Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

হাত বাড়ালেই মোবাইল ব্যাংকিং

জাহাঙ্গীর আলম

মার্চ ২৭, ২০২১, ০৯:০৫ পিএম


হাত বাড়ালেই মোবাইল ব্যাংকিং
  • জানুয়ারিতে গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১০ কোটিরও বেশি
  • করোনাকালেও প্রবাসী আয়ও বেড়েছে ৪০ শতাংশ
  • প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকা

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে চারটি ব্যাংক কার্যক্রম চালু করলেও সেবা পেতে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হতো। ৫০ বছরের ব্যবধানে পরিধি বেড়ে ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের কার্যক্রম প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে। ব্যাংকের শাখা না থাকলেও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন সেই সুযোগ করে দিয়েছে। মাত্র ১৫টি ব্যাংকে দিনে লেনদেন হচ্ছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে তা এক শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। শুধু তাই নয়, তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে ক্যাশ আউটের পরিমাণও প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়েছে জানুয়ারি মাসে।

যাতায়াতের ঝামেলা ছাড়াই হাত বাড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা পাওয়া যাচ্ছে। জানুয়ারিতে গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১০ কোটিরও বেশি। প্রবাসী আয়ও প্রতিনিয়ত বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। করোনাকালেও ৪০ শতাংশ বেড়েছে জানুয়ারিতে। তবে বিকাশসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সর্ভিস চার্জ অনেক বেশি হওয়ায় গ্রাহকের পকেট কেটে যাচ্ছে। এই চার্জ কমা দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে ৬১টি তফসিলভুক্ত ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রথমে ২৮টি ব্যাংক অনুমোদন পেলেও বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অনুমোদন বাতিল করেছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা প্রদান করছে ১৫টি ব্যাংক। ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানোর বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস। ফলে যেকোনো সময় লেনদেন করতে পারছেন গ্রাহকরা। এতে জনপ্রিয়তা বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের। এই লেনদেনে ফেব্রুয়ারিতে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭। যা ডিসেম্বরে ছিলো ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৭ জন।

এক মাসের ব্যবধানে এজেন্ট কমেছে এক দশমিক ৪ শতাংশ। এসব এজেন্টের মাধ্যমে জানুয়ারিতে রেজিস্টার্ড লেনদেনকারী (ক্লাইন্ট) সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি পাঁচ লাখের বেশি। যা ডিসেম্বরে ছিলো ৯ কোটি ৯৩ লাখ। বেড়েছে এক দশমিক ২ শতাংশ। জানুয়ারিতে সক্রিয় হিসাবধারী ছিলেন ৩২৪ কোটি ১৩ লাখ। যা ডিসেম্বরে ছিলো ৩২৩ কোটি ২৭ লাখ গত মাসে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৭ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। যা আগের মাসে ছিলো ৫৬ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে বেড়েছে এক দশমিক ২ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রতিদিনে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বরে ছিলো এক হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। বেড়েছে এক দশমিক ২ শতাংশ। আর দিনে গড়ে লেনদেন (ট্রানজেকশন) ৯৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৩২টি। যা ডিসেম্বরে লেনদেন ছিলো ৯৬ লাখ ৬১ হাজার ৫১২টি। 

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায় দুমাস আগে অক্টোবরে নিবন্ধিত এজেন্টের সংখ্যা ছিলো ১০ লাখ ২৮ হাজার ৬৭৭টি। যা সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। ওই মাসে নিবন্ধিত এজেন্টের সংখ্যা ছিলো ১০ লাখ ১৭ হাজার ৫৫টি। তবে সক্রিয় হিসাবধারী ব্যক্তির সংখ্যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় কমে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। অক্টোবর পর্যন্ত সক্রিয় হিসাবধারী ছিলেন ৩৩২ কোটি ৯৩ লাখ। যা সেপ্টেম্বরে ছিলেন ৪১০ কোটি ৩৫ লাখ। অক্টোবরে লেনদেন হয়েছে ২৯০ কোটি ১৮ হাজার ৪২৩ বার, যেখানে টাকার পরিমাণ ছিলো ৫৩ হাজার ২৫৪ কোটি ৮৪ লাখ। আগের মাস সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ৪৯ হাজার ১২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে অক্টোবরে লেনদেন বেড়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া অক্টোবর মাসে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৮ বার। যেখানে ছিলো এক হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন লেনদেন হয় এক হাজার ৬৩৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে। শুধু দেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হচ্ছে। জানুয়ারিতে রেমিটেন্স (প্রবাসী আয়) এসেছে ১৮৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যা আগের মাসে ছিলো ১৩৪ কোটি ৭৮ লাখ কোটি টাকা। যা এক মাস আগে অক্টোবরে মোবাইলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) এসেছে ১১৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের মাসের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। কারণ সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১০ কোটি ১০ লাখ টাকা। জানুয়ারিতে ক্যাশ ইন কমলেও ক্যাশ আউট বেড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি ক্যাশ ইন হয়েছে ১৭ হাজার ২১২ কোটি টাকা। যা আগের মাসে হয়েছিল ১৭ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। আর অক্টোবরে ক্যাশ ইন হয়েছিল ১৫ হাজার ৮৭৬ কোটি ৫১ লাখ এবং ক্যাশ আউট হয়েছিল ১৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। জানুয়ারিতে ক্যাশ আউট লেনদেন (ট্রানজেকশন) হয়েছে ১৫ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। যা আগের মাসে হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। বেড়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ক্যাশ ইন হয়েছিল ১৪ হাজার ৭২৩ কোটি ৩৪ লাখ এবং ক্যাশ আউট হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৯৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। জানুয়ারিতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে লেনদেন হয়েছে ১৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। যা আগের মাসে হয়েছিল ১৬ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। অক্টোবরেও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে লেনদেন বেড়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ১৬ হাজার ৫৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। এছাড়া বেতন, ইউটিলিটি বিল, মার্চেন্ট পেমেন্ট এবং বিভিন্ন ভাতাসহ সরকারের লেনদেনও করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে।  বর্তমানে ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেট, ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ, মার্কেনটাইল ব্যাংকের মাইক্যাশ, ইসলামী ব্যাংকের এম-ক্যাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের টি-ক্যাশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ফার্স্ট পে সিওরকাশ, ইউসিবির ইউক্যাশ, ওয়ান ব্যাংকের ওকে ব্যাংকিং, রুপালী ব্যাংকের রুপালী সিওরক্যাশ, সাউথইষ্ট ব্যাংকের টেলিক্যাশ, বিসিবির বিসিবি সিওরক্যাশ, যমুনা ব্যাংকের যমুনা সিওরক্যাশ, আল-আরাফা ইসলামীর ইসলামিক ওলেট, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের স্পোট ক্যাশ ও মেঘনা ব্যাংকের মেঘনা ট্যাপ এন পের মাধ্যমে সারা দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সেবা।   বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ সালে সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ও জনতা ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করে। পরে ব্যাসিক ব্যাংক ও বিডিবিএল ব্যাংকও কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ইসলামী আটটিসহ বেসরকারি ৪৩টি ব্যাংক, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৯টি এবং বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংক গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। এভাবে ৬১টি তফসিলি ব্যাংক ছাড়াও জুবিলী ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক   ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকও সেবা দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রযুক্তির ব্যবহার করে ব্যাংকিংয়ের সেবা প্রবর্তন করে। প্রথমে ২৮টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন শর্তপূরণে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমানে ১৫টি ব্যাংক এ সেবা চালু রাখতে পেরেছে।

আমারসংবাদ/জেআই