Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

থামছে না জালিয়াতি

মার্চ ৩১, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম


থামছে না জালিয়াতি
  • ধরা পড়লে পার পাওয়ার সুযোগ নেই, শাস্তি হচ্ছেই -আমিন উদ্দিন মানিক, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
  • অবশ্যই জড়িত আইনজীবীর সনদ বাতিল করতে হবে -ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান
  • বিচার বিভাগের পবিত্রতা রক্ষায় এদের নিবৃত্ত করতে হবে -আদালতের পর্যবেক্ষণ
  • জালিয়াত চক্র ধ্বংসে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে -মত বিশেষজ্ঞদের

উচ্চ আদালতে জামিন জালিয়াতি থামছে না। মিথ্যা তথ্য ও মামলার স্পর্শকাতর অংশ বাদ দিয়ে নেয়া হচ্ছে জামিন। এমনকি হাইকোর্টের জামিনের ভুয়া কাগজ তৈরি করে থানায় জমা দিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছেন অপরাধীরা। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে জমিন সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের সহায়তায় নেয়া হচ্ছে জামিন।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের পরও উচ্চ আদালতে জামিন জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্য থামছে না। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের পরও প্রায়ই ঘটছে জামিন জালিয়াতির ঘটনা। বিচারিক আদালতের রায় ও আদেশের নথি, মামলার এজাহার, অভিযোগপত্রের তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদনের ঘটনা যেনো থামছেই না। জালিয়াতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েও থামানো যাচ্ছে না। ফলে জামিন জালিয়াতির ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে বিচার প্রশাসনকে। সেজন্য জালিয়াত চক্রকে রুখতে দ্রুত আইনের আওতায় আনার ওপর জোর দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, দেশের বিচার বিভাগের কর্তৃত্ব ও সামগ্রিক পবিত্রতা রক্ষায় এই চক্রকে অবশ্যই নিবৃত্ত করতে হবে। বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ জামিন জালিয়াতির ঘটনায় এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জামিন জালিয়াতির ঘটনায় মামলা হলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির আছে কী না কখনো দেখা যায় না। যার কারণে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই চক্র। এই চক্রকে ধ্বংসে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।  গত ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। এর একটি মামলায় হাইকোর্টের আগাম জামিনের জাল আদেশ সৃজন করে রাজশাহী বিভাগীয় মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুল ইসলামসহ ৩০ আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান। দেন মহড়া। এই জাল আদেশ সৃজনের বিষয়টি নজরে এলে হাইকোর্ট গত ২৪ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দেন। গত সপ্তাহে লিখিত আদেশের অনুলিপি প্রকাশ পায়। আদেশে হাইকোর্ট বলেছে, এটা কাচের মতো স্পষ্ট যে, বগুড়ার মামলায় সৃজনকৃত জাল জামিন আদেশটি ছিলো মিথ্যা, প্রতারণামূলক ও জাল জালিয়াতিতে ভরা। হাইকোর্ট জামিন আদেশ না দেয়ার পরও উচ্চ আদালতের দুজন বিচারপতির নাম ব্যবহার করে এ ধরনের জাল আদেশ সৃজন খুবই গুরুতর অপরাধ ও সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের শামিল। একইসঙ্গে তা গুরুতর আদালত অবমাননাকরও বটে। পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছে, এই ধরনের জাল জালিয়াতিপূর্ণ আদেশ সৃজনের সঙ্গে জড়িত চক্র বা দুর্বৃত্তরা বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তৃপক্ষের প্রতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এ ধরনের জাল আদেশ সৃজনের কারণে বিচার ব্যবস্থায় একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। তাই বিচার ব্যবস্থার কর্তৃত্ব, সামগ্রিক পবিত্রতা রক্ষায় এই জালিয়াত চক্রকে নিষ্ক্রিয় করতে হবে। সেজন্য এসব দুর্বৃত্তকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে ভেঙে দিতে হবে জালিয়াত চক্রের নেটওয়ার্ক। এদিকে এই পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি জাল আদেশ সৃজনের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, সিআইডিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত, বগুড়ার জাল আদেশ সৃজনের ঘটনায় আমিনুলসহ ৩০ আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। শুধু বগুড়ার ঘটনায় ইতোপূর্বে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় জামিন জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। সেসব ঘটনায় আসামি, মামলার তদবিরকারক ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাও হয়েছে। অনেক সময় আদালতের কিছু অসাধু কর্মচারীও এই জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, আসলে বিভিন্ন সময় দেখা যায় উচ্চ আদালতের কিছু আইনজীবী মিথ্যা তথ্য দিয়ে, তথ্য গোপন করে আসামির জামিন করান। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। টাকার জন্য নৈতিকতা বিলিয়ে দেয়া ঠিক নয়। সুতরাং যারা এসব অনিয়মের সাথে জড়িত তাদের ব্যাপারে আদালত যদি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ না নেন, সনদ বাতিল বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না করেন, তাহলে এ ধরনের ঘটনা কমবে না। তিনি যোগ করেন, এসব ক্ষেত্রে আদালত অনেক সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সেটি বার কাউন্সিলে পাঠান। কিন্তু বার কাউন্সিলের ট্রাইব্যুনাল যেহেতু বার কাউন্সিলেরই সদস্যদের দিয়ে গঠিত, তাই অভিযুক্ত আইনজীবীদের সে রকম বিচার হয় না। এ অবস্থায় হাইকোর্ট যদি মনে করেন যে, কোনো উকিল অসৎ বা প্রতারণামূলক কাজ করেছেন, তাহলে কোর্টকেই তার সনদ বাতিলের বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মানিক আমার সংবাদকে বলেন, উচ্চ আদালতে অনিয়ম রোধে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পাশাপাশি অ্যাটর্নি অফিস বেশ তৎপর। আমাদের ডিএজি ও এএজিদের বিভিন্ন বেঞ্চে জামিন জালিয়াতি ধরতে কোনো গাফিলতি নেই। আমরা সতর্ক আছি বলেই জালিয়াতি করে কেউ পার পাচ্ছে না। প্রধান বিচারপতিও সুপ্রিম কোর্টে যেকোনো জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে অভিযানও চালানো হচ্ছে। জালিয়াতি ধরা পড়ার পর জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, জরিমানাও হচ্ছে। তবে মামলা হওয়ার পর তাদের কি শাস্তি হচ্ছে সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে পার পাওয়ার সুযোগ নেই, শাস্তি হচ্ছেই।

আমারসংবাদ/জেআই