Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা

বেলাল হোসেন

মার্চ ২৫, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে বাংলাদেশ। দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এগিয়ে যাচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই শুরু হয় উন্নয়নের সোপান। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই চলছেন তারই সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ ভর্তি, বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যের নতুন বই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষা খাতের অগণিত উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়— গত এক দশকেই মূলত শিক্ষা খাতে হয়েছে অগণিত উন্নয়ন। সব স্তরে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর লেগে গেলেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি দেশ গঠনের কাজে। বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করলেন, শিক্ষা ছাড়া জাতির উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার ৬৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করলেন। ’৭৪ সালে গঠন করলেন ড. কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশন। সেই কমিশনের দেয়া মূল্যবান পরামর্শেই চলতে থাকলো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।

তবে ঘাতকদের অশুভ চক্রান্তে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যে দিয়ে আবারো দেশের উল্টাপথে যাত্রা শুরু হয়। যে স্বপ্নের বীজ জাতির পিতা বুনেছিলেন, ক্ষমতায় আসার পর সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে হাত দিলেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক মাইলফলক অর্জিত হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে। ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে সরকার।

এছাড়া ২০১৯ সালে দুই হাজার ৭৩৬টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। আর কয়েক বছরে পাঁচশ’র বেশি স্কুল ও কলেজ সরকারি করা হয়েছে। ২০০৮ সালে যেখানে স্বাক্ষরতার হার ছিলো ৫১ শতাংশ, এখন তা প্রায় ৭৫ শতাংশ। প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ। এ স্তরে ঝরে পড়ার হারও এখন শূন্যের কোটায়। প্রাথমিকে ছেলের চেয়ে মেয়ে শিশুর হার ২ শতাংশ বেশি। গেলো কয়েক বছরে জেএসসি, এসএসসির ফলাফলে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে থাকছে মেয়েরা।  ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ের শিশু ভর্তির হার ছিলো ৬১ শতাংশ, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৯৭.৭ শতাংশে। বিশেষ করে নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ দেশে শিক্ষাবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের অন্য অনগ্রসর দেশগুলো যেখানে শিক্ষায় ছেলে-মেয়ের সমতা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্তরেই মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে সমতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। প্রাথমিকে ছাত্রীদের হার প্রায় ৫১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে প্রায় ৫৪ শতাংশ। এ হার বিশ্বে নজর কেড়েছে। আশার বিষয়— এখন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়ছে। নারী শিক্ষা কেবল নারীদের জন্য জীবিকা অর্জনে সুযোগ সৃষ্টি করেনি, বরং লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ৩৭ হাজার ৬৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের পর ২০১৩ সালে কয়েক ধাপে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট মেটাতে ব্যাপকভাবে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। করোনার সময় প্রাথমিক শিক্ষায় সংস্কার আনা হয়েছে।  শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে উপবৃত্তি চালু হয়েছে। স্কুল ফিডিং কর্মসূচির পর মিড-ডে মিল চালু হচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলাদা ওয়াশ ব্লক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাও চালু হয়েছে। প্রাথমিকেও শুরু হয়েছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছরে পাঁচ শতাধিক স্কুল ও কলেজ সরকারি করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে স্কুল এবং দুটি করে কলেজ সরকারি করার কাজ চলছে। ২০১৯ সালে দুই হাজার ৭৩৬টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিন বিন্যামূল্যে পাঠ্যবই পৌঁছানোটাই সরকারের বড় সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা ৫০ শতাংশ এনরোলমেন্টে উন্নীত করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

২০১০ সালে আইন প্রণয়ন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৭টি। নতুন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কৃষিসহ বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থপন করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৪০টি মাধ্যমিক স্কুলে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ২০২১ সাল থেকে মাধ্যমিকের সব ক্লাসে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নেও চালু আছে একাধিক কর্মসূচি। সরকার কওমি মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যসূচিতে নিয়ে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। উচ্চশিক্ষা ছড়িয়ে দিতে একের পর এক বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। বেড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও। তবে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, শিক্ষানীতির পুরো বাস্তবায়ন না হওয়া এবং শিক্ষা আইন তৈরিতে দেরি হওয়া দেশের শিক্ষাকে বিশ্বমানের উন্নীত করার পথে বাধা হয়ে আছে।

আমারসংবাদ/জেআই