Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

এপার-ওপারের যত লাভ

আবদুর রহিম ও রফিকুল ইসলাম

মার্চ ২১, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম


এপার-ওপারের যত লাভ
  • বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল করিডোর সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা হতে পারে
  • বাংলাদেশের সাথে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ভালো হতে সমঝোতা হবে
  • বর্ডার হাটের সংখ্যা বাড়িয়ে চোরাচালান রোধে বিশেষ সমঝোতার ইঙ্গিত
  • বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কাজ করবে ভারতের উদ্যোক্তারা 
  • ভারতের চিন্তাভাবনার অন্যতম এক পরীক্ষাগার বাংলাদেশ এবারো থাকবে হিসাব 

দৃষ্টি এখন ওপারে! স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২৭ মার্চও তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। তার সফর ঘিরে বাংলাদেশের লাভের হিসাব বাড়ছে। মোদির দুদিনে অবস্থানে পুরো সময়টায় থাকছে চমক ও আকর্ষণ। জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানাতে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন ‘মুজিব কোট’ পরে। তার সফরসঙ্গী যারা থাকবেন এবং বাংলাদেশ থেকে যারা সম্পৃক্ত হবেন তারাও এই কোট পরবেন। ইতোমধ্যে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনে ১০০টি ‘মুজিব কোট’ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। করোনা ভাইরাস মহামারি দীর্ঘ সময়ের পর প্রথমবারের মতো বিদেশ সফর করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বলা হয়ে থাকে ভারতের চিন্তাভাবনার অন্যতম এক পরীক্ষাগার বাংলাদেশ, তাই থাকে বহু হিসাব। এবারও দু’দেশের মধ্যে ব্যতিক্রম ঘটবে না বলে মনে করা হচ্ছে।  বাংলাদেশও সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদির এই সফরকে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। এই সফরের মাধ্যমে প্রতিবেশী দুই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবকাঠামো এবং অন্যান্য সংযোগ উদ্যোগ আরও জোরদার হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বাণিজ্য এবং আর্থিক লেনদেন বাড়ানোটা মুখ্য লক্ষ্য হিসেবে দুই রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তির আলোচনা হতে পারে। আঞ্চলিক সমন্বয় (অর্থনৈতিক) দিকটা বেশি গুরুত্ব পাবে। যাতে লাভবান হবে ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় পক্ষই। এই সফরের পর দু’দেশের সীমান্তে রেল, সড়ক এবং বন্দর যোগাযোগ আরও অনেকটাই বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। মোদি এবং শেখ হাসিনার বৈঠকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল করিডোর সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া বর্ডার হাটে সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ও থাকবে আলোচনার টেবিলে। যাতে করে সীমান্তে বেআইনি বাণিজ্য এবং চোরাচালান ঠেকানো যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ভারতের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ সরকার চাইলে ভূমিকা পালন করতে পারে। আলোচনার বৈঠকে এ বিষয়গুলোও অগ্রাধিকার পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়াজাত পণ্যের মতো খাতগুলোতে ভারতের বিশেষ দৃষ্টি থাকতে পারে। বাংলাদেশও এগুলো থেকে লাভের হিসাব খুঁজতে পারে। প্রতিবেশী দর্শন নীতিতে হতে পারে সমাধান।

বাংলাদেশ ভারতের কূটনৈতিক বিষয়ে চোখ রাখা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের অবদান অনেক। বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন— বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের সম্পর্কের একটি মাইলফলক স্থাপন করবে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথে যোগাযোগ চলছে এবং এই যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম ও নতুন পায়রা নদীবন্দরগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের সাথে ভারতের অর্থনৈতিক  সম্পর্ক আরও ভালো হবে। অনেকে এও বলছেন ভারতের কাছে আমাদের রয়েছে বড় পাওনা— পানি, ট্রানজিট, হঠাৎ করে ইম্পোর্ট বন্ধ, অশুল্ক বাধা ইত্যাদি এগুলোর বিষয়ে জোরালো আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের পানিবণ্টন ও দেশের সিমান্ত সমস্যাসহ দীর্ঘদিন এর কতগুলো অগ্রাধিকার পাবে এখন সেটিই প্রশ্ন।

নরেন্দ্র মোদির সফরের আগে ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক ইকোনমিক টাইমসে বৈশ্বিক থিঙ্ক ও অ্যাকশন-ট্যাঙ্ক কাটস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক বিপুল চ্যাটার্জি জানান, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সংযোগ এবং এ সংশ্লিষ্ট খাতে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রত্যাশা করা হচ্ছে; দুই দেশের সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসব পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক নির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান একটি প্রজাপতির মতো। এই প্রজাপতির মূল দেহ বাংলাদেশ; যার পাখা ছড়িয়ে আছে একপাশের রাশিয়া ও মরিশাসের বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চলজুড়ে এবং অন্যপাশে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। এর ফলে বাংলাদেশ মুক্ত, উন্মুক্ত, সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বৃহৎ অর্থনীতির প্রতিবেশী দেশ (ভারত) থেকেও সুবিধা পেতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইসফাক এলাহী চৌধুরী আমার সংবাদকে  বলেছেন, ‘ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ। প্রথম থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান সময়ে তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে বাংলাদেশের যত ভালো যোগাযোগ থাকবে, তত বাংলাদেশের জন্যই ভালো।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের অবদান অনেক। বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন— বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের সম্পর্কের একটি মাইলফলক স্থাপন করবে। তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে ইতোমধ্যে যে সকল রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশে এসেছেন, বাংলাদেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমন— বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে ভারতের সাথে বাংলাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথে যোগাযোগ চলছে এবং এই যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম ও নতুন পায়রাসহ নদীবন্দরগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের সাথে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও ভালো হবে। ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক  বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত সবসময় বাংলাদেশের পক্ষে ছিলো এবং সকল ধরনের সহযোগিতা করেছে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসবেন। মোদির এই সফরে আমাদের কোনো কিছু আশা করা ঠিক নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের সফর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের পানি বণ্টন ও দেশের সিমান্ত সমস্যাসহ দীর্ঘদিন ধরেই যে সব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হবে বলে বলে মনে হচ্ছে না। তবুও কিছু কিছু বিষয়ে আমরা আশা করতে পারি।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। তবে ভারতের কাছে আমাদের রয়েছে বড় পাওনা— পানি, ট্রানজিট, হঠাৎ করে ইম্পোর্ট বন্ধ, অশুল্ক বাধা ইত্যাদিও। অথচ আমরা ত্রিপুরার সঙ্গে সম্পর্কের সব ধরনের সুবিধা দিয়েছি। আমাদের দেয়ার সংস্কৃতি যেমন রয়েছে, পাওনার সংস্কৃতিও চালু করতে হবে। এতে করে দু’দেশেরই ভাবমূর্তি বাড়বে।’ আশা করছি, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর দু’দেশের জন্যই ভালো কিছু নিয়ে আসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসবেন। তিনি আসার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বসবেন ও চলমান নানামুখী সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কিছু বিষয় আছে, যে গুলো সমাধান হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সমস্যা আছে, যেমন— তিস্তা চুক্তির বিষয় গুরুত্ব পাবে, সিমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিষয় গুরুত্ব পাবে, রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর বিষয় গুরুত্ব পাওয়াসহ দু’দেশের ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক যে সব সমস্যা রয়েছে; ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে সবগুলো বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে এবং চলমান সব সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।’

আমারসংবাদ/জেআই