Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

তাক লাগানো উন্নয়ন

জাহাঙ্গীর আলম

মার্চ ২৫, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


তাক লাগানো উন্নয়ন
  • জাতিসংঘে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন
  • বাজেট পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা
  • সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ
  • খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার গৌরব অর্জন

হারিকেনের কাচ মুছতে মুছতে অনেক সময় কাটা যেতো হাত। কেরোসিন তেলের জন্য মাইলের পর মাইল দূরে যেতে হতো। তারপরই ঘরে আলো জ্বলতো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঝক্কর-মক্কর ট্রেনে রওনা দিয়ে পরের দিন ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছে ৩০ কিলোমিটারের বেশি পায়ে হেঁটে বালিয়াডাঙ্গী থানার রত্নাইকাশিবাড়ি গ্রামের মুখ দেখা যেতো। তাতে শরীরের ঘাম শুকিয়ে যেতো, অনেকের পায়েও ফোসকা পড়ে যেতো। স্বাধীনতার পর এই ছিলো দেশের উন্নয়ন বলে জানান রত্নাইকাশিবাড়ির মো. রফিকুল ইসলাম। কিন্তু ৫০ বছরের ব্যবধানে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বর্তমানে প্রায় সবার ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। ৩০০ থেকে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছে গেছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দ্রুতগতিতে বাস-ট্রাকে যাতায়াত করা যাচ্ছে। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঠেলে বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার গৌরব অর্জন করেছে দেশ। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয় ১২৯ ডলারের বিপরীতে বর্তমানে দুই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি সব রেকর্ড ভেঙে ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বেশি করে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় আসায় রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটা ব্যাংকের পরিবর্তে ৬৬টি ব্যাংকে লেনদেনের সুযোগ পাচ্ছেন জনগণ। টাকা তুলতে এক সময় দিন পার হলেও বর্তমানে মিনিটেই লেনদেন করতে পারছেন গ্রাহকরা। এভাবে বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন বাজেটই দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এভাবেই ৫০ বছরের ব্যবধানে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপকভাবে উন্নতি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়ন তাক লাগিয়েছে বিশ্বে। এসব উন্নয়নের অর্ধেকের বেশিই অর্জন হয়েছে গত এক যুগে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথেই দেশপ্রেমকে অগ্রাধিকার দিয়ে শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিবিএস, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, পাকিস্তানের শোষণের হাত থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলে অর্থনৈতিকভাবে তলানিতে ছিলো সব কিছু। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটাতে বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালান। কারণ দেশে ছিলো না মানুষের আয় রোজগার, কোনো রিজার্ভ। তার সেই স্বপ্নের ধারায় সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

জিডিপিতে রেকর্ড : ১৯৭৩-৭৪ সালে পাঁচ বছরের জন্য প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করে স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা। একইসঙ্গে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। দরদ দিয়ে দেশ গড়তে মনোনিবেশ করেছিলেন। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে পাঁচ ধরে অর্জনও করেছিলেন ৪ শতাংশ।  কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই ১৯৭৫ সালে হত্যা করা হয়। মাঝে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার এলেও তাক লাগাতে পারেনি বিশ্বে। কিন্তু ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশে অর্থনীতির দ্রুত প্রবৃদ্ধি শুরু হয়। ২০১১-২০১৫ মেয়াদে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ অর্জন করেছে। ২০১৬-২০২০ মেয়াদে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশের জায়গায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জন হয়েছে। বিগত ৫ বছরের জিডিপির গড় ছিলো ৭.৪ শতাংশ। করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে ৮.১৫ শতাংশের প্রবৃদ্ধি বিশ্বকে তাক লাগিয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস মহামারি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় গতবার কমে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে গেছে বলে সরকার জানিয়েছে। বাজেটে ধরা হয়েছিল ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। এভাবে এক যুগের ব্যবধানে উন্নয়নে আজ বিশ্বে বিস্ময়। উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।  

দেশের চেহারা পাল্টাতে বিশাল বাজেটের রেকর্ড : স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সাজাতে সরকারপ্রধান ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে। সময়ের পরিবর্তনে সেটার আকার চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) পাঁচ লাখ ৬৮  হাজার কোটি টাকায় আনা হয়েছে।  প্রায় ৭২৩ গুণ বেড়েছে। প্রায় ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট থেকে বহুগুণ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এক সময়ে মেগা (ফার্স্ট ট্র্যাক) প্রকল্প কল্পনা মনে হলেও সারা দেশে ১০টি মেগা প্রকল্প চলমান। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দুই পাড়ে যুক্ত হয়ে উঁকি দিচ্ছে পারাপারে। স্বাধীনতার পর ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩০০ মেগাওয়াটে থাকলেও সোয়া কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে রূপপুর পাওয়ার প্লান্টের কাজ চলামান। এছাড়া মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১৪৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৪ হাজার ৯৮২ মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করছে। দেশের বিভাগীয় শহরে ফোরলেনের সড়কের সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কার্পেটিং রাস্তা হওয়ায় ক্ষণিকের মধ্যে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াত করা যাচ্ছে। এছাড়া ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে আধুনিক ও নিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়তে মেট্রোরেল প্রকৃল্প বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক দিক উন্মোচন করেছে। এসব কাজ বাস্তবায়নে কয়েক বছর থেকে লাখ লাখ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করা হচ্ছে। বাড়তে বাড়তে চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। এভাবে এডিপির আকার ২০০ কোটি থেকে ৫০ বছরের ব্যবধানে দুই লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকায় আনা হয়েছে।      

প্রবাসী আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ায় রিজার্ভে রেকর্ড : বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব গ্রহণের সময় মাথাপিছু আয় ছিলো মাত্র ৯৪ ডলার। ১৯৭২ সালে ছিলো ১২৩ ডলার। সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু দেশের মাথাপিছু আয় ২৭৭ ডলারে উন্নীত করেন। তার কন্যা একটানা প্রায় দেড় দশকের ব্যবধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে দুই হাজার ৬৪ ডলারে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থাৎ ৫০ বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৬ গুণ।

একসময় দেশে কাজ না থাকায় বেশি আয়ের আশায় অনেকে প্রবাসে পা বাড়ান। স্বাধীনতার পর মাত্র দশমিক এক বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসে। প্রায় এক বছর ধরে বিশ্বে করোনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে গেলেও ২ শতাংশ প্রণোদনাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে করোনা মহামারিতেও প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এর ফলে রেকর্ড ২০২০ সালে প্রবাসী আয় এসেছে ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করায় অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আওতায় অনেক অঞ্চলে বিনিয়োগ শুরু হয়ে গেছে। প্রায় এক বছর থেকে করোনায় বিশ্ব বাণিজ্যে ভাটা পড়লেও রপ্তানি আয়ে তেমন পড়েনি প্রভাব। লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিই রয়ে গেছে।

শুরুতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ ডলার। ২০০৫-০৬ সালে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ছিলো। ২০০৮ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। পরের বছর সাড়ে ৭ বিলিয়ন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ায় সেই রিজার্ভ চলতি অর্থবছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৪৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন (৪৪১২ কোটি) ডলার রেকর্ড করেছে। অবশ্য আকু পেমেন্টের পর ২২ মার্চ কমে ৪৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে মেমেছে। দারিদ্র্যের হার প্রায় ৮৩ শতাংশ থেকে সাড়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। আর অতি দারিদ্র্যের হার সাড়ে ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথপরিক্রমা বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয় হয়েছে।

জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের তালিকার চূড়ান্ত সনদপত্র লাভ : স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরে মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন- এই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। ২০১৫ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে। মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশ এসব শর্ত পূরণে সক্ষম হয়েছে। জাতির পিতার ৯৮তম জন্মদিনে বাংলাদেশ জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এর ধারাবাহিকতা ২০২১ সালেও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।  তাই তো গত ২২ ফেব্রুয়ারি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত করার জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশের সনদপত্র পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রূপকল্প : ২০২১ বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশেষ নজর রেখে প্রকল্প গ্রহণ ও কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

দুর্গম অঞ্চলও আলোকিত : স্বাধীনতার সময়ে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে মাত্র ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। এক সময়ে শহরেও তেমন বিদ্যুৎ থাকতো না। আর গ্রামে তো কখন আসতো তা বলা মুশকিল ছিলো। তাই ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ খাতে সাফল্য আনতে কুইক রেন্টালের সাথে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য রামপাল, মাতারবাড়ী, পায়রা ও মহেশখালীতে মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ বিশেষ মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। পাবনার রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। এক যুগে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ায় বর্তমানে সব জায়গায় পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। বর্তমানে ২০২১ সালে সবার ঘরে বিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখা শুরু করেছে। প্রায় ৯৯ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। তবে  যে সব এলাকা জাতীয় গ্রীডের আওতায় এখনো আসেনি যেমন কক্সবাজারের নিঝুম, হাতিয়া ও কুতুবদিয়া দ্বীপে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকার সাবমেরিনের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে এ ব্যাপারে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। তাতে দ্বীপের চার লাখ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পাবে। বর্তমানে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১৪৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৪ হাজার ৯৮২ মেগাওয়াট উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করছে।

আচমকা করোনা মহামারি সামলাতে প্রণোদনা : হঠাৎ করে করোনায় দেশ আক্রান্ত হলে এগিয়ে যাওয়া অর্থনীতির ধকল সামলাতে গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী ২১টি প্যাকেজের মাধ্যমে এক লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার ঋণ, নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তার ঘোষণা করেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সম্মুখযোদ্ধা, বড় বড় ব্যবসায়ী থেকে ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তা, বিদেশফেরত প্রবাসী শ্রমিকসহ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করতে এসব প্যাকেজ দেয়া হয়েছে। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ৭০ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। পুরোটা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অর্থমন্ত্রণালয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পরে এসএমই খাতে আরও দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার।  

খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্জন : স্বাধীনতার পর দেশে বেকারত্বের হার ভয়াবহ ছিলো। ১৯৭২-৭৩ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৯৯ দশমিক ৩০ লাখ টন ছিলো। যা চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্য। তাই চেয়ে থাকতে হতো বিশ্বের দিকে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে বর্তমানে সেই উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫১ কোটি টন। এমনকি রপ্তানিও করা হচ্ছে কোনো কোনো দেশে। নিরাপত্তা খাতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিলো মাত্র ৩৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় পাঁচ কোটির বেশি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনাজনিত আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল করা এবং গ্রামে বসবাসরত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। দেশের অর্জনে সারা বিশ্বভাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ চীন, কাতার, ভারত ও মালয়েশিয়ার কাতারে পৌঁছে গেছে। করোনা ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। ধনী-গরিব সব দেশেই এর প্রভাব পড়েছে। বেশির ভাগ দেশের মোট জিডিপি সংকুচিত হয়েছে। কর্মহীন হয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানী, করোনার প্রাথমিক অভিঘাত পার করে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে এগিয়ে চলছে। করোনা মহামারি দুর্গতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশার কথাই শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর দেখানো নির্দেশিত পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ম্যাজিকটা হচ্ছে দেশপ্রেম। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণেও বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ এবং সেভাবে কাজ করছে।

আমারসংবাদ/জেআই