Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

নিরাপত্তার কোনো বালাই নেই!

শরিফ রুবেল

মার্চ ৩০, ২০২১, ০৮:২৫ পিএম


নিরাপত্তার কোনো বালাই নেই!
  • ভোগান্তির শিকার বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা
  • হকারের বাধাহীন প্রবেশে বিচারক, আসামি ও বিচার প্রার্থীদের নিরাপত্তায় শঙ্কা
  • নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ আইনজীবীদের
  • সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি

নিরাপত্তাব্যবস্থা চলছে ঢিমেতালে। অল্পসংখ্যক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে মূল ফটকের সামনে। তারাও অমনোযোগী। যত্রতত্র ব্যাগ ও মালামাল নিয়ে ঢুকছে মানুষ। নেই কোনো তল্লাশি। ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রবেশপথে দুটি ‘আর্চওয়ে’ রয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই সেগুলো সচল নাকি বিকল। অন্য আদালতগুলোর সামনে নেই কোনো আর্চওয়ে।

প্রবেশপথে অধিকাংশ সময় দুজন কনস্টেবল নিয়োজিত থাকলেও আর্চওয়ে ব্যবহার না করেই আর্চওয়ে এড়িয়ে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের হেঁটে যেতে দেখা যায়। আবার আদালতের ভেতরে বিভিন্ন গলিতে নিরাপত্তার বালাই নেই। হকার, ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট, আইনজীবীবেশী মামলার তদবিরকারক ও অবাঞ্ছিত লোকজনের অবাধ আনাগোনায় মুখর আদালত প্রাঙ্গণ। এছাড়া আইনের পুস্তক, সাদা শার্ট, কোট-গাউন, চা-বিস্কুট, কাটা পেঁপে-শশা-আনারস, লেবুর শরবত বিক্রেতা, জুতা পলিশ, চায়ের দোকান, ফল বিক্রেতা, শার্ট-কোট-গাউন বিক্রেতা, বিভিন্ন ফলের দোকান, ঝালমুড়ি, বাদাম, বিড়ি-সিগারেট বিক্রেতাসহ অন্তত ৪০ ধরনের হকার আদালত চত্বরে বাধা ছাড়াই অবাধে বিচরণ করে। এসব ভ্রাম্যমাণ হকারের অনেকেই স্থায়ী আসন গেঁড়ে বসেছেন। এ কারণেই আদালতের বিচারক, আসামি ও বিচারপ্রার্থী মানুষদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা। সমস্যা সমাধানে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ফলে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েই চলছে আদালত।

এদিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় পর্যাপ্ত পার্কিংব্যবস্থা না থাকায় বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আদালত প্রাঙ্গণে নেই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ। নেই বিশ্রামাগারও। বিচারপ্রার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধাও। ফলে টয়লেট সারতে ছুটতে হয় এদিক-সেদিক।  ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আগুনের ঘটনার পর আদালতগুলোর সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীরা।

তারা বলছেন, জনসমাগম বেশি হওয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেশি। সে হিসেবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ঘাটতি রয়েছে। এদিকে, আদালতে নিরাপত্তা ও অগ্নিঝুঁকি এড়াতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আদালতগুলোর নিরাপত্তায় প্রধান বিচারপতির কঠোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আইনজীবীরা।

ঢাকা আদালতে সরেজমিন দেখা যায়, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে নিরাপত্তার লক্ষ্যে একজন কনস্টেবল থাকেন। এছাড়া বাকি ৩৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসের সামনে পুলিশি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই। আদালতের বারান্দায় ও ভেতরে অনেক সময় ভ্রাম্যমাণ চা-সিগারেট ও বাদাম বিক্রেতাদের দেখা যায়।

জানা যায়, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত, বিশেষ জজ আদালত, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের শতাধিক আদালতে আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, আসামি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার সময়ে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আদালতের নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহাতায় দেশের প্রত্যেক আদালত প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকের বাসভবন, বিচারক ও কর্মচারীসহ আদালতসংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। চার বছরেরও তা কার্যকর হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজহার উল্লাহ ভূইয়া বলেন, ‘যাদের শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়ার বিষয় নেই। যেমন— আসামির আত্মীয়স্বজন ও অপ্রয়োজনীয় লোক। তাদের আদালতে আসার ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। সেইসাথে সার্বিকভাবে আদালতের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার। ঢিলেঢালা নিরাপত্তা নিয়ে আদালত চলতে পারে না।  ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদা আক্তার বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশ ভোগান্তিতে পড়ে। আদালতের সামনে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা নেই। সরকারি বরাদ্দ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে এসব সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। বয়স্ক, নারী ও শিশুরা যেন আদালতে এসে অসুবিধায় না পড়ে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ঢাকা বারের সাবেক কার্যকরী পরিষদের সদস্য আল আমিন সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, হকারের সংখ্যাধিক্য ও বাধাহীন প্রবেশ আদালতের বিচারক, আসামি ও বিচারপ্রার্থী মানুষদের নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। নিম্ন আদালতে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীর যথেষ্ট নিরাপত্তা নেই। সিএমএম আদালত ছাড়া কোনো আদালতের প্রবেশপথে আর্চওয়ে নেই। আর সিএমএম আদালতে আর্চওয়ে থাকলেও তদারকি নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই