Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনা মোকাবিলার ধরনে অসন্তোষ

মার্চ ৩১, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম


করোনা মোকাবিলার ধরনে অসন্তোষ
  • সরকারের উদ্যোগের অভাবে সংক্রমণ বাড়ছে -মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি মহাসচিব
  • রাজনৈতিক আনন্দ ফূর্তি বন্ধ করতে হবে -কাজী ফিরোজ রশীদ, জাপার কো-চেয়ারম্যান
  • সরকার শুধু স্কুল-কলেজে করোনা খুঁজে পেয়েছে -মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক
  • নির্দেশনা দিয়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে না -রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা

আবারো করোনায় মৃত্যুরূপে দেশ। ছোট দেশে মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ৯ হাজার। প্রতিদিন মৃত্যু এখন পঞ্চাশের ঘরে। আক্রান্ত প্রতিদিন পাঁচ হাজারের উপরে। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দেশের সচেতন মহলে। এ নিয়ে সরকারের উদ্যোগ ও সচেতনতাকে দায়ী করছেন দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ কোনো সচেতনতার দেশ নয়। এ দেশের লোকজনকে সচেতন হতে বাধ্য করতে হয়। করোনা নিয়ে আমরা দেখছি সরকার শুধু কিছু নির্দেশনা দিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। হেলথ মিনিস্ট্রি থেকে, সরকারের পক্ষ থেকে যে দৃশ্যমান ক্যাম্পিংয়ের অভাব রয়েছে, তারা ডাটাগুলোকে গোপন করছে। টেস্ট যা হচ্ছে তা খুবই কম। রাজনীতিবিদরা সরকারকে দোষারোপ করে এও বলছেন, সরকার শুধু স্কুল-কলেজের মধ্যে করোনা খুঁজে পেয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে হাঁটবাজার খুলে দিয়েছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করেছে। বিদেশিদের দেশে এনে উৎসব করেছে। মানুষ করোনায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে আর সরকার দেশে অনুষ্ঠানের নামে উৎসব করছেন। আনন্দ ফূর্তি করছেন। দলীয় কর্মসূচিতে লোক জড়ো করছেন বিদেশিদের দেশে আনছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির উৎসব চলছে অথচ আইসোলেশন দরকার তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। আইসিউর দরকার তা নিশ্চিত করণে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা মানা হচ্ছে না। আমাদের দেশের চিকিৎসাবিদরাও যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন তাও সরকার গ্রহণ করছে না। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ধ্বংসশীল দেশের কাতারে পড়ে যাবে বলেও দাবি উঠেছে। 

এ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় নেতা ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কোনো সচেতনতার দেশ নয়। এ দেশের লোকজনকে সচেতন হতে বাধ্য করতে হয়। করোনা নিয়ে আমরা দেখছি সরকার শুধু কিছু নির্দেশনা দিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সচেতনতার জন্য এখনি কার্যত উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নাগরিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। না হয় করোনা বিপর্যায়ের দায়ভার এই সরকারকেই নিতে হবে।’

নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না আমার  আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সরকার মোকাবিলা করতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শুধু চাপাবাজি করে গেছে। সরকার শুধু স্কুল-কলেজের মধ্যে করোনা খুঁজে পেয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে হাঁটবাজার খুলে দিয়েছে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করেছে। বিদেশিদের দেশে এনে উৎসব করেছে। আমাদের যেভাবে করোনা রোগী বাড়ছে এখন প্রয়োজন সরকারের সচেতনতায় তা হচ্ছে না। আইসোলেশন দরকার, তাও নিশ্চিত করা হচ্ছে না। আইসিউর দরকার তা নিশ্চিতকরণে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তা মানা হচ্ছে না। আমাদের দেশের চিকিৎসাবিদরাও যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন তাও সরকার গ্রহণ করছে না। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ধ্বংসশীল দেশের কাতারে পড়ে যাবে।’

জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘মানুষ করোনায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে আর সরকার দেশে অনুষ্ঠানের নামে উৎসব করছে। আনন্দ ফূর্তি করছে। দলীয় কর্মসূচিতে লোক জড়ো করছেন বিদেশিদের দেশে আনছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির উৎসব চলছে। এগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছে— এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। আজ আমার ঘনিষ্ঠজনদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আমার কাছে অনেকে একটা আইসিউয়ের ব্যবস্থা করে দিতে হাত পা ধরছেন। কিন্তু আমি ব্যবস্থা করতে পারছি না। এটা একটা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমার জন্য অনেক কষ্টের। আজ দেশে আনন্দ ফূর্তির কারণেও  করোনার ভয়বহতার বড় কারণ। সরকার যেভাবে হাঁটছে যে উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি তাতে কোনোভাবেই করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘এই যে, জনগণের অ্যাওয়্যারনেসের অভাব আমরা দেখতে পারছি— মাস্ক পরে না। কেন পরে না? কারণ সরকার সেটা তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়নি। যে ক্যাম্পিং করা দরকার, যে উদ্যোগটা নেয়া দরকার, সেই উদ্যোগটা আসেনি সরকারের কাছ থেকে। যার ফলে সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বাড়ছে। সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে, কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করার জন্য যে উদ্যোগ সেটা কখনোই লক্ষ্য করা যায়নি। এই যে, উৎসব পালন করে যে বিদেশি মেহমানরা আসছেন তার অনেক আগেই স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল যে, করোনা খুব মারাত্মকভাবে আসছে, অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। কারণ তারা উৎসব পালন করার জন্য, বর্ষ পালন করার জন্য তখনো করেনি, এখনো তারা করেনি। এখন যেহেতু উৎসব শেষ হয়েছে, তাদের মহান অতিথিরা চলে গেছেন। এখন তারা এই বিষয়টা আবার আনছে সামনে। আজকে বাংলাদেশে সব সময় একটা মিথ্যা প্রচারণা করা হচ্ছে যে, এখানে খুব চমৎকারভাবে সরকার করোনা সমস্যাটাকে সমাধান করছে, তারা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পেরেছে। কিন্তু ইট ইজ এ লায়িং। যেটা একেবারেই মিথ্যা কথা।’

আমারসংবাদ/জেআই