Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রাজনীতিতেও চোখ রাঙাচ্ছে করোনা

রফিকুল ইসলাম

এপ্রিল ১, ২০২১, ০৮:৩০ পিএম


রাজনীতিতেও চোখ রাঙাচ্ছে করোনা
  • সীমিত আ.লীগ-বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম
  • রাজনীতি নয় সকল বিষয়ে আঘাত করেছে করোনা -মোজাফফর হোসেন পল্টু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ আ.লীগ
  • আ.লীগের মানবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে না -আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আ.লীগ 
  • মানুষের জীবন বাঁচানো আমাদের দায়িত্ব -আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
  • করোনায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে -ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি

দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা! থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল! পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। করোনার উচ্চ সংক্রমণ ফের চোখ রাঙাচ্ছে রাজনীতিতে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সীমিত করেছে। তারা বলছে, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও জনসেবামূলক কাজ অব্যাহত থাকবে সবারই।

তথ্যমতে, প্রতিদিন রেকর্ড ছাড়াচ্ছে করোনার সংক্রমণের সংখ্যা ও মৃত্যুর হার। এমন পরিস্থিতিতে ফের ঘরবন্দি হতে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নিজেদের দৈনন্দিন কর্মসূচি সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, সেমিনার ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

এর আগে গত বছর মার্চে বাংলাদেশে করোনা আঘাতের পর দীর্ঘ পাঁচ মাস হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলো দেশের রাজনীতি। বন্ধ করে দেয়া হয় দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যালয়। তবে থেমে ছিলো না রাজনৈতিক দলগুলোর জনসেবামূলক কার্যক্রম। করোনার অসহায়, দরিদ্র, শ্রমজীবী, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের পাশে ছিলেন সবাই। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি করোনার প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ করেন কেউ কেউ। এমন পরিস্থিতিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ ক’জন নেতা। তাই করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ মোকাবিলায় সতর্ক আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল। ফলে মাঠের আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সীমিত আকারে পালন করবেন তারা। একই সাথে পাশে থাকবেন দুস্থ ও অসহায় মানুষদের পাশে।

বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধ ও দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করেই বিএনপি সভা-সমাবেশ,  মিছিল-মিটিং ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন বাঁচানো আমাদের দায়িত্ব। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সংঙ্কটের শুরু থেকে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জীবনে ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন।

সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সতর্ক করার পাশাপাশি করোনার প্রতিরোধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। অসহায় দুস্থদের বাড়ি বাড়ি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও জনসেবামূলক কাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।         

সূত্রে জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের মতোই ‘ভার্চুয়াল রাজনীতি’তে জোর দিচ্ছেন সবাই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দলের পক্ষে থেকে ভিডিও বার্তা, ভিডিও কনফারেন্স, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলীয় নির্দেশনা পৌঁছে দেবে তারা।  ‘ভার্চুয়াল’ মাধ্যমে শুধু সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা নয়— একই সাথে করোনা করোনার পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষের মাঝে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডার, পিপিই, সেফটি গগলস, সুকভার, হেড কভার,  হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও এন্টিসেপটিক সাবানসহ বিভিন্ন ধরনের করোনার প্রতিরোধ সামগ্রী পৌঁছে দেবেন। তবে সবকিছু নির্ভর করবে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।’ 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘করোনার জন্য আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। কিন্তু করোনার যে মানবিক কার্যক্রম, সেটা সীমিত করা হয়নি। মানুষকে সচেতন করা, মানুষকে সাহস দেয়া, মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া— এগুলো সীমিত করা হয়নি। এ জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী প্রস্তুত ছিলো, প্রস্তুত আছে এবং আগামীতেও প্রস্তুত থাকবে। এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে। তবুও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভয়ে ঘরে বসে থাকেনি। সবাই মৃত্যুর ঝুঁকি উপেক্ষা সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। আওয়ামী লীগ ঘরে বসে থাকার দল নয়,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’  

মানুষের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে জানিয়ে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মুহূর্তে কোনো সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করা ঠিক হবে না। সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং হলেই কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানে না। সকলের জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে না।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য  মোজাফফর হোসেন পল্টু আমার সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্নে থেকেই আওয়ামী লীগ মানুষ ও মানবতার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। মহামারি করোনার মধ্যেও আপনারা মানবিক আওয়ামী লীগ দেখেছেন। এ ধারা সবসময় অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। করোনার শুধু মাঠের রাজনীতিকে আঘাত করেনি, সকল বিষয়ে আঘাত করেছে। তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।’ 

আমারসংবাদ/জেআই