Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি

মাহমুদুল হাসান

এপ্রিল ৩, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম


করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি
  • সপ্তাহে শনাক্তও বেড়েছে ৬৬ শতাংশ
  • সপ্তাহান্তে মৃত্যু বেড়েছে ৭১ শতাংশ

করোনা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে। দ্বিতীয় ঢেউ এখন তুঙ্গে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৭১ শতাংশ মৃত্যু ও সাড়ে ৬৬ শতাংশ শনাক্ত রোগী বেড়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে আগামী সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনে যাচ্ছে দেশ। এ সময় শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও অন্যসব বিষয়ে কঠোর থাকবে মাঠ প্রশাসন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৮ দফা জারি করা হয়েছিল। গেলো বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণ চলতি মাসের এক তারিখে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস ১৩ সপ্তাহ অতিক্রম করেছে। ২১ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ১২তম সপ্তাহের চেয়ে ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ সপ্তাহে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা তেমন বাড়েনি। কিন্তু শনাক্ত ও মৃত্যু অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ১২তম সপ্তাহে এক লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ১০০ জন। সুস্থ হয়েছে ১৩ হাজার ২০৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২০১ জনের। সেখানে ১৩তম সপ্তাহে ৪ দশমিক শূন্য আট শতাংশ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বেড়েছে। সংখ্যার হিসেবে এক লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৭টি। তবে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ৬৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৪৭১ জনে। সুস্থতার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সুস্থতার সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৫৩ জন। মৃত্যুও বেড়েছে এ সময়ে অস্বাভাবিক হারে। ১২তম সপ্তাহে যেখানে ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে ১৩তম সপ্তাহে এসে মৃত্যু ৭১ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ৩৪৪ জনে পৌঁছেছে। চলতি বছরের ১৩তম সপ্তাহে সংগ্রহ করা এক লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৭টি নমুনার মধ্যে এক লাখ ১৯ হাজার ২০০টি নমুনা সরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। অন্যদিকে আরও ৬৬ হাজার ৭৬৭টি নমুনা বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত করোনা ভাইরাসবিষয়ক এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে শনাক্তের হিসেবে ৩৪তম স্থানে আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৪০তম অবস্থানে রয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ১২০টি আরটি পিসিআর ল্যাব, ৩৪টি জিন এক্সপার্ট ল্যাব ও ৭৩টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবসহ ২২৭টি ল্যাবে গতকাল আরও ২৪ হাজার ৫৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ৬৬১টি নমুনা। তারমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার ৭৬টি, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পাঁচ হাজার ৬৮৩ জন নতুন রোগীসহ এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হলো ছয় লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জনের নমুনায়। তার মধ্যে গতকাল  আরও দুই হাজার ৩৬৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৫ জন হয়েছে। এছাড়াও গতকাল ৫৮ জনের মৃত্যুতে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ২১৩ জনে পৌঁছেছে। গতকাল শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং মত্যুর হার ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতি ১০ লাখে তিন হাজার ৭০০ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হচ্ছে। তার মধ্যে সুস্থ হচ্ছে তিন হাজার ২২৮ জন আর মৃত্যু হচ্ছে প্রতি ১০ লাখে ৫৪ জনের বেশি মানুষের। রাজধানীসহ সারা দেশের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৯ হাজার ৭২২টি সাধারণ বেড ও ৫৯৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে। তার মধ্যে চার হাজার ৪৪৮ জন রোগী সাধারণ বেডে ভর্তি আছে। সেই সাথে ৩৯২ আইসিইউ বেডে ভর্তি রয়েছে। ফাঁকা আছে পাঁচ হাজার ২৭৪টি সাধারণ বেড এবং ২০৪টি আইসিইউ বেড। করোনা মোকাবিলায় সারা দেশে সরকার গৃহীত কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১৪ হাজার ৫৩৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৯৯৮টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এবং ৮৭৭টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে।

গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ আর নারী ২০ জন। তাদের প্রত্যেকেই হাসপাতালে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি, ১৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর,  চারজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং চারজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিলো। মৃতদের মধ্যে ৩৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন খুলনা বিভাগের, দুজন বরিশাল বিভাগের এবং একজন করে মোট দুজন রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৯ হাজার ২১৩ জনের মধ্যে ছয় হাজার ৯২৫ জনই পুরুষ এবং দুই হাজার ২৮৮ জন নারী। তাদের মধ্যে পাঁচ হাজার ১৫৬ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি। এছাড়াও দুই হাজার ২৭৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, এক হাজার ৩৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪৫৯ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৮০ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৬৭ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৮ জনের বয়স ছিলো ১০ বছরের কম। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ২৬৭ জন ঢাকা বিভাগের, এক হাজার ৬৬৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৫০৮ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৯২ জন খুলনা বিভাগের, ২৭৬ জন বরিশাল বিভাগের, ৩২৭ জন সিলেট বিভাগের, ৩৭৭ জন রংপুর বিভাগের এবং ২০২ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

এছাড়াও গতকাল এক হাজার ২৭৫ জনকে কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত করা হয়েছে। এ সময় ছাড়পত্র পেয়েছে ৮১৫ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ছয় লাখ ৫৪ হাজার ৯১৫ জন। এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছে ছয় লাখ ১৫ হাজার ৩৬৬ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে আছে আরও ৩৯ হাজার ৫৪৯ জন। একইদিনে আইসোলেশন করা হয়েছে ৪৮০ জনকে। এ সময় ছাড়পত্র পেয়েছে ১০৪ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে এক লাখ ছয় হাজার ২৫৫ জনকে। তারমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ৯৩ হাজার ৫১৭ জন। এখনো আইসোলেশনে আছে আরও ১২ হাজার ৭৩৮ জন।

করোনা মোকাবিলায় দেশের স্থল, সমুদ্র ও বিমান বন্দরে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। গতকাল এসব জায়গায় ছয় হাজার ৭২৫ জন যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০ লাখ ২০ হাজার ৭৫৫ জনকে। এ পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৬৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮২ জন। তারমধ্যে ৫৪ লাখ ১২ হাজার ৭৯১ জন টিকা গ্রহণ করেছেন।

আমারসংবাদ/জেআই