Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনার কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি মানবসেবক ডিআইজি হাবিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৬, ২০২১, ০৮:১৫ পিএম


করোনার কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি মানবসেবক ডিআইজি হাবিব
  • আরোগ্য কামনা করে গতকাল বাদ জুমা রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বায়তুল নূর জামে মসজিদে বিশেষ দোয়া-মুনাজাতের আয়োজন করেন দৈনিক আমার সংবাদ সম্পাদক হাশেম রেজা
  • এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন মসজিদেও ডিআইজি হাবিবুর রহমানের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে পুলিশ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সাধারণ থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকহানাদার বাহিনীকে মোকাবিলা করেছে, সে পুলিশই আজ আবার মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। শুরু থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম না থাকলেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পুলিশের প্রতিটি সদস্যই ছিলেন নির্ভীক। সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে যেমন তাদের হতে হয়েছে কঠোর, তেমনি মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজেনও পাশে দাঁড়িয়েছেন আক্রান্ত হওয়ার বা মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করেই। মানবিক এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংক্রমণের শিকার হয়েছেন মাঠপর্যায়ের হাজার হাজার পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের স্বজনরা। মারাও গেছেন অনেকে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের জীবন বাঁচাতে গিয়ে গত মঙ্গলবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমানও। যিনি সরকার ঘোষিত লকডাউনের সফল বাস্তবায়নসহ করোনা মোকাবিলায় রেঞ্জ প্রধান হিসেবে কুড়িয়েছেন সাধারণ মানুষের ব্যাপক প্রশংসাও। বর্তমানে তিনি রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানা যায়, বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। অন্য কোনো সমস্যা না থাকায় দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। তাকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সাধারণ শয্যায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফিন্যান্স) পুলিশ সুপার (এসপি) ড. মো. এমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘তিনি (হাবিবুর রহমান) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্যারের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। অন্য কোনো সমস্যা না থাকায় দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। এ ছাড়া তার শরীরের অক্সিজেন লেভেলও স্বাভাবিক রয়েছে। স্যার এখন কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের করোনার সাধারণ বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা আশা করছি, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

এদিকে পুলিশের এই উপ-মহাপরিদর্শকের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে গতকাল বাদ জুমা রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় বায়তুল নূর জামে মসজিদে বিশেষ দোয়া-মুনাজাতের আয়োজন করেন দৈনিক আমার সংবাদ সম্পাদক হাশেম রেজা। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন মসজিদেও ডিআইজি হাবিবুর রহমানের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

হাবিবুর রহমান ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হওয়ার আগে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে উপ-মহাপরিদর্শক (প্রশাসন-ডিসিপ্লিন) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পদোন্নতিক্রমে পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত সহকারী মহাপরিদর্শক (সংস্থাপন) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন হাবিবুর রহমান।

সাভার বেদেপল্লীর জীবন বদলে দেয়া, তৃতীয় লিঙ্গের সামাজিক অবস্থান উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন তিনি। সেখানে স্কুল, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, গাড়ি চালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বুটিকস হাউসসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ও বাল্যবিয়ে রোধে ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পেছনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান ও ঢাকায় তাদের প্রথম প্রতিরোধ-বিষয়ক ঘটনা নিয়ে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি বইও লিখেছেন। বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন হাবিবুর রহমান। এ ছাড়া জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের আসরে ‘এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট’ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের পর তার দিকনির্দেশনাতেই করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রকোপে ঢাকা রেঞ্জের মাঠপর্যায়ের প্রতিটি পুলিশ সদস্যই রোগীদের জীবন বাঁচাতে দিয়েছেন রক্ত, খাবার পৌঁছে দিয়েছেন ভবঘুরে-ফুটপাতে-গরিবের কাছে, গর্ভবতীদের নিজেদের গাড়ি করে পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে, গরিব ও নিরন্ন শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়েও দিয়েছিলেন চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য। করোনা সংক্রমণের প্রথম দিন থেকেই কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর জন্য অপেক্ষা না করেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজে যেমন জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, তেমনি ঢাকা রেঞ্জের প্রতিটি পুলিশ সদস্যও দাঁড়িয়েছেন সাধারণ মানুষের পাশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব কার্যক্রমের ব্যাপক প্রশংসাও করছে মানুষ। করোনায় শুধু কোয়ারেন্টাইন কিংবা লকডাউনই বাস্তবায়ন করেনি পুলিশ, বরং করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি, তখন পুলিশই তাদের জানাজার আয়োজন, দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছে। এসব দায়িত্ব পুলিশের না হলেও পুলিশ এ কাজ করেছে নিজেদের মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই— এমনটাই বলছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। এ জন্য পুলিশ মানুষের হূদয়ের মণিকোঠায়ও স্থান করে নিয়েছে। করোনা প্রতিরোধে নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখায় দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে প্রকৃত সেবক হিসেবেও পরিণত হয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার বাংলাদেশ পুলিশের এ ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।  

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে বলেছিলেন, ‘পুলিশ সর্বদা জনগণের পাশে থেকে সেবা দিয়েছে। দেশের যেকোনো দুর্যোগে পুলিশ সবার আগে সর্বদা এগিয়ে আসে। যেকোনো সেবায় জনগণের প্রধান ভরসাস্থল পুলিশ। মহামারি করোনায় এর চূড়ান্ত রূপ মানুষ দেখেছে। করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা কাজ করেছেন। পুলিশের এসব মানবিক কর্মকাণ্ড এখন মানুষের মুখে মুখে। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে দেশের প্রত্যেক পুলিশ সদস্যই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

আমারসংবাদ/জেআই