Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

শঙ্কার মধ্যেই চলবে ব্যাংক পুঁজিবাজার

জাহাঙ্গীর আলম

এপ্রিল ৩, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম


শঙ্কার মধ্যেই চলবে ব্যাংক পুঁজিবাজার

করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন হুহু করে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কিছু বিধিনিষেধ আরোপের পর মানুষকে ঘরে থাকতে সরকার গতকাল শিল্পকারখানা খোলা রেখে হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা করেছে। এতে বন্ধ থাকবে যানবহন ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। তবে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার  চলবে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কিভাবে যাতায়াত করবেন তা নিয়ে অর্থনীতিবিদসহ অনেকের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, সরকার করোনার প্রকোপ ঠেকাতে যে নির্দেশনা দিচ্ছে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রতিপালনের ব্যবস্থা করছে। ১৮ নির্দেশনার আলোকে ৩১ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব প্রতিরোধে ব্যাংকের করণীয় বিষয়ে সার্কুলার জারি করেছে। গতকাল শনিবার সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। তার নির্দেশনার আলোকে (আজ) রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৯ মার্চে ১৮ দফা নির্দেশনা উল্লেখ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সরকারের এই নির্দেশনা মানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও গত ৩১ মার্চ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের নির্দেশনা মেনে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবস্থানকালীন সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে। প্রয়োজনে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ৫০ শতাংশ কর্মী বা ব্যাংকগুলোর জনবলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়াবাজারেও চলবে লেনদেন : মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সরকার দেশজুড়ে লকডাউন দিয়েছে। তবে ব্যাংক খোলা থাকলেই শেয়ারবাজারের লেনদেনও চলবে বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) জানিয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, ‘শেয়ারবাজারে লেনদেন চলবে’। আর নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘যদি ব্যাংক খোলা থাকে, তাহলে লকডাউনের মধ্যে শেয়ারবাজারেও লেনদেন চলবে। বর্তমানে আমাদের সবকিছুই অটোমেটেড। লেনদেন করার জন্য বিনিয়োগকারীদের ব্রোকারেজ হাউসে যাওয়ার দরকার নেই। সুতরাং বিনিয়োগকারীদের বলবো, কোনো ধরনের গুজবে কান দিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য। এদিকে গতকাল ঢাকা স্টকএক্সচেঞ্জ লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান জানান, কোভিড-১৯ মহামারিকালসহ যেকোনো সময় ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু থাকলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজারের সকল লেনলেন চালু থাকবে। এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের কোনো রকম গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে ডিএসই।’ উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়। সরকারের ছুটি বাড়ার সাথে তাল মিলিয়ে শেয়ারবাজারও ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে। তবে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পরই ৩১ মে থেকে আবার শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু হয়। ইদরার নির্বাহী পরিচালক এস এম  শাকিল আক্তার বলেন,  ‘আগে জীবন,  তাই সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।’ রোববার বিস্তারিত বলা যাবে— বিমা খাত চলবে না বন্ধ থাকবে।

কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু থাকবে পোশাক কারখানা : এদিকে সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিলেও শিল্পকারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে উৎপাদন ব্যাহত না হয়। অর্থনীতিতে প্রভাব না পড়ে। এ ব্যাপারে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘সরকারি দিকনির্দেশনাসহ কঠোর স্বাস্থ্য প্রটোকল মেনেই তৈরি পোশাক খাতের কারখানা খোলা থাকবে। কারণ দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে এ খাত থেকে। সব কারখানাগুলোকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানতে ইতোমধ্যে সদস্যভুক্ত সব কারখানাকে ১৬টি দিকনির্দেশনা দিয়েছে বিজিএমইএ।’ শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘৯০ শতাংশ শ্রমিক কারখানার আশেপাশে থাকে। রিকশা চলবে, তারা অফিসে আসতে পারবে। কাজেই লকডাউনে পাবলিক পরিবহন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের কোনো সমস্যা হবে না। প্রায় কারখানার গাড়িতে বাকি শ্রমিকদের আনা-নেয়া করা হয়। সেভাবেই করা হবে। ১৬টি দিকনির্দেশনা হচ্ছে— কারখানা ছুটি বা খোলার সময়ে গেইট বা কারখানার অভ্যন্তরে শ্রমিকদের ভিড় এড়ানোর লক্ষ্যে এক সঙ্গে ত্যাগ না করে একে একে কারখানা প্রবেশ ও কারখানা ত্যাগ ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রবেশ পথের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভাব্যক্ষেত্রে কর্মঘণ্টা বিভিন্ন শিফটে নির্ধারণ করা। ফ্লোরে বা কাজের স্থানগুলোতে ভিড় এড়িয়ে চলতে শ্রমিকদের উৎসাহিত করা। দুপুরের খাবারের বিরতি বা অন্যান্য বিরতি একসঙ্গে না করে যথাসম্ভব ভাগ ভাগ করে করা। কারখানায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শ্রমিকের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা। কারখানায় সকলের দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে হাত পরিষ্কারক সামগ্রী রাখা। পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবানের ব্যবস্থা করা এবং কারখানায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সকল শ্রমিককে জীবাণুমুক্ত করা। হাত ধৌতকরণ স্থান বা পানির কলের মধ্যে ন্যূনতম এক মিটার দূরত্ব রাখা। জীবাণুমুক্তকরণের পদ্ধতি দৃষ্টিগোচর স্থানে প্রদর্শন করা, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া। হাত ধোয়ার পর শুকানোর জন্য ড্রায়ার বা টিস্যুর ব্যবস্থা রাখা। সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা। কারখানার বাইরে সভা-সমাবেশ, গণপরিবহন বা ভিড় এড়িয়ে চলতে শ্রমিক-কর্মচারীদের উৎসাহিত করা। করোনা উপসর্গ বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের অবহিত করা। বিজিএমইএর ফ্যাক্টরি ওপেনিং প্রটোকল কঠোরভারে অনুসরণ করা।

এদিকে হঠাৎ লকডাউন দেয়ায় কিছু প্রশ্নের উদ্রেগ হয়েছে বলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ ফেসবুকে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দরিদ্র দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তার কোনো প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে? প্রণোদনার অর্থ যারা লোন নিয়েছেন তারা টাকা ফেরত দেয়ার সময়ে কি কোনো পরিবর্তন আসবে? (কারণ লকডাউনে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হবে)। লকডাউন হলে বেড়াতে যাওয়া বা গ্রামে চলে যাওয়া ঠেকাতে কোনো প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে? কৃষিপণ্য সঠিকভাবে সরবরাহের কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? এই সময় জরুরি যানবাহন কি চালু থাকবে? কেউ অসুস্থ হলে তার হসপিটালে যাওয়ার জন্য যানবাহন কি পর্যাপ্ত পাওয়া যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো লকডাউন কার্যকর করার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কী নেয়া হয়েছে? লকডাউনের সাথে সাথে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসা জরুরি। তা না হলে গত বছরের অর্থনৈতিক ধীর গতির প্রভাবে দুর্বল অর্থনীতি বড় রকমের নতুন চ্যালেঞ্জে পড়বে।’

আমারসংবাদ/জেআই