নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামছাড়া

সামনে রমজান মাস। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চাকরিজীবী এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনকে এখনি দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ চিত্র এখন প্রতিদিনের। বিশেষ করে চাল, তেল, মুরগি, গরুর মাংস আর সবজিসহ অনেক পণ্যের দামেই নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে।

গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজারের পাইকারি চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে। বর্তমানে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহে ছিলো ৬৬-৬৭ টাকা কেজি। মিনিকেট ৬০-৬২ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৫ টাকায়, আটাশ চাল গত সপ্তাহে ছিলো ৪৮-৫০ টাকা, গতকালকের দাম ৫২-৫৩ টাকা। মোটা চালও কেজিতে দুুুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়।

নোয়াখালি রাইছের মালিক পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন পাটওয়ারী জানান, ভারতীয় চালের আমদানি কম, অন্যদিকে মিলমালিকদের অতিরিক্ত মুনাফার কারসাজি ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহের চেয়ে আজকে সব মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা। নিউমার্কেটে ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে বেড়ে ১৭০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগি ২০ টাকা বেড়ে ৩৭০ টাকা, দেশি জাতের মুরগির কেজি ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। বর্তমানে সব ধরনের মুরগির সাপ্লাই চাহিদার তুলনায় কম। এ কারণেই মুরগির দাম বেড়েছে বলে জানান জনপ্রিয় চিকেন ব্রয়লার হাউসের মালিক মো.শাহজাহান মিয়া।

মাছের বাজার অনেকটা স্থিতিশীল আছে। নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বড় রুই বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩৫০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ টাকা, চিংড়ি বড় এক হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ৬০০ টাকা। বাতাসি মাছ প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, বাইম মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, টেংরা ৪০০-৪৫০ টাকা এবং শোল মাছ ৫০০ টাকা করে দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া মাঝারি আকারের রূপচাঁদা মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়।

ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে আবারো বেড়েছে। সরকারিভাবে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানি বেশি দামে সরবরাহ করছে বলে দোকানিরা নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেটের মুদি দোকানি মোহসিন মিয়া। তার দোকানে গতকাল শুক্রবার কোম্পানি ভেদে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। দুই লিটার ২৫৫ থেকে ২৬০ টাকা। পাঁচ লিটার ৬২৫ থেকে ৬৬০ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগে এই তেলের দাম ছিলো এক লিটার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, দুই লিটার ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা।

রাজধানীর হাতিরপুল, নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ টাকা বেড়ে ৩৫-৪০ টাকা, বেগুন (গোল) ৮০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, লাউ ৫০-৬০ টাকা, টমেটো পাঁজ টাকা বেড়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে তিন টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা, আলু আগের মতোই ১৮ টাকা, রসুন (বড়) ১২০ টাকা, মশুর ডাল দেশিটা বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০০-১০৫ টাকা দামে। লেবুর দাম প্রতিদিনই অবিশ্বাস্যভাবে বাড়ছে। গরমে সবসময় লেবুর চাহিদা বেশি থাকে। এ সময় খাবারে সঙ্গে লেবু খাওয়াসহ সবাই লেবুর শরবত খেতে পছন্দ করেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম বলে লেবুর দামের ঊর্ধ্বগতি বলে জানালেন নিউমার্কেট বনলতা বাজারের মোস্তফা স্টোরের সবজি বিক্রেতা মোস্তফা। বর্তমানে মাঝারি আকারের এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। আর বড় লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে গত সপ্তাহের তুলনায়। গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকায়। খাশির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৮০-৯০০ টাকায়।

আমারসংবাদ/জেআই