Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

নামমাত্র কোম্পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ!

এম এ আহাদ শাহীন

মার্চ ২০, ২০২১, ০৭:১০ পিএম


নামমাত্র কোম্পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ!

কারখানা কার্যক্রম বন্ধ, দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনহীন। আবার অনেকের নামেই শুধু কোম্পানি। নেই কারখানা, যন্ত্রপাতি কিংবা সরঞ্জামও। তবু এমন কোম্পানির শেয়ারের পেছনে ছুটছেন বিনিয়োগকারীরা। আর তাতে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। বিষয়টিকে পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় অনেক মুনাফা দেখিয়েছে। তালিকাভুক্ত হয়ে এক-দুই বছর ভালো লভ্যাংশও দিয়েছে। এরপর এসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়ার পাশাপাশি নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে নামমাত্র কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমন কোম্পনিগুলো হলো— সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, বিচ হ্যাচারি, ফ্যামিলিটেক্স বিডি, রিং শাইনিং, বিডি ওয়েল্ডিং, ফাইন ফুড, এমারল্ড অয়েল, ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড ও ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

অধিক মুনাফা দেখিয়ে ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল। কোম্পানিটি তালিকভুক্তির দুই বছরের মধ্যে উচ্চ দামে শেয়ার বিক্রি করে দেয় উদ্যোক্তা-পরিচালকরা। ২০১৭ সাল থেকে কোম্পানিটি লোকসানের মুখে পড়ে। বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের বস্ত্র খাতের কোম্পানিটির শেয়ারের দাম এক টাকা ৯০ পয়সা থেকে দুই টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অধিক মুনাফা দেখিয়ে ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে আসা ফ্যামিলিটেক্স বিডি। কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ২০১৮ সালের পর থেকে। ইউনাইটেড এয়ারসহ অন্যান্য কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের মতোই এ কোম্পানির পরিচালকরা উচ্চ দামে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ফলে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারটির দাম দুই টাকা ৫০ পয়সায় নেমে এসেছে। এই কোম্পানির দৃশ্যমান একটি কারখানা আছে কিন্তু কোনো কার্যক্রম নেই, কারখানায় নষ্ট হচ্ছে সম্পদ। এ অবস্থায়ও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত ২৫ জানুয়ারি থেকে বাড়তে থাকে। দুই টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩ মার্চ পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে তিন টাকা ১০ পয়সায়।

কোম্পানির তথ্য মতে, ২০১৬ সালে কোম্পানিটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ এবং চেয়ারম্যান রোকসানা শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার পর কোম্পানিটি লোকসানে চলে আসে। কোম্পানির পেইড আপ ক্যাপিটালের ৪ দশমিক ২ শতাংশের নিচে চলে আসে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ। কোম্পানিকে মুনাফায় ফেরাতে সম্প্রতি কাজী আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। পর্ষদের অন্য পরিচালকরা হলেন— ড. সামির কুমার শীল, ড. গাজী মোহাম্মদ হাসান জামিল, ড. মো. জামিল শরিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ এহসান এবং ড. মো. ফরজ আলী। ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বিচহ্যাচারি কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তারপরও শেয়ারের দাম বাড়ছে। ২০১৪ সালের পর থেকে শেয়ার হোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৪ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। একই অবস্থায় রয়েছে ফাইনফুড লিমিটেড কোম্পানিটিও। ঢাকার নিউমার্কেটে একটি ভাড়া অফিস থাকলেও কোম্পানিটির কারখানা নেই। তারপরও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে হাতে থাকা শেয়ারগুলো বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আবার এসব কোম্পানির পেছনে ছুটছেন লোভী বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিগুলোতে নতুন করে যারাই বিনিয়োগ করবেন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই উৎপাদনহীন, দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কয়েকটি কোম্পানি নামমাত্র কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিগুলোর দিকে আমরা নজর দিয়েছি।’ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি কোম্পানিতে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। নতুন পর্ষদ যদি কোম্পানিকে মুনাফায় আনতে পারে তাহলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা উচিত। তা না হলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না।

এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনহীন ও কারখানা বন্ধ থাকা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা কোনো সচেতন বিনিয়োগকারীর কাজ নয়। এসব কোম্পানিতে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

আমারসংবাদ/জেআই