Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

মানি এসকর্টে জনসাধারণের অনীহা

সাইফুল ইসলাম

মার্চ ২৮, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


মানি এসকর্টে জনসাধারণের অনীহা
  • অনেকেই জানে না এই মানি এসকর্ট কী
  • কোটি টাকা বহনের প্রশ্ন এলে মানুষ পুলিশের সহযোগিতা নেয়। লাখ লাখ টাকার ক্ষেত্রে তারা এ বিষয়ে চিন্তাও করে না। সহযোগিতা চাইলে পুলিশ বলে, এত টাকা কোথায় পেলেন? নানা প্রশ্ন করবে— তাই এ ঝামেলায় জড়াতে চায় না কেউ। নিজেদের টাকা নিজেরাই বহন করে

রাজধানীতে প্রায়ই বড় অংকের টাকা আনা-নেয়ার পথে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনা এড়াতে বিনাখরচে পুলিশের মানি এসকর্ট থাকলেও জনসাধারণ এই সেবায় অনীহা প্রকাশ করে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জনগণের এ সেবা নিতে আগ্রহ কম। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবাই টাকা বহনের এই সেবা নিলে রাস্তাঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতো না। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ী, ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিজেরাই মোটা অংকের টাকা বহন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত পড়েন ছিনতাইকারীর কবলে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘটছে খুনের ঘটনাও।’

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানি এসকর্ট বা পুলিশ নিরাপত্তা একটা ঝামেলার কাজ। নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তাই নিজের টাকা নিজেই বহন করি।’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিন জনসাধারণের মানি এসকর্টের জন্য ১০টি দল গঠন করা রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে রয়েছে— রমনা, মতিঝিল, ওয়ারি ও লালবাগ বিভাগে সেবা প্রত্যাশী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে মানি এসকর্ট সহায়তা দিতে আব্দুল গণি রোডের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে পাঁচটি টিম। আবার অন্য দিকে ঢাকা উত্তরে রয়েছে— মিরপুর, গুলশান, উত্তরা ও তেজগাঁও বিভাগে এ সেবা দিকে মিরপুর পুলিশ কন্ট্রোল রুমে পাঁচটি টিম সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় থানা এবং ডিএমপি সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে এই সেবা প্রদানে মানুষদের উৎসহ করলেও মানুষ আগ্রহ করছে না। পুলিশ এসকর্ট সেবাগ্রহণের জন্য রয়েছে চারটি নম্বর। নম্বরগুলো হলো— ৯৫৫৯৯৩৩, ৯৫৫১১৮৮, ৯৫১৪৪০০ ও ০১৭১৩-৩৯৮৩১১।

বিষেশজ্ঞরা আমার সংবাদকে বলেন, কেউ ‘মানি এসকর্ট’ নিতে তেমন আগ্রহ দেখান না। নিজেরাই লাখ লাখ টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে এবং এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে বহন করছেন। সেই ফাঁকে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। কিন্তু অনেকেই জানে না এই মানি এসকর্ট কী। সেসব মানুষকে এই মানি এসকর্ট ব্যবহারে উৎসাহ করতে হবে। মানুষদের বোঝাতে হবে। পুলিশ জানায়, বাদামতলী, ইসলামপুর ও বাবুবাজারে অসংখ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন, কিন্তু নির্দিষ্ট কয়েকজন ছাড়া আর কেউ পুলিশের মানি এসকর্ট সেবা নেয় না। মানি এসকর্ট নিয়ে তেমন সাড়া পাওয়াও যায় না। মাসে বড়জোর চার থেকে পাঁচজন মানি এসকর্ট নেয় বলে জানায় পুলিশ। অথচ এলাকায় বহু ব্যবসায়ী টাকা বহন করেন নিজেরাই। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পড়তে হয় নানা বিপদের মুখে। 

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘কোটি টাকা বহনের প্রশ্ন এলে মানুষ পুলিশের সহযোগিতা নেয়। লাখ লাখ টাকার ক্ষেত্রে তারা এ বিষয়ে চিন্তা করে না। সাধারণত পোশাক কারখানার মালিকদের অনেকে মোটা অংকের টাকা বহনের ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে থাকে।’

ছিনতাই ও খুনের দুর্ঘটনার পরও টাকা বহনের জন্য পুলিশের নিরাপত্তা নেয়া হয় না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অনেক ব্যবসায়ীরা জানান, টাকা পরিবহনের জন্য পুলিশের সহযোগিতার দরকার নেই। এরা আরো নানা সমস্যায় ফেলে। সহযোগিতা চাইলে পুলিশ বলে, এত টাকা কোথায় পেলেন? নানা প্রশ্ন করবে— তাই এ ঝামেলায় জড়াতে চায় না কেউ। নিজেদের টাকা নিজেরাই বহন করে।’ মানুষ পুলিশের নিরাপত্তা সেবা নিতে অনীহা দেখালেও ছিনতাই ও  টাকা লুটসহ নানা দুর্ঘটনা কিন্তু থেমে নেই। দেখা যায়, গত বছর ১৭ মে টাঙ্গাইলের কালিহাতির একটি পোস্ট অফিস থেকে গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্র ও এফডিআরের ৫০ লাখ টাকা তুলে নিজের গন্তব্যস্থল একটি সাব পোস্ট অফিসে যাওয়ার পথে তাকে গুলি করে টাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়া হয়। ওই বছর ৭ জুন গাজীপুরে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার পথে একটি পোশাক কারখানার ৮২ লাখ ১২ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তরপর গত বছর ২৮ অক্টোবর ঢাকার সাভারে দিনের বেলায় এক ইতালি প্রবাসীকে গুলি করে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা।

আমারসংবাদ/জেআই