Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই বাংলাদেশ

আসাদুজ্জামান আজম

মার্চ ১৭, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম


বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই বাংলাদেশ
  • রাজনীতিবিদদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ফেরার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
  • দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবোই :  প্রধানমন্ত্রী
  • বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন নেতা —মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট
  • মুজিব চীনের ভালো বন্ধু ছিলেন —শি জিন পিং
  • সব ভারতীয়র কাছে আদর্শ বঙ্গবন্ধু —ভারতের প্রধানমন্ত্রী
  • বঙ্গবন্ধু মানুষকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন: কানাডার প্রধানমন্ত্রী
  • সোনার বাংলা’ গড়তে জাপান পাশে ছিলো, আছে: জাপানের প্রধানমন্ত্রী

শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গানের মধ্য দিয়ে মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালা ‘মুজিব চিরন্তন’-এর আনুষ্ঠানিক পর্দা উঠেছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজনের সূচনা হয়। এ অনুষ্ঠান ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন পাঁচ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। গতকাল বুধবারের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং স্যু কুয়েন, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আহমেদ আল-ওথাইমিন, পোপ ফ্রান্সিস এবং সাংবাদিক মার্ক টালি। বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুঃসাহসিক নেতৃত্বের কারণেই তার স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথেই রয়েছে বাংলাদেশ। ১০ দিনের এ অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে মুজিব চিরন্তন থিমের ওপরে। হাঁটতে হাঁটতে হাত নাড়ছেন বঙ্গবন্ধু। তার হাসিমুখের পেছনে যেনো নদীর ঢেউয়ের খেলা। মঞ্চের ওপর পাঁচটি সিঁড়ি যেনো বাংলাদেশের পাঁচটি দশক পেরোনোর প্রতীকী নিদর্শন! এভাবেই সাজানো ‘মুজিব চিরন্তন’ আয়োজনের মঞ্চ সজ্জা। মঞ্চের ঠিক সামনেই ফুল দিয়ে সাজানো ও লেখা ‘মুজিব-১০০’। প্রতিদিন আলাদা আলাদা থিমে পরিবেশিত হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা। প্রথম দিনে ভেঙেছে দুয়ার এসেছে জ্যোতির্ময় থিমে পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক আয়োজনে ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করছে।

রাজনীতিবিদদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ফেরার আহ্বান রাষ্ট্রপতির : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দুয়ারে দাঁড়ানো বাংলাদেশে রাজনীতির গতিধারা নিয়ে হতাশা-প্রকাশ করে রাজনীতিবিদদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ফেরার এবং দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘আজ আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করছি। এ সময়ে রাজনীতিতে অনেক চড়াই-উৎরাই ঘটেছে। কিন্তু রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে তা ভেবে দেখতে হবে। ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ বড়— এটাই হচ্ছে রাজনীতির মূল আদর্শ। কিন্তু আজকাল যেনো রাজনীতি উল্টো পথে হাঁটছে। কিছু সুবিধাবাদী লোক রাজনীতিটাকে পেশা বানিয়ে ফেলেছেন। রাজনীতি আর পেশা এক জিনিস নয়। পেশার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের ও পরিবার-পরিজনের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন, আর রাজনীতি হচ্ছে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার একটি মহান ক্ষেত্র। তাই রাজনীতিকে পেশা  মনে  করলে দেশ ও জনগণের কথা ভুলে নিজের ও পরিবারের গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খেতে হবে।’ আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর এই দিনে তাই আমি রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানাবো, আসুন বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত করি।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার জন্য অপরিসীম ত্যাগ ও অসীম সাহসিকতার কথা সুবিদিত হয়ে থাকবে। জাতির পিতার আহ্বানে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তার সহকর্মী ছিলেন, তাকে সরাসরি দেখা ও জানার সুযোগ পেয়েছেন, তারা অধিকাংশই আজ বেঁচে নেই। যারা জীবিত আছেন, সকলেই আজ জীবন সায়াহ্নে। তাই শতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার অমূল্য স্মৃতি ও স্মারক সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঙালি জাতির গৌরব এবং পূর্বসূরিদের অসীম সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের অনন্য গাথা জানতে পারে এবং সেই আলোকে নিজেদের আলোকিত করতে পারে।’ আবদুল হামিদ বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও  পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বা ভোগ-বিলাস কোনো কিছুই তাকে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু চাইলেই বিত্ত-বৈভবে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি অবলীলায় এসব প্রত্যাখ্যান করে দেশ ও জনগণের অর্থাৎ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বার্থকেই জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পাকিস্তান জেলে থাকাকালীন ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধুকে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও জেনারেল আকবরের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়ার ধারণা ছিলো— বঙ্গবন্ধু তার কাছে এসে প্রাণের ভয়ে নরম হয়ে যাবেন এবং সেই সুযোগে তার কাছ থেকে আপসের প্রস্তাব পাওয়া যাবে। তিনি এই মানসে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর দিকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘দুঃখিত, ও হাতে বাঙালির রক্ত লেগে আছে, ও হাত আমি স্পর্শ করতে পারবো না’। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে একমাত্র একজন মহানায়কই এমন সাহসী উচ্চারণ করতে পারেন। নিজের দেশকে ও নিজের মানুষদের ব্যক্তি ও পরিবারের চেয়ে বেশি ভালোবাসলেই মৃত্যুকে জয় করে স্বাধীনতা ও মুক্তির গান গাওয়া যায়।’

আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতি বিজড়িত তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর সংলগ্ন জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আজকের আয়োজনটি সর্বাঙ্গে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবোই :  প্রধানমন্ত্রী

মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এ দেশকে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবোই, এটাই আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনো দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শুভ জন্মদিনে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার প্রহরের আজ অবসান হতে চলেছে। আজ এমন এক সময়ে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা এবং জনগণের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল আজকের এই প্রাপ্তি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আমরা দেশে এবং বিদেশে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আজ তার সূচনাপর্ব। তবে আমাদের উৎসব ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকবে।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার প্রহরের আজ অবসান হতে চলেছে। আজ এমন একসময়ে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।’ দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মাথাপিছু আয় সম্মানজনক দুই হাজার মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে; দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে; দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে; মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। আর্থ-সামজিক সূচকে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে। জাতির পিতার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চের এই দিনে তার বাবা টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন। পিতা শেখ লুৎফুর রহমান এবং মাতা শেখ সায়রা খাতুনের কোল আলো করে যে শিশুর এই ধরিত্রীতে আগমন ঘটে, সেই শিশুই আলো জ্বালিয়েছিল বাঙালি জনগোষ্ঠীর জীবনে। এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার-নেতা, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সালাম জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সে ধারাবাহিক সংগ্রামের সাফল্যের ফসলই আমাদের স্বাধীনতা।’ স্বাধীনতার পর দেশ গড়তে জাতির পিতার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং যুদ্ধপরবর্তী দেশ গড়ার কাজে যেসব বন্ধুপ্রতীম দেশ এবং নেতা বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভ্রাতৃপ্রতীম দেশটির জনগণকে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা শুভেচ্ছাবাণী পাঠিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীর পক্ষ থেকে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন নেতা: মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট

মুজিবশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সশরীরে যোগ দেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ। এসব নিজ বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমন্ত্রণ পেয়ে আমি সম্মানিত। বঙ্গবন্ধু এমন একজন মহান নেতা যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু আপসহীন নেতা ছিলেন।’ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। তার সম্মোহনী নেতৃত্বের কথা কেউ ভুলে যাবে না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেয়া তার বক্তব্য বিশ্বের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নের সড়কে অনেক এগিয়ে গেছে। যা এ দেশের নাগরিকদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল।’

মুজিব চীনের ভালো বন্ধু ছিলেন: শি জিন পিং

ভিডিও বার্তায় দেয়া বক্তব্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চীনের দীর্ঘদিনের ভালো একজন বন্ধু ছিলেন।’ ১৯৫২ এবং ১৯৫৭ সালে চীন সফরের মাধ্যমে সেসময়ের চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শেখ মুজিব সুসম্পর্ক তৈরি করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শি জিন পিং বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান চীনের খুবই পুরনো এবং ভালো একজন বন্ধু ছিলেন। ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে চীন সফরকালে মাও সেতুংসহ সেসময় অন্যান্য শীর্ষ চীনা নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেছেন। আমরা কখনোই আমাদের পূর্বসূরিদের ভুলবো না। তারা দু’দেশের মধ্যেকার সুসম্পর্কের যে ভীত তৈরি করে দিয়ে গেছেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তা নতুন প্রজন্মকে বুঝিয়ে দেয়া। ৫০ বছর আগে শেখ মুজিব এ দেশের গোড়াপত্তন করেন। তিনি তার জীবন এ দেশ ও দেশের জনগণের প্রতি উৎসর্গ করেছেন। ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা আজও ১৬ কোটি মানুষকে উৎসাহিত করে। নিজ বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারুণ কিছু সাফল্য অর্জন করেছে।

বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হয়েছে এবং দ্রুত বর্ধনশীল বিশ্বের কাতারে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। ৬ শতাংশের অধিক জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) মাধ্যমে বাংলাদেশ তার দেশের মানুষের জীবনকে উন্নত করছে এবং বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চীন বাংলাদেশের এমন উন্নয়নে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে শি জিন পিং বলেন, চীন ও বাংলাদেশ সবসময়ই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক সিল্ক রোড বছরের পর বছর ধরে দু’দেশের সেই সুসম্পর্কের সাক্ষী হয়ে আছে। ৪৬ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে আমরা উভয়েই উভয়ের প্রতি সর্বদা সম্মান এবং সমতার সঙ্গে আচরণ করে আসছি। আমরা একে অপরকে সমর্থন করেছি এবং উন্নয়নের পথে একত্রে কাজ করে যাচ্ছি। সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীন সঙ্গী হতে পারে। বেল্ট অ্যান্ড রোড কো-অপারেশনে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে থেকে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশও বাংলাদেশ। প্রায় পৌনে ছয় মিনিটের ভিডিও বার্তায়, নিজ বক্তব্যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি করোনা মহামারির মধ্যে উভয় দেশের প্রতি উভয় দেশের সাহায্য সহযোগিতার বিষয়গুলোও তিনি তুলে ধরেন। ভবিষ্যতেও উভয় দেশের মধ্যে এমন আন্তরিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সব ভারতীয়র কাছে আদর্শ বঙ্গবন্ধু: ভারতের প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব ভারতীয়র আদর্শ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে এক টুইটে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টুইট করেন মোদি।  টুইটে মোদি লিখেন, ‘মানবাধিকার ও স্বাধীনতার রক্ষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা। সকল ভারতীয় নাগরিকের কাছেও তিনি একজন বীর হিসেবে গণ্য হন। এই মাসের শেষের দিকে ঐতিহাসিক মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সফর করতে পারা আমার জন্য সম্মানের বিষয়। মুজিববর্ষ উদযাপন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যৌথ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফরে থাকবেন মোদি। ঢাকা সফরের সময় নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেবেন, এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।

বঙ্গবন্ধু মানুষকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন: কানাডার প্রধানমন্ত্রী

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন বলে উল্লেখ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির কারণে ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব সেটি শেখ মুজিবুর রহমান করে দেখিয়েছেন। তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন মানুষকে। তাই তার ভিশন বাস্তবে পরিণত হয়েছে।’ কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন আমার বাবার সঙ্গে বাংলাদেশ সফর করেছিলাম সে সময়ের থেকে বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। গত ৫০ বছরে দেশটি অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ঘটেছে। এর ফলে দেশের জনগণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। আজকে আমরা উৎসব করতে পারছি শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক একটি দেশ গড়ার ভিশনের কারণে। এটি সম্ভব হয়েছে এদেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসার জন্য।’ ট্রুডো আরও বলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় সম্পর্ক ছিলো। ওই সময় থেকে দুদেশ দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমূল রূপান্তর হয়েছে এবং এই পথযাত্রায় কানাডা অংশীদার হিসেবে আছে। আমরা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছি এবং নারী অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নে সহায়তা করছি। শিশুস্বাস্থ্য ও শিক্ষা, যুব সম্প্রদায়ের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কাজে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কানাডা। গতকালে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ অংশ নেন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

প্রথমে কুরআন তিলাওয়াত, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করার পর পরিবেশন করা হয় একটি ভিডিও অ্যানিমেশন এবং মুজিবশতবর্ষের থিম সং। এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। প্রধানমন্ত্রী আসার কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে সস্ত্রীক উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ৪টা ৩৬ মিনিটে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ১০ দিনের এই উৎসবে যোগ দিতে গতকাল সকালে ঢাকায় পৌঁছান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ। ১০ দিনের এই আয়োজনে আরও যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। গতকাল সকালে ঢাকায় আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ। এ সময় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নেতৃত্বে বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

সোনার বাংলা গড়তে জাপান পাশে ছিলো, আছে: জাপানের প্রধানমন্ত্রী

ভিডিও বার্তায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাংলাদেশের পাশে আছে জাপান। ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, ৫০ বছর আগে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে জাপান অন্যতম। বঙ্গবন্ধুকে জাপান সফরে আমন্ত্রণ করাটা ছিলো আমাদের জন্য সম্মানের। সদ্য স্বাধীন দেশকে তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে শুরু থেকেই জাপান পাশে ছিলো, পাশে আছে।

বাংলাদেশ ও জাপান একে অপরের ভাই ভাই উল্লেখ করে সুগা বলেন, আমি বুঝি যে, এটা বঙ্গবন্ধুর নিজের পরিকল্পনা ছিলো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এমন একটি নকশায় করা, যা জাপানের সদৃশ্য। ঠিক যেমন আমরা একে অপরের ভাই ভাই। জাপান ও বাংলাদেশ উভয়ের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য রয়েছে। দুই দেশের তৃণমূল পর্যায়ের নাগরিকদের মধ্যেও হূদ্যতার সম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার অল্প কিছুদিন পরই ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত বাংলাদেশের জন্য জাপানের শিশুরা অনুদান সংগ্রহে কাজ করেছে। তেমনি ১০ বছর আগে শক্তিশালী ভূমিকম্পে আক্রান্ত জাপানের জন্য ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই যমুনা বহুমুখী সেতু, ১০০ টাকা ব্যাংক নোটের প্রচলন এবং সোনারগাঁও হোটেল আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সাক্ষী হয়ে আছে। বর্তমানে র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি), ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, মধ্যম আয়ের দেশ হতে বাংলাদেশের যে লক্ষ্যে রয়েছে জাপানের এ সহায়তা তা পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

আগামী ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ৫০ বছরে উন্নীত হবে উল্লেখ করে আগামীতেও বাংলাদেশের পাশে থেকে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী।

আমারসংবাদ/জেআই