মহাসাগরের মতো গভীর। অথচ কিছু কুলাঙ্গার বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলো। বঙ্গবন্ধুকে হারানো বেদনার ও হূদয় বিদারক। তিনি আরও বলেন, আমরা ভাগ্যবান, জাতির পিতার সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আলোচনা করার সুযোগ হয়েছে। পরামর্শ নেয়ার সুযোগ হয়েছে। তাকে এভাবে হারাতে হবে তা কখনো চিন্তাও করতে পারিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই স্মৃতি এখনো বেদনার। এখনো কষ্টের।

১৭ মার্চ বাঙালিদের স্মরণীয় দিন উল্লেখ করে মোজাফফর হোসেন পল্টু আরও বলেন, পাকিস্তানের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জাতির পিতা সব সময় কথা বলেছেন। তাদের শাসন-শোষণ থেকে প্রতিটি বাঙালিকে মুক্তির জন্য ফাঁসির মঞ্চে যেতে দ্বিধা করেননি। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় তিনি জেলে কাটিয়েছেন। নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। বলিষ্ঠ কণ্ঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। স্বাধীনতার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনো ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। তিনি বুঝতে পারতেন কখন কী করতে হবে। কী বলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর এমন গুণের জন্য পুরো বাঙালি জাতিই তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু এই মার্চ মাসেই বলেছিলেন, ‘অফিস আদালত চলবে না, কলকারখানা চলবে না, কোর্টকাচারি চলবে না।’ বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়েছে। একজন মানুষের কতটা জনপ্রিয়তা থাকলে তার হুকুম দেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। তা বর্তমান প্রজন্মকে জানতে হবে। বুঝতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে পথ চলতে হবে।

  • স্বাধীনতার স্বাদ বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের সুফল -জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

স্বাধীনতার স্বাদ বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের সুফল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা-চেতনা ছিলো বাঙালি জাতির অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতসহ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সেজন্য তিনি বারবার পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো কাটিয়েছেন কারাগারে। তবুও তিনি থেমে থাকেননি। বাংলাদেশকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। মানুষকে স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছেন। তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঠিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের সুফল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো দিন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের ভালোবাসার টানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো দিন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। বঙ্গবন্ধুর দেখানো সেই পথেই তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। বাঙালি হূদয়ে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বেঁচে থাকবে।

  • অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন বঙ্গবন্ধু -আবদুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেকোনো অন্যায়-অবিচার, জুলুম, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেছেন, ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন। ভয়ভীতি ও অত্যাচারের মুখেও সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে শোষিত মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সে অধিকার আদায় করে নিয়েছেন। তিনি সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। জেল-জুলুম ও নির্যাতন কখনো তার পথচলায় বাধা হতে পারেনি। এই মহান নেতার জন্ম না হলে বাঙালি জাতি কোনো দিন স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতো না। সেই মহান নেতার জন্মদিন মানেই বাংলাদেশের জন্মদিন।

বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের মাঝে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন উল্লেখ করে আবদুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীরা তাকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষের ভাগ্য অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। দখল করে ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। স্বাধীনতাবিরোধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। মুছে ফেলতে চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস। কিন্তু তা তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কারণ বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের মাঝে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন।

  • মার্চ বাঙালির গৌরবের মাস -মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ডাক দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ঐতিহাসিক সেই ভাষণে উদ্দীপ্ত বাঙালি জাতি সেদিন দৃঢ় শপথ নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। একই সাথে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এ মাস বাঙালিদের গৌরবের মাস, আন্দোলনের মাস, ইতিহাসের মাস।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর সৃষ্টি হতো না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সব সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। তার প্রধান লক্ষ্য ছিলো বাঙালি জাতিকে মুক্ত করা। তার সুচিন্তা, পরিশ্রম ও সংগ্রামের ফল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মার্চ মাস শুধু গৌরব ও আনন্দের নয়, সাথে বেদনাও আছে উল্লেখ করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাখির মতো হত্যা করা হয় বাঙালিদের। তাই মার্চ মাস যেমন একদিকে আনন্দের, অন্যদিকে বেদনারও।

  • বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীনতা পেতাম না -ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সভাপতি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে আমরা বাঙালিরা কোনো দিন স্বাধীনতা পেতাম না। আজীবন পাকিস্তানিদের অপরাজনীতি, অন্যায় ও নির্যাতনের শিকার হতে হতো। তিনি আরও বলেন, আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয়েছে। এর সবটুকু অবদান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা উপহার না দিলে এগুলো কখনো প্রতিষ্ঠিত হতো না।

জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর পরিশ্রম করছেন উল্লেখ করে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, পাকিস্তানের নির্যাতন উপেক্ষা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। তিনি সব সময় এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন দেখতেন, স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। অথচ এমন একটি মহান নেতাকে হত্যা করে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। সেই স্থান থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে উন্নত দেশে পরিণত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

  • বঙ্গবন্ধুর জীবনের প্রতিটি ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় -মো. আখতারুজ্জামান, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, দেশ ও জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগ, সামাজিক ও অসাম্প্রদায়িক  মূল্যবোধের যে গুণাবলি ছিলো, তা ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে আজীবন থেকে যাবে। তার জীবনের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম ও জীবন আদর্শের গুণাবলি থেকে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ও সকল শ্রেণিপেশার মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, একজন মানুষ তখনই প্রকৃত মানুষ হয়, যখন সে নানা বিষয়ে নিজের মূল্যেবোধকে জাগ্রত করতে পারেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের মধ্যে একজন। তিনি সব সময় নিজের মূল্যবোধের সমন্বয় ঘটাতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে কোনো ধরনের উগ্রতা, অগণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকতার পরিপন্থি কাজকর্ম করার মনোভাব ছিলো না। তিনি সব সময় নিজের ভুলগুলো তুলে ধরতেন এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ ও আন্দোলন-সংগ্রাম করতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কথাগুলো বলতেন, যে কাজগুলো করতেন, বঙ্গবন্ধুর কথা ও কাজের মিল এবং সমন্বয়ে অমিল নেই। যা বলতেন, তাই করতেন। এমন দায়িত্বশীল কথা, কর্ম  ও রাজনৈতিকভাবে জীবন পরিচালনা অনেক কঠিন। তাই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য যতই নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাবে, ততই বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ তৈরি হবে। শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে।

আমারসংবাদ/জেআই