Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধু ও অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ

মাহমুদুল হাসান

মার্চ ১৬, ২০২১, ১০:১৫ পিএম


বঙ্গবন্ধু ও অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় অসামপ্রদায়িক রাজনীতিক। তার সারা জীবনের রাজনৈতিক সাধনার মূল লক্ষ্য ছিলো অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এই মহান উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও সব ধর্মের মানুষের প্রতি ছিলো তার সমান ভালোবাসা। বিশ্ব মানবতাবোধ তাকে তাড়িত করতো সবসময়। তিনি মানুষকে ধর্ম দিয়ে বিচার করতেন না; বিচার করতেন কর্ম দিয়ে। তার কাছে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সবাই ছিলো সমান। কারণ, বঙ্গবন্ধু প্রত্যক্ষ করেছেন যে, দেশের সকল সমপ্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। বঙ্গবন্ধু একটি অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন যে তিনি একজন খাঁটি অসামপ্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন।

শৈশবেই বঙ্গবন্ধু সামপ্রদায়িকতার ভয়াবহ রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমার এক বন্ধু ছিলো ননীকুমার দাস। একসাথে পড়তাম, কাছাকাছি বাসা ছিলো, দিনভরই আমাদের বাসায় কাটাতো এবং গোপনে আমার সাথে খেতো। ও ওর কাকার বাড়িতে থাকতো। একদিন ওদের বাড়িতে যাই। ও আমাকে ওদের থাকার ঘরে নিয়ে বসায়। ওর কাকিমাও আমাকে খুব ভালবাসতো। আমি চলে আসার কিছু সময় পর ননী কাঁদো কাঁদো অবস্থায় আমার বাসায় এসে হাজির। আমি বললাম, ‘ননী কি হয়েছে?’ ননী আমাকে বললো, ‘তুই আর আমাদের বাসায় যাস না। কারণ, তুই চলে আসার পর কাকিমা আমাকে খুব বকেছে তোকে ঘরে আনার জন্য এবং সমস্ত ঘর আবার পরিষ্কার করেছে পানি দিয়ে এবং আমাকেও ঘর ধুতে বাধ্য করেছে।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা : ২৩)।

১৯৩৮ সালে যখন বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এবং শ্রমমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ সফরে এলেন, শেখ মুজিব তখন স্কুলের ছাত্র। তার ওপর ভার পড়েছিল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করার। সে প্রসঙ্গে তিনি লিখছেন, ‘আমি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করলাম দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে। পরে দেখা গেলো, হিন্দু ছাত্ররা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থেকে সরে পড়তে লাগলো। ব্যাপার কি বুঝতে পারছি না। এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, সেও ছাত্র, সে আমাকে বললো, ‘কংগ্রেস থেকে নিষেধ করেছে আমাদের যোগদান করতে। যাতে বিরূপ সংবর্ধনা হয় তারও চেষ্টা করা হবে। এক্সিবিশনে যাতে দোকানপাট না বসে তাও বলে দেয়া হয়েছে। তখনকার দিনে শতকরা আশিটি দোকান হিন্দুদের ছিলো। আমি এ খবর শুনে আশ্চর্য হলাম। কারণ আমার কাছে তখন হিন্দু-মুসলমান বলে কোনো জিনিস ছিলো না। হিন্দু ছেলেদের সাথে আমার খুব বন্ধুত্ব ছিলো। একসাথে গান-বাজনা, খেলাধুলা, বেড়ানো সবই চলতো।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা : ১০-১১)

১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী শক্তি বলে অপপ্রচার চালায়। নির্বাচনের আগে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ বিষয়ে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ‘আমরা লেবাসসর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে।’

অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান গ্রহণ করে প্রতারণা, প্রবঞ্চনা ও মোনাফেকির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের ইসলাম হজরত রাসূলে করিম সা. এর ইসলাম। যে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের প্রবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বারবার যারা অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ ও বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন, আমাদের সংগ্রাম সেই মোনাফেকদের বিরুদ্ধে।’

ধর্মের নামে সুদীর্ঘ ২৩ বছর বাঙালিদের শোষণ করেছে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী ধর্মকে ব্যবহার করে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালায়। ১৬ ডিসেম্বরের আগেই মুজিবনগর সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশে সব ধরনের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে, যা ১৯৭২-এর সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে এই প্রজ্ঞাপন অনুমোদন করেন। যেদিন তিনি দেশে ফেরেন, সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে। ১৯৭২ সালের ৯ মে রাজশাহী মাদ্রাসার ময়দানে বক্তৃতা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার এই দেশে সামপ্রদায়িকতা থাকতে পারবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমরা বাঙালি আর সামপ্রদায়িকতা যেনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ। মুসলমান তার ধর্ম-কর্ম করবে। হিন্দু তার ধর্ম-কর্ম করবে। বৌদ্ধ তার ধর্ম-কর্ম করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। ইসলামের নামে আর বাংলাদেশের মানুষকে লুট করে খেতে দেয়া হবে না। পশ্চিমারা ২৩ বছর ইসলামি ট্যাবলেট দেখিয়ে আমাদের লুটেছে।’

১৯৭২ সালে সংবিধান যখন রচিত হয়, সেই সংবিধানের যে চারটি মৌলিক স্তম্ভ ছিলো, তার একটি ছিলো ধর্মনিরপেক্ষতা। বঙ্গবন্ধু যেখানেই যেতেন, তিনি এটির অর্থ যে ধর্মহীনতা নয়, তা বারবার উল্লেখ করতেন এবং বলতেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ধর্ম থেকে রাষ্ট্র  পৃথক থাকবে। তিনি একটি আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন চিরকাল। যে আওয়ামী লীগ শুরু হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম দিয়ে, অচিরেই সে নাম থেকে মুসলিম শব্দটি উঠিয়ে দিয়েছিলেন; যাতে তার চরিত্র ধর্মনিরপেক্ষ হয়। একই কথা ছাত্রলীগের ক্ষেত্রেও। তবে স্বাধীনতার পরপরই যারা বাংলাদেশ চায়নি, যারা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে, যারা ধর্মের নামে গণহত্যা করেছে, তারা সেই ধর্মকেই আবার ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। যারা এই চেষ্টা করেছে, তাদের মধ্যে যেমন ছিলো ধর্মান্ধ গোষ্ঠী, তেমন ছিলো অতি বিপ্লবী বামপন্থিরা। প্রথম দিকে তারা সমবেত হয়েছিলেন মওলানা ভাসানী ন্যাপের পতাকাতলে। তারপর যখন জাসদ গঠিত হয়, তাদের অনেকেই সেখানে আশ্রয় নেন। দেয়ালে উস্কানিমূলক ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম জয় বাংলার অপর নাম’ স্লোগান লেখা হয় রাতের আঁধারে। শুরুতে মওলানা ভাসানীর সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘হক কথা’ ও এনায়েতুল্লাহ খানের ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হলি ডে’ এই উস্কানিতে ইন্ধন জোগায়। পরে জাসদ গঠিত হলে তাদের দৈনিক পত্রিকা ‘গণকণ্ঠ’ তাতে শামিল হয়।

১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিপ্লবের (স্বাধীনতা) পর সংবাদপত্র যে স্বাধীনতা পেয়েছে, তা এ দেশে কখনো ছিলো না... আপনারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন। আমিও বলি। কিন্তু কোনো কোনো খবরের কাগজে এমন কথাও লেখা হয় যে, সামপ্রদায়িকতা চরমে। অথচ সামপ্রদায়িকতার বিরুদ্ধে চব্বিশটি বছর প্রগতিশীল সাংবাদিকরা সংগ্রাম করেছেন। কোনো কোনো কাগজে লেখা হয়েছে, মুসলমানকে রক্ষা করার জন্য সংঘবদ্ধ হও।’

বঙ্গবন্ধু নিজে ধর্ম-কর্ম পালনে যত্নশীল ছিলেন। মনে রাখতে হবে, তার পূর্বপুরুষ সুদূর ইরাক থেকে পূর্ব ভারতে এসেছিলেন ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে। সদ্যস্বাধীন একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সম্বল বলতে ছিলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জনগণ আর আত্মবিশ্বাস। অর্থনীতি, অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থা বলতে তখন কিছুই ছিলো না। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু ন্যামের (জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন) এক সম্মেলনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেন আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে। সারা বিশ্বের কাছে তখন তিনি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মুক্তিসংগ্রামের এক মহানায়ক। তার সঙ্গে দেখা করতে ছুটে এসেছিলেন একই সম্মেলনে অংশ নেয়া কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো। মহান বিপ্লবী ক্যাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়েজ। বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব। ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইজ দ্য হিমালয়েজ। আই হ্যাভ দাজ হ্যাড দ্য এক্সপিরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়েজ।’ অর্থাৎ, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম।’

এ সম্মেলনে বৈঠক হয় লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ও সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে। তারা বঙ্গবন্ধুকে শর্ত দেন, বাংলাদেশকে ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ ঘোষণা করলে তারা স্বীকৃতিসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেবেন। গাদ্দাফি বঙ্গবন্ধুর কাছে জানতে চান, বাংলাদেশ তাদের কাছে কী চায়? বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা চাই লিবিয়ার স্বীকৃতি। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতি লিবিয়ার স্বীকৃতি।’ গাদ্দাফি জানান, এর জন্য বাংলাদেশের নাম বদলে ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু পাল্টা জবাব দেন, ‘এটা সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশ সবার দেশ। মুসলমান, অমুসলমান সবারই দেশ।’

বঙ্গবন্ধু সব ধর্মের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং নিজ দেশের অসামপ্রদায়িক চেতনা রক্ষায় কতটা দৃঢ়চেতা ছিলেন, তা বোঝা যায় সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে তার কথোপকথনে। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সত্তাকে জানতে সেই কথোপকথনের অংশবিশেষ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। নিম্নে সেই কথোপকথনের অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো—

বাদশাহ ফয়সাল : আপনারা কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়ার কাছ থেকে কী চাইছেন?

বঙ্গবন্ধু : বাংলাদেশের পরহেজগার মুসলমানরা পবিত্র কাবা শরিফে নামাজ আদায়ের অধিকার চাইছে। এক্সেলেন্সি, আপনিই বলুন সেখানে তো কোনো শর্ত থাকতে পারে না? আপনি হচ্ছেন পবিত্র কাবা শরিফের হেফাজতকারী। এখানে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের নামাজ আদায়ের হক আছে। আমরা আপনার কাছে ভ্রাতৃসুলভ সমান ব্যবহার প্রত্যাশা করছি।

বাদশাহ ফয়সাল : এসব তো রাজনৈতিক কথাবার্তা হলো না। এক্সেলেন্সি, বলুন আপনারা কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়ার কাছ থেকে কী চাইছেন আসলে?

বঙ্গবন্ধু : এক্সেলেন্সি, আপনি জানেন, ইন্দোনেশিয়ার পর বাংলাদেশ হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। তাই আমি জানতে চাইছি, কেন সৌদি আরব আজ পর্যন্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না?

বাদশাহ ফয়সাল : আমি করুণাময় আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহি করি না। তবু আপনি একজন মুসলমান তাই বলছি, সৌদি আরবের স্বীকৃতি পেতে হলে বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু : বাংলাদেশের জন্য এটা প্রযোজ্য হতে পারে না। বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হলেও এখানে এক কোটির ওপর অমুসলিম রয়েছে। সবাই একসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। নির্যাতিত হয়েছে। তাছাড়া এক্সেলেন্সি, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পরম করুণাময় আল্লাহ তো শুধু ‘আল মুসলিমিন’ না, তিনি রাব্বুল আলামিন। সকলের স্রষ্টা। ক্ষমা করবেন, আপনাদের দেশের নাম তো ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব সৌদি অ্যারাবিয়া’ নয়। বরং মরহুম বাদশাহ ইবনে সৌদের সম্মানে ‘কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়া’। কই, আমরা কেউ তো এ নামে আপত্তি করিনি। (সূত্র : বঙ্গবন্ধুর নীতি নৈতিকতা, হাসান মোরশেদ)।

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রাজনীতিতে যারা সামপ্রদায়িকতা সৃষ্টি করে, যারা সামপ্রদায়িক তারা হীন, নিচ, তাদের অন্তর ছোট। যে মানুষকে ভালোবাসে সে কোনো দিন সামপ্রদায়িক হতে পারে না। আপনারা যারা এখানে মুসলমান আছেন তারা জানেন যে, খোদা যিনি আছেন তিনি রাব্বুল আলামিন। রাব্বুল মুসলেমিন নন। হিন্দু হোক, খ্রিস্টান হোক, মুসলমান হোক, বৌদ্ধ হোক সমস্ত মানুষ তার কাছে সমান। সেই জন্যই এক মুখে সোস্যালিজম ও প্রগতির কথা এবং আরেক মুখে সামপ্রদায়িকতা পাশাপাশি চলতে পারে না। একটা হচ্ছে পশ্চিম। যারা এই বাংলার মাটিতে সামপ্রদায়িকতা করতে চায়, তাদের সম্পর্কে সাবধান হয়ে যাও। আওয়ামী লীগের কর্মীরা, তোমরা কোনো দিন সামপ্রদায়িকতাকে পছন্দ করো নাই। তোমরা জীবনভর তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছো। তোমাদের জীবন থাকতে যেনো বাংলার মাটিতে আর কেউ সামপ্রদায়িকতার বীজ বপন না করতে পারে।’

সারা দেশ যখন জাতির পিতার জন্মের একশ বছর পালন করছে, তখন এই মহান মানুষটি আমাদের মাঝে নেই। তার স্বপ্নের বাংলাদেশে ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করে অসামপ্রদায়িক চেতনাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় এসে পিতার অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার কাজে হাত দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার সুদৃঢ় মনোবলের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নতুন প্রজন্মসহ আমাদের সবার কর্মকাণ্ড তার দর্শন ও জীবনাদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক আমার সংবাদ

সভাপতি, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতি (ঢাকসাস)

আমারসংবাদ/জেআই