Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বড় আঘাত!

মাহমুদুল হাসান

এপ্রিল ২, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম


স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বড় আঘাত!
  • মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
  • ভর্তিপরীক্ষা করোনা সংক্রমণে রসদ জোগাবে
  • বেশির ভাগ কেন্দ্রে ছিলো হাত ধোয়ার ব্যবস্থা
  • মাস্ক পরেননি অনেক শিক্ষার্থী-অভিভাবক

করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে। প্রতিদিন সংক্রমণ ভাঙছে আগের রেকর্ড। গত বছরের চেয়ে এবার দেশের অবস্থা আরও নাজুক। গেলো বছর যেখানে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের নমুনায় ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। গতকাল সেখানে ছয় হাজার ৮৩০ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছে। সেই সাথে গতকাল শুক্রবার ঘটেছে অর্ধশত প্রাণহানি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক বছরের বেশি বন্ধ। ২০২০ সালে করোনা মোকাবিলায় সাধারণ ছুটি ও লকডাউন ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এবার  মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের ধারণা, এই নির্দেশনা  আগামী দুই সপ্তাহ কার্যকরভাবে মেনে চললে সংক্রমণ কমে আসতে পারে। তাই নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করতে মাঠ প্রশাসনকে কাজ করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

দেশের এই নাজুক অবস্থায় মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও জনস্বাস্থ্যবিদদের মতামতকে পাশ কাটিয়ে ২০২০-২১ এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি নিতে সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আগের ঘোষণানুসারে গতকাল রাজধানীসহ দেশের ১৯ জায়গায় ৫৫টি কেন্দে এক ঘণ্টার ১০০ নম্বরের ভর্তিযুদ্ধে এক লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন ছাত্রছাত্রী অংশ নেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, বিশেষভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিন ফুট নিরাপদ দূরত্ব থেকে অবস্থানের নির্দেশনা থাকলেও কেন্দ্রগুলোর সামনে দেখা গেছে ভিড়।

পরীক্ষার্থী অনেকের মুখে ছিলো না মাস্ক। কেন্দ্রগুলোর প্রবেশমুখে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। কেন্দ্রের বাইরে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা লাইন ধরে পরীক্ষার দিতে প্রবেশ করেছেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছিলেন অভিভাবকরাও। ফলে দূরত্ব মানার কোনো বালাই ছিলো না। রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা কলেজ, টিচার ট্রেনিং কলেজ ঘুরে এমনটায় দেখা গেছে। দেখা গেছে, পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে অথবা স্যানিটাইজ করতে হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হলেও এমন কোনো ব্যবস্থা রাখেনি কর্তৃপক্ষ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সকাল ৮টার মধ্যে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সাড়ে ৯টায় পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে যাবে। সাড়ে ৯টার পর কোনো শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

এদিকে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত পাঁচ দফা সুপারিশে করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর ১৮ দফাকে স্বাগত জানিয়ে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় জোর দিয়েছেন। রাজধানীসহ সারা দেশের কোভিড চিকিৎসায় হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউ বেডসহ অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সাথে গুরুত্বের সাথে জনসমাগম হয় এমন কর্মকাণ্ড বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে সামাজিক অনুষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, বই মেলাসহ অন্যান্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধির দোহাই তুলে মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষা নিলেন।

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ পরীক্ষা কেন্দে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও কেউই মানেনি। কেউ এ বিষয়ে কেন্দ্রে চাপ ও দেয়নি। অভিভাবকদের ভাষায়ও ছিলো এই পরীক্ষার বিরুদ্ধে ক্ষোভ। রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রের বাইরে অবস্থানরত এক শিক্ষার্থীর মা আয়শা আক্তার।  তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে দেশের সব পরীক্ষা স্থগিত, কিন্তু কেন মেডিকেলের ভর্তিপরীক্ষা নেয়া হচ্ছে জানি না। কাউকেই তেমন স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যাচ্ছে না।’ রাজধানী তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থী সিয়াম আহমেদ জানান, ‘আমি যেখানে পরীক্ষা দিলাম সেখানে এক বেঞ্চে তিনজন করে বসতে হয়েছে। তাহলে দূরত্ব কীভাবে হলো? একই অভিযোগ করেছেন সেখানে পরীক্ষা দেয়া আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।’

চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস রাইটস অ্যান্ড সেফটি ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার বলেন, ‘মেডিকেল ভর্তির নামে নিজেরাই নিজেদের তথাকথিত স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনাকে অমান্য করলেন। এর ফলাফল চক্রাকারে তাদের কাছে আসবেই।’ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া সেখানে সব কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেনো ভর্তিপরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা আমাদের তরফ থেকে সুন্দরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেছি।’

আমারসংবাদ/জেআই